Pages

নির্লজ্জতাই পতনের মূল

Friday, August 29, 2014



    হে লোক সকল, লজ্জাবোধ মনবতার ভূষণ ও বৈশিষ্ট, লজ্জাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠিত করে মর্যাদার শিখরে। আর লাজ-লজ্জার পতনে মানুষ তার চিরসম্মানীত মর্যাদার আসন থেকে ছিটকে পড়ে। মানুষ নেমে আসে বন্য প্রাণীর কাতারে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “হায়া” তথা লজ্জার গুরুত্বের কথা বুঝাতে গিয়ে ইরশাদ করেন,
             ان لكل دين خلقا وخلق الاسلام الحياء           
প্রত্যেক ধর্মে কিছু স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্টপূর্ণ চরিত্র থাকে। ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল লজ্জাবোধ। যার হৃদয়ে এ বোধ ও বিশ্বাস আছে সে অন্তত মানুষের সামনে অপরাধ করতে পারে না। আর এই লজ্জাবোধ যখন হারিয়ে যায় তখন আর মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। এ মর্মে প্রসিদ্ধ হাদীস হল اذا فاتك الحياء فافعل ماشئت   যখন তোমার থেকে লজ্জা  বিদায় নেবে তখন যা খুশি তাই করতে শুরু করবে। 
         চক্ষু লজ্জায় হলেও অন্যায় অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করা নিঃসন্দেহে উত্তম চরিত্রের পরিচয়। কিন্তু একজন মুমিন বান্দার জন্যে কি এতটুকু চরিত্রই কাম্য? কারণ ঈমানের সূচনাই তো হল অদৃশ্যের বিশ্বাস থেকে। কেউ থাকলে তার ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকবে। আর না থাকলে পাপে ডুবে যাবে একি কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য? আর মুমিন তো সর্বদাই অদৃশ্য জগতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ ও রাসূল, পরকাল ও বেহেস্তের প্রতি থাকে তার সার্বক্ষণিক চিন্তা- চেতনা, ধ্যান-ধারণা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 استحيوا من الله حق الحياء-   তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাসাধ্য লজ্জাশীল হও। এটাই হচ্ছে প্রকৃত লজ্জা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার পরিপেক্ষিতে আমরা বললাম,
 انا نستحيي من الله يارسول الله والحمد لله  হে রাসূল! আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্যই আমরা আল্লাহকে লজ্জা করি। একথার জবাবে তিনি বললেন, লজ্জা বলতে শুধু এতটুকু যথেষ্ট নয়। আল্লাহকে পূর্ণ রূপে লজ্জা করার অর্থ হল,  মাথা ও মাথার সাথে সংশ্লিষ্ট চিন্তা ভাবনাকে অন্যায় অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। উদর ও উদরের চাহিদাকে রক্ষা করবে। মৃত্যু ও পরকালকে স্বরণ করবে। যে পরকাল প্রার্থী হবে সে দুনিয়ার রঙ তামাশা পরিহার করবে। আর পরকালকে প্রাধান্য দিবে দুনিয়ার উপর। যে ব্যাক্তি এ বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ মাত্রা যত্নবান সেই মূলতঃ আল্লাহকে যথাযথ ভয় করেছে। এ কথা এখন আর খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না। 

           আধুনিকতার নগ্ন দোলায় আন্দোলিত পৃথিবীর পিঠ থেকে লজ্জার সম্মানীত ভূষণ হারিয়ে গিয়েছে বহু দিন আগে। নগ্নতা, বেহায়াপনা, ও নির্লজ্জতায় ভরা জগতে এখন আমাদের বসবাস বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের কথিত শিক্ষিত সভ্য ও বুদ্ধিজীবী সমাজ নির্লজ্জতার এই বিশাল বিজয়ে তৃপ্ত আনন্দিত উল্লাসিত। চক্ষু লজ্জা বলতে যৎসামান্য লজ্জাবোধ মানুষের ক্ষুদ্র একটি শ্রেণীর মাঝে আজও বেঁচে আছে। সেটাকেও তাড়ানোর জন্য তাদের ফন্দি ফিকিরের শেষ নেই। ধর্মকে অন্ধত্ব, গোড়ামী, মূর্খতা এবং শেকেলে চন্তা আর ধর্মহীনতাকে প্রগতি উন্নতি, উদারতা, নিষ্ঠা ও আধুনিকতা বলে জল ঘোলা করতে অবিরাম চক্রান্ত করে যাচ্ছে এই দিকহারা ঘুঘুরা। আজ গভীর ভাবে বিচার করার সময় এসেছে। মতলব বাজ এই ঘুঘুরা আমাদেরকে কি দিয়েছে? নির্লজ্জতার পঙ্খিরাজে চড়ে যে উড়ছি, এ উড়ার শেষ কোথায় ? তাই আজ বলতে চাই, এই নির্লজ্জত যে আমাদের কিছু দেয় নি তা নয়। যা দিয়েছে সে দানের ফিরিস্তিও কম নয়। এই নির্লজ্জতার উষ্ণ পরশে আল্লাহর দেয়া চির কল্যাণের পথ ছেড়ে শয়তানের পথের পথিকের সংখ্যা বেড়েছে। ধর্ম ও সভ্যতা বিরোধী চিন্তা-চেতনা বেড়েছে। 

         আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের অন্তরালে নাস্তিকতার অনুশীলন, সাহিত্য-সাংস্কৃতির মাঝে নষ্টামী ও নগ্নতার প্রাচুর্য  সৃষ্টি হয়েছে। সচেতনতা ও উন্নতির নামে কলমের খোঁচায় জাতিকে দেউলিয়া করে নিজের পকেট ভারি করার পথ প্রসারিত হয়েছে। বিক্রিত মস্তিষ্কের নির্লজ্জ কামনা পূরণের বেহায়া আবদারের টানে সম্ভ্রমহানী, পরকীয়ার স্ফুর্তি, রমণ ধর্ষণ, খোলা মেলা দালালী আর দিনে দুপুরে রাজপথে গাড়ী থামিয়ে সরকারী পোশাক পড়ে মুক্ত হস্তে ঘুষ গ্রহনের টেকনিক গুলো কালের তাজা আর্ট হিসেবে লাভ করেছে অসামান্য স্বীকৃতি। তাই আজ আমরা জানতে টাই ফ্যাশনের বেলুন ধরতে গিয়ে যে নারীরা যৌন পণ্যের আড়তে উঠল, শোবিজ আর অভিনয়ের পুচ্ছ ধরতে গিয়ে যে আর্ট মাষ্টারের বিশেষ কক্ষে জীবনের বিশেষত্ব খুইয়ে এলো, সুন্দরী প্রতিযোগীতার নেশায় যে নারী নিজেকে অন্যের হাতে রমন পুতুলে পরিণত করল, আর স্বাধীনতার নামে এক স্বামীকে উপেক্ষা করে হাজার বন্ধুর খাহেশের ঘানি টেনে টেনে ক্ষোভে ঘৃণায় নীরবে করল আত্মহত্যা। আল্লাহর প্রতি যদি তাদের সামান্যতম লজ্জাবোধ থাকত তাহলে কি এমন সর্বনাশটা হতো? 
আল্লাহ বলেছেন, ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه   আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন পথ-দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে আল্লাহ তা আদৌ গ্রহণ করবেন না। 


     আমাদের সমাজের আধুনিকতাবাদি বুদ্ধিজীবীগণ যতই প্রোপাগান্ডা করুক না কেন, ইসলামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্লজ্জতার পথে যারাই অগ্রসর হয়েছে আধুনিকতা, অগ্রগতি, উন্নতি, আর প্রগতির ছাই দিয়ে তারা তাদের এই নির্লজ্জতার লক্ষ্যকে ঢেকে রাখতে পারে নি। আজ ইউরোপ আমেরিকাসহ কথিত উন্নত বিশ্বের আধুনিকতার আবিষ্কারক শিল্পী, কুশলী, শ্রমিকরা এখন বিবাহ পূর্ব যৌন বন্ধন, কুমারী মাতৃত্বের অবিরাম অভিজ্ঞতা, মোবাইল ইন্টারনেট আর চেটিং পথে অর্জিত বেহিসাব সংসার ভাঙ্গন, সন্তান, সম্পদ ও জীবনের ভয়াল অনিরাপত্তার শাব্দিক চানক্য থেকে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাচ্ছে। আর তাদের পিছন থেকে ধাওয়া করছে অশুভ নির্লজ্জতার শ্রেষ্ঠ উপহার এইড্স। 

          তাই বলি- الحياء شعبة من الايمان  লজ্জা ঈমানের অন্যতম ভূষণ। লজ্জার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কি পেয়েছ হে কথিত আধুনিক পৃথিবী? পচন ধরেছে সর্বত্র। এখনও সময় আছে ফিরে এসো কাঙ্খীত লজ্জার পথ ধরে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের আলোকিত পথে। যে পথ শুধুই সুস্থতা, নিরাপত্তা ও সফলতার। আল্লাহ আমাদের সকলকে সে পথেই পরিচালিত করুন। আমীন। 

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like