Pages

ইসলামী সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্ব্য সভ্যতা

Sunday, August 31, 2014


                      
        আল্লাহু রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল ক্বলম : ৪) 

           রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমরা প্রেরিত হয়েছ মানুষের ক্ষেত্রে সহজলভ্য করার জন্য, কষ্টসাধ্য করার জন্য নয়। (তিরমিযী শরীফ পৃঃ ৩৮) 

        মানব জীবনের সকল স্তরেই তথা ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন কিংবা আন্তর্জাতিক জীবন হোক না কেন সর্ব ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য সভ্যতার বিকল্প নেই। তাই কুরআন হাদীসের অসংখ্য স্থানে বাস্তব সভ্যতা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য না হয়ে উপায় নেই যখন পাশ্চাত্যের রথি মহারথিরা নিজেদের সাংস্কৃতিকে তথাকথিত সভ্যতার ঝড় তুলে ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে অসভ্যতা বলে প্রচার করার হীন প্রচেষ্টা চালায়। তাই পাঠক সমীপে ইসলামী সভ্যতার দু-একটি বাস্তব নমুনা ইসলামী মহামণীষীদের এক ঘটনা থেকে তুলে ধরার প্রয়াস পাব। 

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী সভ্যতা
একবার হযরত আলী রা. এর লৌহবর্ম চুরি হয়ে গেলে একজন ইহুদীর কাছে পাওয়া যায়। হযরত আলী রা. দেখে চিনে ফেললেন এবং বললেন এটা আমার লৌহবর্ম, ইহুদী বলল প্রমাণ দাও। 

হযরত আলী রা. এর লৌহবর্মের ঘটনা
আল্লাহু আকবার! হযরত আলী রা. নিজেকে কি পরিমাণ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত বানিয়ে নিয়েছেন! যেখানে প্রজাদেরকে মৌখিক স্বাধীনতা দিয়েছেন সেখানে তা কাজে পরিণত করে দেখিয়েছেন। একজন ইহুদী প্রজা রাজত্বের অধিকারী খলীফাতুল মুসলিমীনকে বলে যে, প্রমাণ দাও। অথচ ইহুদী এক নিকৃষ্ট জাতি ছিল। যখন থেকে তারা হযরত মুসা আ. এর সাথে বেআদবি করে ছিল তখন থেকে সর্বদাই অসম্মানিত অবস্থাতেই ছিল এবং এখনো যেখানে আছে অসম্মানিত অবস্থাতেই আছে। কবি সত্য বলেছেন, অর্থ- যে বন্ধু তার দরবার থেকে মুখ ফিরায়, সে যেখানেই যায় সম্মান নাহি পায়। 

       একেতো জাতিগত নিকৃষ্টতা আবার আলী রা. এর সম্রাজ্যের মধ্যে বসবাসকারী তার পরও তার এত দুঃসাহস। প্রিয় ভায়েরা! বাস্তব স্বাধীনতা এটাই। ধর্ম ছেড়ে দেয়া আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ছেড়ে দেয়ার নাম স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা হল কোন পাওনাদারের মুখ বন্ধ না করা। কারো উপর অত্যাচার না করা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা এরকম ছিল যে, একজন ইহুদীর কিছু ঋণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিল। একদিন সে মসজিদে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে লাগামহীন কথা বলা শুরু করলে সাহাবাগণ রা. তাকে ধমক দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, পাওনাদারের কথা বলার অধিকার আছে। স্বাধীনতা এটাই যে প্রজাদেরকে রাষ্ট্রের মধ্যে এমন অধিকার দেয়া হবে। হযরত আলী রা. কাজের দ্বারা এমন স্বাধীন বানিয়ে ছিলেন যে, ইহুদী বলল, প্রমাণ দাও। নতুবা বিচার দাও। অতঃপর উভয়ে মিলে ঐ সময়কার বিচারপতি যিনি হযরত উমর রা. এর যুগ থেকে এ পদে বহাল ছিলেন। হযরত শুরাইহ রহ. এর আদালতে বিচার দায়ের করলেন। হযরত শুরাইহ রহ. আমীরুল মু’মিনীনের তোয়াক্কা না করে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। ইহুদীকে জিজ্ঞাসা করলেন লৌহবর্ম কি তোমার? সে স্বীকার করলে হযরত আলী রা. কে বললেন আপনার হলে প্রমাণ দিন। 

বিচারকের বিচার 
          আল্লাহু আকবার! স্বাধীনতার নমুনাটা দেখুন, রাষ্ট্রের একজন বিচারক সরাসরি আমীরুল মু’মিনীনের কাছে প্রমাণ চায়। যে দাবি অবাস্তব হতেই পারে না। এটা একমাত্র আইনের কারণেই হয়েছে। আল্লাহর কসম! যারাই সভ্যতা শিখেছে ইসলাম থেকেই শিখেছে। তার পরও ইসলামের উপর আমল করতে পারে নাই। মোট কথা হযরত আলী রা. দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করলেন। একজন নিজ পুত্র হযরত হাসান রা. দ্বিতীয় জন তাঁর আযাদ কৃত গোলাম। যার নাম ছিল ক্বাম্বর। পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষী গ্রহণ হওয়ার ব্যাপারে হযরত আলী রা. ও হযরত শুরাইহ রহ. এর মধ্যে মতানৈক্য ছিল। শুরাইহ রহ. এর নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিন্তু হযরত আলী রা. এর নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল। সে জন্য হযরত আলী রা. হযরত হাসান রা. কে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করেছেন। (বর্তমান যুগে মতানৈক্যের কারণে উলামায়ে কেরামকে ভাল মন্দ বলা হয় অথচ এই মতানৈক্য আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের মত উলামাগণকে গাল-মন্দ করা হত না। একে অন্যকে কাফের, পথভ্রষ্ট বলত না। বর্তমান যুগে একে অপরকে গালি-গালাযের কারণ অহঙ্কার ছাড়াও আরও একটি বড় কারণ হল, সব জায়গায় ছোটদের ক্ষমতা।) 
উপরোক্ত মতানৈক্যের ভিত্তিতে হযরত শুরাইহ রহ. নিজের ইজতেহাদের উপর আমল করতঃ হযরত হাসান রা. এর সাক্ষী গ্রহণ করলেন না। হযরত আলী রা. কে বললেন যে, গোলাম আযাদ হওয়ায় তার সাক্ষী গ্রহণ যোগ্য কিন্তু হাসান রা. এর পরিবর্তে অন্য সাক্ষী উপস্থিত করুন। হযরত আলী রা. বললেন, অন্য কোন সাক্ষী তো নেই। শেষ পর্যন্ত হযরত শুরাইহ রহ. হযরত আলী রা. এর দাবী খারেজ করে দিলেন।

বিচারকের সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্টি
যদি বর্তমান যুগের মত হত তাহলে হযরত শুরাইহ রহ.কে ধমকি, হুমকি শুনতে হত। এমনকি উপরোক্ত পদ হতে বরখাস্তও হতে হত কিন্তু হযরত আলী রা.ও হযরত শুরাইহ রহ. ব্যক্তিমত পূজারী ছিলেন না। তাঁরা ধর্মীয় সকল বিষয়ে নিজের জান কুরবানকারী ছিলেন। যদি হযরত শুরাইহ রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হত তাহলে উনি কসম করে বলতেন যে, হযরত আলী রা. নিজের দাবিতে সত্যবাদি ছিলেন, কিন্তু যেহেতু শরীয়তের কানূন অনুমতি দেয় না তাই নিজের বিশ্বাসের উপর সিদ্ধান্ত করেন নি। 

ইহুদীর ইসলাম গ্রহণ 
বিচার শেষে ইহুদী বাইরে এসে হযরত আলী রা. এর মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্যেও কোন অপছন্দনীয়তার চিহ্নমাত্রও দেখল না। তো কোন জিনিসে উনাকে অসন্তুষ্ট করল না। ইহা চিন্তা করে সে বলল  যে, এখন আমার বুঝে আসল যে, আপনার ধর্মই সত্য। ইহা এটারই সুফল। এই নেন আপনার লৌহবর্ম। এটা আপনারই। আমি মুসলমান হচ্ছি , اشهد ان لااله الاالله واشهد ان محمدا عبده ورسوله  আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রভূ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল। 
   অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) বললেন যে এই লৌহবর্ম আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম। মোটকথা ঐ ইহুদি মুসলমান হয়ে গেল এবং হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে থেকে একটি ইসলামি যুদ্ধে শহীদ হয়ে গিয়েছেন। দেখুন ইহাই হল ইসলামি সভ্যতা , অথচ পাশ্চাত্যবাদিদের সভ্যতা হল বিশ্বের মধ্যে মোড়লিপণা দেখিয়ে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে নিজের পেট পুরা করা আর নিজেদের মতের উল্টা হলেই সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে যে কোন দেশে হামলা করতঃ লক্ষ লক্ষ টাকা রাষ্টীয় সম্পদ ধ্বংস ও হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে হত্যা করা।

পাশ্চাত্যবাদিদের ধারণা ও তার খন্ডন
           পাশ্চাত্যবাদীদের ধারাণা যে ইসলাম তরবারী জোরেই বেশি প্রসারিত হয়েছে। প্রমাণ হিসাবে বিভিন্ন যুগের ইসলামী জীহাদ সমূহকে পেশ করে। আমি তাদেরকে বলি যুদ্ধ বলতেই সভ্যতার পরিপন্থী এটা কোন জ্ঞানী বলতে পারে না। কারণ বর্তমান যুগে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সভ্য জাতিরাও যুদ্ধ করে। সুতরাং বুঝা গেল প্রয়োজনে যুদ্ধ করা সভ্যতার দিক থেকেও অনুমোদিত। আমি অত্যাচারিত বাদশাদের পক্ষপাতিত্ব করছি না। কিন্তু খুলাফায়ে রাশেদীনের ব্যপারে দাবি করে বলতে পারি যে, উনারা কখনও দুর্বল ভিত্তিতে যুদ্ধ করেন নি। বরং কোন শক্তিশালি কারণ পাওয়া গেলেই যুদ্ধ করতেন। যুদ্দের ব্যপারে ইসলামী নিয়মনীতি জানা থাকলে ইসলাম বিরোধীরা কখনো এ কথা বলত না যে, ইসলাম তরবারীর জোরে প্রসার হয়েছে। যুদ্ধের অনেক ইসলামী নিয়মনীতি থেকে আমি সংক্ষিপ্তভাবে একটি নীতির বর্ণনা করছি। 

ইসলামের নীতি
ইসলামের নীতি হল যার উপর খুলাফায়ে রাশেদীন সর্বদা আমল করে আসছেন তা হল যে কোন ব্যক্তি যুদ্ধের সময় যদি তোমার পিতা, ছেলে, ভাই, এবং সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে হত্য করল এবং হত্যা করেই চলল অতঃপর যখন তোমার আয়ত্বে এসে যাবে এবং তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নিতে চাও তখন সে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলে তখন ইসলামের আদেশ হল তাকে সাথে সাথে ছেড়ে দাও। যদিও তোমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, জানের ভয়ে সে কালেমা পড়েছে, অন্তর থেকে ইসলাম গ্রহণ করে নাই। তবুও তাকে সাথে সাথে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় তুমি যদি তাকে হত্যা কর তাহলে তুমি জাহান্নামে  যাবে। যদিও এই আশঙ্কা আছে যে সে ঐ সময় জান বাঁচিয়ে সুযোগ মত তোমাকে হত্যা করবে। যাই হোক এই অবস্থা তাকে হত্য করা জায়েয নাই। তাহলে যেই ধর্মে এত বড় আত্মরক্ষার সুযোগ অন্যের হাতে দিয়ে দেয় সেই ধর্মের ব্যপারে কেউ এ কথা কি ভাবে বলতে পারে যে, তা তরবারীর জোরে প্রসারিত হয়েছে। অবশ্যই জেনে রাখ যে, আমাদের পূর্ব পুরুষগণ এ নীতির উপর অটল ছিলেন। 

জিহাদের উদ্দেশ্য   
জিহাদ হল অপারেশন স্বাদৃশ্য। কেননা রোগের উৎস দুই প্রকার। এক প্রকার হল সংক্রামক। দ্বিতীয় প্রকার অসংক্রামক যা ঔষধের দ্বারা রোগ মুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু প্রথম প্রকার রোগ ঔষুধের দ্বারা মুক্ত হওয়া যায় না। বরং উহা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অপারশেনের মাধ্যমে তার জিবানুগুলো বাহির করে দিতে হয়। তদ্রুপ ইসলামের শত্রুরাও দুই প্রকার। এক প্রকার হল যাদের সাথে  সন্ধি করলে তারা সন্ধি করে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া ছেড়ে দেয়। সুতরাং তাদের সাথে সন্ধি করে নেয়া হয়। আর কিছু এমন কষ্টদায়ক ও সন্ত্রাসী হয় যে, সন্ধি করতে রাজি হয় না। এরাই হল সংক্রমন উৎস। এগুলোর জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। আর এরই নামই হল জিহাদ। সুতরাং জিহাদের দ্বারা মানুষকে মুসলমান বানানো উদ্দেশ্য নয় বরং মুসলমানদের নিরাপত্তা উদ্দেশ্য।
পরিশেষে আর একটি কথা না বলে পারছি না যে, যুদ্ধই যদি সন্ত্রাসী হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান যুগে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার পশ্চিমারাই হবে। কারণ তারাই কারণে অকারণে খোঁড়া অজুহাত বানিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রসমূহকে বোমা বিষ্ফুরণ গঠিয়ে ধ্বংসাবশেষে পরিণত করতেছে। সুতরাং তাদের কাছে আমার দাবি, তারা যেন ইসলাম থেকে সভ্যতা শেখে। তারা যেন অহেতুক ইসলামের উপর অসভ্যতার কালিমা লেপনের চেষ্টা না করে।  

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like