Pages

গুনাহ বর্জনই আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম

Sunday, August 31, 2014



                 অসংখ্য শুকরিয়া মহান রাব্বুলআলামীনের দরবারে। লাখো কোটি দরূদ ও সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি। পাপ বর্জন মানব জীবনে অতীব জরুরি বিষয়। পাপের পরিণতিতে হাজারো নেকী অর্জন করার পর এক পলকে সমস্ত নেকী ধ্বংস হয়ে যায়। আওলিয়ায়ে কেরাম বলেন, এ ধ্বংস থেকে বাঁচার প্রধান উপায় মাত্র দু’টি ১. নযর হেফাজত করা। ২. যবান হেফাজত করা। এখানে প্রশ্ন জাগে যে, নযর ও যবান ছাড়াও তো অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ দ্বারা গুনাহ সংঘটিত হয়, কিন্তু পাপের ক্ষতি থেকে বাঁচার প্রধান উপায় দু’টি বলা হল কেন? প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে, একজন মানুষ যদি এক মন ওজন বহন করতে পারে তবে তার দশ কেজি বহন করার ব্যাপারে কোন সংশয় থাকে না। অতএব, যে ব্যক্তি নযর ও যবান হেফাজত করতে পারবে সে সহজেই অন্যান্য পাপ থেকে বাঁচতে পারবে। কারণ বর্তমান যামানায় এ দু’টি গুনাহ বর্জন করা সবচেয়ে কঠিন। 

         লোকেরা ভাবে যে, নেক আমল করতে পারলেই সফলকাম হওয়া যাবে। তাই তারা নেক আমল করার প্রতি যত বেশি গুরুত্ব দেয় গুনাহ ছাড়ার প্রতি তত বেশি গুরুত্ব দেয় না। তাদের উদাহরণ এরকম যে, একটি চারা গাছের যদি শিকড় কেটে মাথায় পানিও ঢালা হয় তবে চারা গাছটি অচিরেই মারা যাবে। মাথায় পানি দেয়ার ফলে কোনই উপকার হবে না । সুতরাং চারা গাছে পানি ঢালার উপকার পেতে হলে গাছের মূল শিকড়কে হেফাজত করতে হবে। ঠিক তদ্রুপ কেউ যদি নেক আমল করার পাশাপাশি পাপ বর্জন না করে তবে ধীরে ধীরে তার ঈমান দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হতে  থাকে। সুতরাং নেক আমলের দ্বারা ফায়দা পেতে হলে যাবতীয় পাপ বর্জনের মাধ্যমে ঈমানের চারা গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি


প্রথম বিষয়ঃ  নযর হিফাযত
                    আল্লাহ পাক নযর হিফাযতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন “হে নবী! আপনি মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের নযর নিম্নগামী করে রাখে।”
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لعن الله الناظروالمنظوراليه অর্থৎ- কুদৃষ্টিকারীর উপর ও যার উপর কুদৃষ্টি করা হয় তার উপর আল্লাহ তাআলার লা’নত। ঈমানদারগণ স্বভাবতই আউলিয়ায়ে কেরামের বদদোআকে ভয় করে। অতএব রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের বদদোআকে আরো বেশি ভয় করা উচিত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের লা’নতকে তার চেয়ে বেশি ভয় করা উচিত। যদি তা করা হয় তবে কেউই কুদৃষ্টি করতে পারে না। 

                আউলিয়ায়ে কেরাম বলেন, কোন মহিলার দিকে তাকানো, তাদের সাথে কথা বলা, বোরকা ও ওড়নার দিকে তাকানো, পায়ের দিকে তাকানো, এমন কি জুতার দিকে তাকানোও একটা মরাত্মক ব্যাধি। কারণ এ তাকানোই তাকে কুপ্রবৃত্তির দিকে ধাবিত করে। যদি দূর থেকে অনুমান হয় যে, কোন মহিলা আসছে তখন উচিৎ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা, অন্যথায় অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা। নতুবা চোখ বন্ধ রাখা। 
             একথা অতীব জরুরি যে, বর্তমান যামানায় দ্বীনদার মুত্তাক্বীগণের জন্য নারী ফেতনার চেয়ে দাড়ি-মোচ বিহীন সুশ্রী বালক তরুণদের ফেতনা অধিক মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক। কারণ হলো, তাদের সাথে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে বাহ্যিক বাধা কম। তাই শয়তান মানুষকে দ্রুত এ ফেতনায় লিপ্ত করে দেয়। আমরা জানি এ পাপের কারণে কওমে লূতের উপর খোদায়ী গযব নেমে এসেছিল যা পূর্বের কোন উম্মতের উপর আসে নি। 

                   এর কুফল সম্পর্কে হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মওলানা শাহ আশরাফ আলী থানবী র. বলেন, “গায়রে মাহরাম নারী ও সুদর্শন তরুণের সাথে যে কোন ধরণের সম্পর্ক রাখা যেমন, তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া, মনে আনন্দ লাভের জন্য তাদের সাথে কথা বলা, নির্জনে তাদের সাথে বসা, তাদের জন্য সাজ-গোজ করা ও মোলায়েম ভাষায় মিষ্টি সুরে কথা বলা হারাম। এ কুসম্পর্কের কারণে পাপীরা যেভাবে দোযখের আগুনে না মৃত না জীবিত থাকবে। সে ব্যক্তিও এরূপ এক আযাবের মধ্যে থাকবে। এ আযাবে তো সে দুনিয়াতেই পতিত হয়।  যার পরিণামে তার মন ছটফট করতে থাকে। অস্থিরতার আগুনে জ্বলতে থাকে। আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অবশেষে তাকে পাগলা গারদে ভর্তি করতে হয়। আজকাল পাগলা গারদের শতকরা নব্বই ভাগই কুপ্রেম, কুসম্পর্কের রোগী। 

            যদি কোন সুন্দর ও সুশ্রী চেহারার দিকে নযর পড়ে যায় তখন এই খেয়াল করা উচিৎ যে, এরা মরণশীল, পঁচনশীল। এদের লাশ পঁচে বিশ্রী বীভৎস হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে মাসনবী শরীফে বিশ্ববিখ্যাত বুযুর্গ হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী র. বলেন, যখন তুমি মরে পঁচে গলে যাবে, তখন ঐ ব্যক্তিও তোমার দুর্গন্ধে নাক বন্ধ করবে যে তোমার রূপের উপর শতবার জান কোরবান করত। 


দ্বিতীয় বিষয় হলোঃ  যবান হিফাযত
                  এর গুরুত্ব সম্পর্কে কালামে পাকে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন- والذين هم عن اللغومعرضون সুরায় মুমিনের এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের একটি গুণ বর্ণনা করেছেন। তাহল মুমিনগণ অনর্থক কথা থেকে বেঁচে থাকে। অর্থাৎ- তারা মিথ্যা, ফাহেশা, অন্যায় কথা বলে না। এমন কি অনর্থক কথা থেকেও বেঁচে থাকে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন, عن سهل بن سعد رضي الله تعالي عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم من يضمن لي مابين لحييه ومابين رجليه اضمن له الجنة (البخاري)  অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহ্বা) ও দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থান (লজ্জাস্থান) এর নিরাপদ রাখার জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য বেহেশতের জিম্মাদার হব। তাই জান্নাত পেতে হলে আমাদেরকে উক্ত পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ। নিচে যবানের পাপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। 

গীবত করা 
     আল্লাহ পাক বলেন, তোমাদের কেউ যেন অন্যের গীবত না করে। তোমদের কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া পছন্দ করে ? (সূরা হুজরাত) সুতরাং, যেভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া অপছন্দ করে  তেমনিভাবে গীবতকেও যেন অপছন্দ করে। কারণ এটাও মৃত ব্যক্তির গোস্ত খাওয়ার সমান। হাদীস শরীফে আছে, গীবতকারীর নেক আমল যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হয় এবং যার গীবত করা হয়েছে তার পাপ গীবতকারীর আমলনামায় লেখা হয়। সধারণতঃ গীবত করা হয় শত্রুদের। নিজেদের নেকিগুলো শত্রুদেরকে দিয়ে তাদের গুনাহগুলো গ্রহণ করা নিছ্ক বোকামী ছাড়া কিছু নয়।  

মিথ্যা বলা
     হাদীস শরীফে আছে, الكذب ام الخطيئة  মিথ্যা সকল পাপের মূল। একটি গাছের মূল (শিকড়) মাটিতে প্রোথিত থাকলে যেভাবে সেই গাছ কা-, পত্র-পল্লবের জন্ম দেয়, ঠিক সেভাবে যার কলবে মিথ্যা বলার ব্যাধি গেঁথে আছে তার দ্বারাও প্রতিনিয়ত বহু পাপ সংঘঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। মাওলায়ে করীম আমাদের সকলকে রূহের এ মরণ ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। আমীন

হারাম খাওয়া
      মানুষ যদিও মুখের দ্বারাই হারাম খাদ্য ভক্ষণ করে। কিন্তু তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে সার্বাঙ্গে। অতএব, এ পাপ মুখ নামক অঙ্গের সাথেই জড়িত না। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, لايدخل الجنة جسد غذي بالحرام  অর্থ- হারাম ভক্ষণকারীর শরীর বেহেস্তে প্রবেশ করবে না। 

                     পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ যতই নেক আমল করুক না কেন তার পূর্ণ ফায়দা হবে না, যতক্ষণ না সে যাবতীয় পাপ বর্জন করবে। কারণ শিশির নিচে ছিদ্র থাকলে যেমন ঐ শিশিতে পানি জমা হয় না। অনুরূপ পাপ সংঘটিত হতে থাকলে ঐ ব্যক্তির আমলনামায় আমল জমা থাকে না। আর পাপ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল আউলিয়ায়ে কেরামের কোন একজনের হাতে নিজেকে সম্পূর্ণ সোপর্দ করে তাঁরই পরামর্শে জীবন যাপন করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আউলিয়ায়ে কেরামের হাতে সম্পূর্ণ সোপর্দ হয়ে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

ইবাদত সুন্দর করার পদ্ধতি


    
           প্রত্যেক মুমিনের জন্য রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও কিছু নফল ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী করতে হয় এবং প্রত্যেকের অন্তর এটা অবশ্যই চায় যে, তার আমল আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হোক। হক্কানী, রব্বানী, সুবিজ্ঞ ও সুক্ষদর্শী উলামায়ে কেরাম কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোকে ইবাদত কবুল হওয়ার ৪টি বিষয় বর্ণনা করে থাকেন। এই সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হল। 

          ইবাদত বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এর মধ্যে কিছু ইবাদত রয়েছে যা যবানের দ্বারা সম্পাদিত হয়। যেমন কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা, যিকির-আযকার করা, দোআ-কালাম ও দরূদ শরীফ পড়া। 

এ ধরণের আমল কবুল হতে ৪টি শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে -

১. ইবাদত শুরু করার পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা। 

২. ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা। 
                         
                               ৩. সহীহ্ ও শুদ্ধভাবে করা। 

                              ৪. ধীরস্থিরভাবে করা অর্থৎ তাড়াহুড়া না করা। 


          
         আর কিছু ইবাদত রয়েছে যা তেলাওয়াত জাতীয় নয় অর্থাৎ যা করতে যবানে কিছু উচ্চারণ করতে হয় না। যেমনঃ পর্দা, রোযা, দান-সদকা এবং লোকের সাথে উত্তম ব্যবহার ইত্যাদি। এরূপ আমল কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দুটি শর্ত প্রযোজ্য। 

               আবার কিছু ইবাদত রয়েছে যাতে যবান সহ অন্যান্য অঙ্গও ব্যবহৃত হয়। যেমন- নামায ও হজ্ব ইত্যাদি। এই সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত ৪টি শর্তই প্রযোজ্য। 
প্রথম ও দ্বিতীয় শর্তের ফায়দা হচ্ছে তা পালন করলে রিয়া বা র্শিক (লোক দেখানো মনোভাব) ও অহঙ্কার থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর রিয়া ও অহঙ্কার ইবাদত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বাঁধা। 

      ৩য় শর্তও অতীব জরুরি। কেননা যে কোন ভাষারই একটি পঠনরীতি  থাকে। যার খেলাপ করলে ভাষার শ্রুতিকটু হয়। এমনকি অর্থ পাল্টে যেতে পারে। যেমন- বাংলা ভাষায় ‘বারি’ শব্দের অর্থ হল পানি। আর ‘বাড়ি’ অর্থ মানুষের বসবাসের স্থান। আরবীতে نصر  অর্থ  সাহায্য করা আর نسر অর্থ শকুন। উপরিউক্ত উদাহরণে অক্ষর ও উচ্চারণের ভিন্নতায় অর্থ সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাজেই তেলাওয়াত ও দোআকালাম শুদ্ধ করা (কম পক্ষে শুদ্ধ করতে চেষ্টা করতে থাকা) একান্তই আবশ্যক। 
     ৪র্থ শর্ত আমল করলে বাকী তিন শর্ত সহজেই পালন করা সম্ভব অর্থাৎ ধীরে ধীরে তথা শান্তভাবে আমল করলে ইবাদত শুরুর পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির খেয়াল, ইবাদত চলাকালেও তার সন্তুষ্টির খেয়াল এবং ইবাদত শুদ্ধভাবে করা এ সকল শর্ত সহজেই পালিত হবে।


              আর যদি কোন আমল করতে ঐ শর্তগুলো সাধ্যানুযায়ী পালন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে আল্লাহ পাকের দরবারে আমল মাকবুল হওয়ার প্রবল আশা করা যায়। হাদীস শরীফে বর্ণীত রয়েছে ঃ اخلص دينك يكفيك العمل القليل অর্থাৎ- তুমি তোমার দ্বীন (ইবাদত)কে খাঁটি কর, অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। 
         উপরে বর্ণিত শর্তের পক্ষে কুরআন ও হাদীস শরীফে অনেক দলিল রয়েছে। নিম্নে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হল । প্রথম শর্তে বলা হয়েছে ইবাদত শুরুর পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  وما امروا الا ليعبدواالله مخلصين له الدينঅর্থ- তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয় নি যে, তারা একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে। অর্থাৎ-  আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে তারা যে ইবাদতই করবে তা যেন খাঁটি হয়। আর খাঁটি নিয়ত ব্যতীত খাঁটি ইবাদত হয় না। সুতরাং এ আয়াতে ইবাদতের ক্ষেত্রে খাঁটি নিয়তের নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, انماالاعمال بالنيات   অর্থাৎ- আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কাজেই প্রত্যেক ইবাদতের পূর্বেই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা আবশ্যক। দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের দিকে ধ্যান রাখা। 

এ প্রসংঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 
ان تعبدالله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك
অর্থ- তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কর যে, তুমি যেন তাকে দেখছ। আর যদি তুমি তাকে দেখছ এ ধারণা করতে না পার তাহলে মনে এ ধারণা রাখবে যে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন। হাদীস শরীফের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হল যে, ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের খেয়াল রাখতে হবে। তৃতীয়  শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত সহীহ্ ও শুদ্ধভাবে করতে হবে। এ ব্যপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
رب قارئ للقرأن والقرأن يلعنه
অর্থ- কতিপয় কুরআন পাঠকের উপর কুরআন মজীদ লা’নত করে থাকে।  
অর্থাৎ- যারা ভুল তেলাওয়াত করে তাদের উপর কুরআন শরীফ লা’নত করে। কাজেই প্রত্যেক দোআ, দরূদ এবং তেলাওয়াত (তাজবীদ অনুযায়ী) শুদ্ধভাবে পাঠকরা জরুরি। 


                        চতুর্থ শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত ধীরস্থিরভাবে করা। এ কথা সকলের কাছে সুস্পষ্ট যে, যত সহজ কাজই হোক না কেন তা যদি কেউ তাড়াহুড়ার সাথে করে তাহলে  কম-বেশি ত্রুটি হবেই। আর যদি কোন কঠিন কাজও ধীরস্থিরভাবে করা হয় তাহলে তা নৈপূণ্যতার সাথে নির্ভুলভাবে হওয়ার আশা করা যায়। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,  ورتل القرأن ترتيلا  অর্থাৎ- আপনি ধীরস্থিরতার সাথে স্পষ্টভাবে কুরআন তেলাওয়াত করুন। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, দ্রুত কুরআন তেলাওয়াত করবেন না বরং সহজভাবে এবং ধীরে ধীরে আয়াত শরীফ উচ্চরণ করবেন।অত্র আয়াতে ترتيل  এর শাব্দিক অর্থ হল, সহজ ও সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা। 

                       হযরত হাসান বসরি র. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুরআনের একটি আয়াত পাঠের সময় ক্রন্দন করতে দেখে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলাورتل القرأن ترتيلا  আয়াত শরীফে যে, তারতীলের আদেশ করেছেন এটাই সেই তারতীল। (কুরতুবী)। এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক শিক্ষা দিয়েছেন যে, যেহেতু কুরআন শরীফ তেলাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কাজেই তোমরা যখন তেলাওয়াত কর তখন তা খুব মনোযোগের সাথে তেলাওয়াত করবে।

               উপরিউক্ত কুরআন ও হাদীস শরীফের বর্ণনায় একথাই প্রতীয়মান হয় যে, উল্লেখিত শর্তের কোন একটি ব্যতীত নেক আমল সুন্দর হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উল্লেখিত চারটি শর্তের আলোকে নেক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। 

সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলত




                 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার দরবারে। দরূদ ও সালাম বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর মহান সাহাবীগণ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই এ কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম পালন করা এবং এর পাশাপাশি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের ইত্তিবা ব্যতীত ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির কোন উপায় নেই। কুরআনের সাথে সাথে সুন্নতের অনুসরণও জরুরি। শুধু রাসূলের অনুসরণই নয় বরং মুক্তির জন্য তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং মহব্বত থাকাও আবশ্যক। 

                    অনুসরণ বলতে এমন অনুসরণই উদ্দেশ্য যা হবে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসার ফলশ্রুতি। অর্থাৎ- অন্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বত ও ভালবাসা এত অধিক পরিমাণে থাকতে হবে যার ফলে তাঁর অনুসরণে বাধ্য হতে হয়। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকায় যা পালন করা হবে তা-ই আল্লাহ পাকের কাছে ইবাদত হিসেবে কবুল হবে। সুন্নত তরীকা ব্যতীত অন্য যে কোন পন্থায় ইবাদত পালন করা হউক না কেন তা প্রত্যাখ্যাত হবে। মানব জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আদর্শ রেখে যান নি। 

            একটি কথা প্রচলিত আছে যে, যার সুন্নত ঠিক তার ওয়াজিবও ঠিক, যার ওয়াজিব ঠিক, তার ফরযও ঠিক। কিন্ত যার সুন্নত ঠিক থাকে না তার ওয়াজিবও ঠিক থাকে না। যার ওয়জিব ঠিক থাকে না তার ফরযও ঠিক থাকে না। আর সুন্নত হলো আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছার সহজ মাধ্যম। যে কোন কাজে সুন্নত সম্মত তরীকার সীমারেখা অতিক্রম করাই বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। 

            নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রকার বেদআতকে কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করেছেন। বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, তিনটি সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার উপর আমল করতে পারলে অন্তরে নূর পয়দা হয়, যার বরকতে অন্যান্য সকল সুন্নতের উপর আমল করা সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নতের উপর আমল করার স্পৃহা জাগ্রত হয়।

১. আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সালামের ব্যাপক প্রসার করা। 
২. প্রত্যেক ভাল কাজ ও ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন মসজিদে ও ঘরে প্রবেশ কালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। তাছাড়া তুলনায় প্রত্যেকটি নিম্নমানের কাজ এবং নিম্ন মানের স্থানে বাম দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন বাথরুমে প্রবেশ কালে বাম পা আগে রাখা, বাম হাতে নাক পরিষ্কার করা, পোশাকের ভিতর হতে বাম হাত ও বাম পা আগে বের করা। 
৩. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা।(সূরা আহযাব:৪১, কান্যুল উম্মাল ১:৪১৪)
যেমন- প্রতিদিন কুরআন থেকে কিছু পরিমাণ তেলাওয়াত করা বা অন্যের তেলাওয়াত শ্রবণ করা। (মেশকাত ১:১৯০)
     

                পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর সুন্নত নামায থাকলে সুন্নতের পরে নতুবা ফরযের পরে ৩ বার ইস্তেগফার, একবার আয়াতুল কুরছী,একবার সূরায়ে ইখলাস, সূরায়ে ফালাক, সূরায়ে নাস, এবং তাছবীহে ফাতেমী অর্থাৎ- ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আল হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (তিরমিযী ১:৯৪) 
                  উপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবাহানাল্লাহ, সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকা এবং প্রত্যেক কাজে মাসনুন দোআ পড়া। (দারেকুতনী ২:২৩৩)
    

                      আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুমের এত্তেবা তো এ জন্যই করতে হবে যেহেতু তিনি আমাদের প্রভূ। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এত্তেবা এ জন্য জরুরি যেহেতু রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম ও নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। অতএব আল্লাহর প্রতিটি হুকুম বাস্তবায়নের জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের বিকল্প নেই।

                     মূলত এ কারণেই কুরআনে কারীমের একাধিক স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন।  
  • قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم لله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور الرحيم- قل اطيعوا الله والرسول فان تولوا فان الله لا يحب الكفرين ْ 

অর্থাৎ-  আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবে এবং  তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু। আপনি বলুন! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালবাসেন না। (সূরায়ে আল ইমরান :৩১,৩২)

  •     অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন, واطيعوا الله ورسوله ان كنتم مؤمنين অর্থ- তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। (সূরা আনফাল:১)
  • আল্লাহ পাক আরো বলেন, 

ياايها الذين أمنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول ولا تبطلوا اعمالكم            অর্থ ঃ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। আর নিজেদের আমল ধ্বংস করে দিও না। (সূরায়ে মুহাম্মদ:৩৩)
  • আল্লাহ পাক আরো বলেন,

ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما
  অর্থ ঃ যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (সূরায়ে আহযাব:৭১)
  •   রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من احب سنتي فقد احبني ومن احبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নত ভালবাসে সে অবশ্যই আমাকে ভালবাসে। আর যে আমকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। অতএব, যে কেউ হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করবে সে জান্নাতে তাঁর সাথেই থাকবে। 
  • হাদীস শরীফে আরো বর্ণীত হয়েছে,

                                                  المرء مع من احب       
যে যাকে মুহাব্বত করবে সে তার সাথে থাকবে। 
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা স্বীয় ভালবাসার মাপকাঠি বলে দিয়েছেন। কেউ যদি পরম প্রভূর ভালবাসার দাবী করে, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের অনুসরণের কষ্টি পাথরে তা যাছাই করে দেখা উচিত। 

  •      রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من احيي سنتي عند فساد امتي فله اجر مأة شهيد
আমার উম্মতের ফাসাদের সময় যে আমার সুন্নত যিন্দা করবে তার জন্য রয়েছে একশত শহীদের সওয়াব। এখানে সুন্নতের অর্থ একটি সুন্নত যিন্দা করলেও শত শহীদের সওয়াব তাতে কোন সন্দেহ নাই। বর্তমানে অমুসলিমদের পক্ষ থেকে সুন্নত মুছে‎‎ দেয়ার যে গভীর ষড়যন্ত্র চালানো  হচ্ছে তার মোকাবেলায় কেউ যদি ঢাল হয়ে দাড়ায় এবং  জানবাজী রেখে লড়াই করে যায় তাহলে তার জন্য উপরে হাদীসে সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে।
  • রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে বলেন,

من رغب عن سنتي فليس مني
যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার দলভুক্ত নয়। সুন্নত যার থেকে বিদায় নিবে তার মধ্যে অবশ্যই বিদআত দেখা দিবে। 

         সুন্নতের গুরুত্ব যে কতটুকু তা উপরে উল্লেখিত হাদীস শরীফ দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়। সুন্নত মানব জীবনের সফলতার জন্য একটি সহায়ক। যার জীবন সুন্নত তরীকা অনুযায়ী যততুটু সাজানো তার জীবনও তত আরামদায়ক জীবন এবং উন্নত । যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আরামের যিন্দিগী  তালাশ করে তার জন্য সুন্নত আকড়ে ধরা উচিত। সুন্নত ব্যতীত আরামের যিন্দেগী তালাশ করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ পাক যাদের মঙ্গল ও কল্যাণ চান তাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান এবং সুন্নত তরীকা অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুর তরীকায় চলার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

রাসূলুল্লাহর (সাঃ)-এর অনুসরণ করা উম্মতের উপর ফরয


       হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন উম্মতের আদর্শ ও দ্বীনের মাপকাঠি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তির প্রত্যাশীদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। (সূরা আহযাব :২১) 

     রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণই হচ্ছে দ্বীনের আনুগত্য এবং সেটাই মহান আল্লাহর ইবাদত ও বন্দেগী। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের মাধ্যমেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত লাভ হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য করবে তিনি তাকে বেহেস্তে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হয়। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হলো মহাসাফল্য। (সূরা নিসা-১৩) 

       মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفورالرحيم                                          
অর্থাৎ- আপনি বলে দিন। যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহর প্রতি ভালবাসা পোষণ কর, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমদেরকে ভাল বাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। (সূরা আল ইমরান :৩১)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শের বিরোধিতা করা কুফরী। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক বলেন “যারা তার (রাসূলের) আদর্শের বিরোধিতা করবে তাদের ভয় করা উচিত যে, তাদের উপর বিপর্যয় আপতিত হবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক আযাব তাদেরকে গ্রাস করবে। (সূরা নূর, আয়াত :৬৩) 

             রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকার অনুসরণ না করলে প্রকারান্তে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য করা হয় না। এ বিষয়টি উম্মতের বুঝার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জবানে স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, 
كل امة يدخلون الجنة الامن ابي قيل ومن ابي يا رسول الله قال من اطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقدابي-
অর্থাৎ- আমার উম্মতের সকল লোকই জান্নাতি হবে অস্বীকারকারী ব্যতীত।
জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কে অস্বীকারকারী? উত্তরে তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আমার নাফরমানি করবে সে অস্বীকারকারী। (বুখারী শরীফ)

        বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ করার অর্থ  তার আদর্শ গ্রহণ, পালন ও রক্ষা করা। তার ব্যাক্তিগত ও ধর্মীয় জীবন যেমন আমাদের জন্য আদর্শ, তেমনি তার পারিবারিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক তথা সমগ্র জীবন আমাদের জন্য আদর্শ। সাহাবায়ে কেরাম রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ধন্য হয়েছেন। আমরাও যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণ করি তাহলে আমরাও ধন্য হতে পারব। 

       দুঃখের বিষয় আমরা অনেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমগ্র আদর্শকে গ্রহণ না করে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা, প্রয়োজন, আর মর্জি মাফিক তার আংশিক আদর্শকে মেনে চলছি। কতিপয় সুন্নাতের অনুসরণ করে বাকি সুন্নাতকে বাদ দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাঁটি উম্মতের দাবিদার মনে করছি। আর এর উপর শাফায়াতের আশা করছি। 

      দ্বীনের কিছু আদেশ-নিষেধ মেনে ও কিছু বর্জন করে আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কিছু অনুসরণ করে এবং তার কিছু সুন্নাতকে ছেড়ে দিয়ে কি আল্লাহর সন্তুষ্টি দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি পাওয়া যাবে ? কারণ আল্লাহ তাআলার ঘোষণা, তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর আর কিছু অংশ অবিশ্বাস- অমান্য কর ? যারা এরূপ করবে পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর নেই। আর কিয়ামতের দিন তাদেরকে কঠোর শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বেখবর নন। (সূরা বাকার :৮৫)

     কাজেই আসুন, রাসূল প্রেমিক হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়ার সুখ-শান্তি ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতিটি সুন্নাত ও আদর্শ পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করি। আর সকল স্তরের মুসলমানকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি। আমীন।  

ইসলামী সভ্যতা বনাম পাশ্চাত্ব্য সভ্যতা


                      
        আল্লাহু রাব্বুল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। (সূরা আল ক্বলম : ৪) 

           রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় তোমরা প্রেরিত হয়েছ মানুষের ক্ষেত্রে সহজলভ্য করার জন্য, কষ্টসাধ্য করার জন্য নয়। (তিরমিযী শরীফ পৃঃ ৩৮) 

        মানব জীবনের সকল স্তরেই তথা ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন কিংবা আন্তর্জাতিক জীবন হোক না কেন সর্ব ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য সভ্যতার বিকল্প নেই। তাই কুরআন হাদীসের অসংখ্য স্থানে বাস্তব সভ্যতা শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্য না হয়ে উপায় নেই যখন পাশ্চাত্যের রথি মহারথিরা নিজেদের সাংস্কৃতিকে তথাকথিত সভ্যতার ঝড় তুলে ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে অসভ্যতা বলে প্রচার করার হীন প্রচেষ্টা চালায়। তাই পাঠক সমীপে ইসলামী সভ্যতার দু-একটি বাস্তব নমুনা ইসলামী মহামণীষীদের এক ঘটনা থেকে তুলে ধরার প্রয়াস পাব। 

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী সভ্যতা
একবার হযরত আলী রা. এর লৌহবর্ম চুরি হয়ে গেলে একজন ইহুদীর কাছে পাওয়া যায়। হযরত আলী রা. দেখে চিনে ফেললেন এবং বললেন এটা আমার লৌহবর্ম, ইহুদী বলল প্রমাণ দাও। 

হযরত আলী রা. এর লৌহবর্মের ঘটনা
আল্লাহু আকবার! হযরত আলী রা. নিজেকে কি পরিমাণ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত বানিয়ে নিয়েছেন! যেখানে প্রজাদেরকে মৌখিক স্বাধীনতা দিয়েছেন সেখানে তা কাজে পরিণত করে দেখিয়েছেন। একজন ইহুদী প্রজা রাজত্বের অধিকারী খলীফাতুল মুসলিমীনকে বলে যে, প্রমাণ দাও। অথচ ইহুদী এক নিকৃষ্ট জাতি ছিল। যখন থেকে তারা হযরত মুসা আ. এর সাথে বেআদবি করে ছিল তখন থেকে সর্বদাই অসম্মানিত অবস্থাতেই ছিল এবং এখনো যেখানে আছে অসম্মানিত অবস্থাতেই আছে। কবি সত্য বলেছেন, অর্থ- যে বন্ধু তার দরবার থেকে মুখ ফিরায়, সে যেখানেই যায় সম্মান নাহি পায়। 

       একেতো জাতিগত নিকৃষ্টতা আবার আলী রা. এর সম্রাজ্যের মধ্যে বসবাসকারী তার পরও তার এত দুঃসাহস। প্রিয় ভায়েরা! বাস্তব স্বাধীনতা এটাই। ধর্ম ছেড়ে দেয়া আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ছেড়ে দেয়ার নাম স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা হল কোন পাওনাদারের মুখ বন্ধ না করা। কারো উপর অত্যাচার না করা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবস্থা এরকম ছিল যে, একজন ইহুদীর কিছু ঋণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ছিল। একদিন সে মসজিদে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শানে লাগামহীন কথা বলা শুরু করলে সাহাবাগণ রা. তাকে ধমক দিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, পাওনাদারের কথা বলার অধিকার আছে। স্বাধীনতা এটাই যে প্রজাদেরকে রাষ্ট্রের মধ্যে এমন অধিকার দেয়া হবে। হযরত আলী রা. কাজের দ্বারা এমন স্বাধীন বানিয়ে ছিলেন যে, ইহুদী বলল, প্রমাণ দাও। নতুবা বিচার দাও। অতঃপর উভয়ে মিলে ঐ সময়কার বিচারপতি যিনি হযরত উমর রা. এর যুগ থেকে এ পদে বহাল ছিলেন। হযরত শুরাইহ রহ. এর আদালতে বিচার দায়ের করলেন। হযরত শুরাইহ রহ. আমীরুল মু’মিনীনের তোয়াক্কা না করে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। ইহুদীকে জিজ্ঞাসা করলেন লৌহবর্ম কি তোমার? সে স্বীকার করলে হযরত আলী রা. কে বললেন আপনার হলে প্রমাণ দিন। 

বিচারকের বিচার 
          আল্লাহু আকবার! স্বাধীনতার নমুনাটা দেখুন, রাষ্ট্রের একজন বিচারক সরাসরি আমীরুল মু’মিনীনের কাছে প্রমাণ চায়। যে দাবি অবাস্তব হতেই পারে না। এটা একমাত্র আইনের কারণেই হয়েছে। আল্লাহর কসম! যারাই সভ্যতা শিখেছে ইসলাম থেকেই শিখেছে। তার পরও ইসলামের উপর আমল করতে পারে নাই। মোট কথা হযরত আলী রা. দুইজন সাক্ষী উপস্থিত করলেন। একজন নিজ পুত্র হযরত হাসান রা. দ্বিতীয় জন তাঁর আযাদ কৃত গোলাম। যার নাম ছিল ক্বাম্বর। পিতার পক্ষে পুত্রের সাক্ষী গ্রহণ হওয়ার ব্যাপারে হযরত আলী রা. ও হযরত শুরাইহ রহ. এর মধ্যে মতানৈক্য ছিল। শুরাইহ রহ. এর নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিন্তু হযরত আলী রা. এর নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল। সে জন্য হযরত আলী রা. হযরত হাসান রা. কে সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত করেছেন। (বর্তমান যুগে মতানৈক্যের কারণে উলামায়ে কেরামকে ভাল মন্দ বলা হয় অথচ এই মতানৈক্য আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান যুগের মত উলামাগণকে গাল-মন্দ করা হত না। একে অন্যকে কাফের, পথভ্রষ্ট বলত না। বর্তমান যুগে একে অপরকে গালি-গালাযের কারণ অহঙ্কার ছাড়াও আরও একটি বড় কারণ হল, সব জায়গায় ছোটদের ক্ষমতা।) 
উপরোক্ত মতানৈক্যের ভিত্তিতে হযরত শুরাইহ রহ. নিজের ইজতেহাদের উপর আমল করতঃ হযরত হাসান রা. এর সাক্ষী গ্রহণ করলেন না। হযরত আলী রা. কে বললেন যে, গোলাম আযাদ হওয়ায় তার সাক্ষী গ্রহণ যোগ্য কিন্তু হাসান রা. এর পরিবর্তে অন্য সাক্ষী উপস্থিত করুন। হযরত আলী রা. বললেন, অন্য কোন সাক্ষী তো নেই। শেষ পর্যন্ত হযরত শুরাইহ রহ. হযরত আলী রা. এর দাবী খারেজ করে দিলেন।

বিচারকের সিদ্ধান্তের উপর সন্তুষ্টি
যদি বর্তমান যুগের মত হত তাহলে হযরত শুরাইহ রহ.কে ধমকি, হুমকি শুনতে হত। এমনকি উপরোক্ত পদ হতে বরখাস্তও হতে হত কিন্তু হযরত আলী রা.ও হযরত শুরাইহ রহ. ব্যক্তিমত পূজারী ছিলেন না। তাঁরা ধর্মীয় সকল বিষয়ে নিজের জান কুরবানকারী ছিলেন। যদি হযরত শুরাইহ রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হত তাহলে উনি কসম করে বলতেন যে, হযরত আলী রা. নিজের দাবিতে সত্যবাদি ছিলেন, কিন্তু যেহেতু শরীয়তের কানূন অনুমতি দেয় না তাই নিজের বিশ্বাসের উপর সিদ্ধান্ত করেন নি। 

ইহুদীর ইসলাম গ্রহণ 
বিচার শেষে ইহুদী বাইরে এসে হযরত আলী রা. এর মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া সত্যেও কোন অপছন্দনীয়তার চিহ্নমাত্রও দেখল না। তো কোন জিনিসে উনাকে অসন্তুষ্ট করল না। ইহা চিন্তা করে সে বলল  যে, এখন আমার বুঝে আসল যে, আপনার ধর্মই সত্য। ইহা এটারই সুফল। এই নেন আপনার লৌহবর্ম। এটা আপনারই। আমি মুসলমান হচ্ছি , اشهد ان لااله الاالله واشهد ان محمدا عبده ورسوله  আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রভূ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসুল। 
   অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) বললেন যে এই লৌহবর্ম আমি তোমাকে দিয়ে দিলাম। মোটকথা ঐ ইহুদি মুসলমান হয়ে গেল এবং হযরত আলী (রাঃ) এর সাথে থেকে একটি ইসলামি যুদ্ধে শহীদ হয়ে গিয়েছেন। দেখুন ইহাই হল ইসলামি সভ্যতা , অথচ পাশ্চাত্যবাদিদের সভ্যতা হল বিশ্বের মধ্যে মোড়লিপণা দেখিয়ে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে নিজের পেট পুরা করা আর নিজেদের মতের উল্টা হলেই সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে যে কোন দেশে হামলা করতঃ লক্ষ লক্ষ টাকা রাষ্টীয় সম্পদ ধ্বংস ও হাজার হাজার নিরীহ জনগণকে হত্যা করা।

পাশ্চাত্যবাদিদের ধারণা ও তার খন্ডন
           পাশ্চাত্যবাদীদের ধারাণা যে ইসলাম তরবারী জোরেই বেশি প্রসারিত হয়েছে। প্রমাণ হিসাবে বিভিন্ন যুগের ইসলামী জীহাদ সমূহকে পেশ করে। আমি তাদেরকে বলি যুদ্ধ বলতেই সভ্যতার পরিপন্থী এটা কোন জ্ঞানী বলতে পারে না। কারণ বর্তমান যুগে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সভ্য জাতিরাও যুদ্ধ করে। সুতরাং বুঝা গেল প্রয়োজনে যুদ্ধ করা সভ্যতার দিক থেকেও অনুমোদিত। আমি অত্যাচারিত বাদশাদের পক্ষপাতিত্ব করছি না। কিন্তু খুলাফায়ে রাশেদীনের ব্যপারে দাবি করে বলতে পারি যে, উনারা কখনও দুর্বল ভিত্তিতে যুদ্ধ করেন নি। বরং কোন শক্তিশালি কারণ পাওয়া গেলেই যুদ্ধ করতেন। যুদ্দের ব্যপারে ইসলামী নিয়মনীতি জানা থাকলে ইসলাম বিরোধীরা কখনো এ কথা বলত না যে, ইসলাম তরবারীর জোরে প্রসার হয়েছে। যুদ্ধের অনেক ইসলামী নিয়মনীতি থেকে আমি সংক্ষিপ্তভাবে একটি নীতির বর্ণনা করছি। 

ইসলামের নীতি
ইসলামের নীতি হল যার উপর খুলাফায়ে রাশেদীন সর্বদা আমল করে আসছেন তা হল যে কোন ব্যক্তি যুদ্ধের সময় যদি তোমার পিতা, ছেলে, ভাই, এবং সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে হত্য করল এবং হত্যা করেই চলল অতঃপর যখন তোমার আয়ত্বে এসে যাবে এবং তুমি তার থেকে প্রতিশোধ নিতে চাও তখন সে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বলে তখন ইসলামের আদেশ হল তাকে সাথে সাথে ছেড়ে দাও। যদিও তোমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, জানের ভয়ে সে কালেমা পড়েছে, অন্তর থেকে ইসলাম গ্রহণ করে নাই। তবুও তাকে সাথে সাথে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় তুমি যদি তাকে হত্যা কর তাহলে তুমি জাহান্নামে  যাবে। যদিও এই আশঙ্কা আছে যে সে ঐ সময় জান বাঁচিয়ে সুযোগ মত তোমাকে হত্যা করবে। যাই হোক এই অবস্থা তাকে হত্য করা জায়েয নাই। তাহলে যেই ধর্মে এত বড় আত্মরক্ষার সুযোগ অন্যের হাতে দিয়ে দেয় সেই ধর্মের ব্যপারে কেউ এ কথা কি ভাবে বলতে পারে যে, তা তরবারীর জোরে প্রসারিত হয়েছে। অবশ্যই জেনে রাখ যে, আমাদের পূর্ব পুরুষগণ এ নীতির উপর অটল ছিলেন। 

জিহাদের উদ্দেশ্য   
জিহাদ হল অপারেশন স্বাদৃশ্য। কেননা রোগের উৎস দুই প্রকার। এক প্রকার হল সংক্রামক। দ্বিতীয় প্রকার অসংক্রামক যা ঔষধের দ্বারা রোগ মুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু প্রথম প্রকার রোগ ঔষুধের দ্বারা মুক্ত হওয়া যায় না। বরং উহা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অপারশেনের মাধ্যমে তার জিবানুগুলো বাহির করে দিতে হয়। তদ্রুপ ইসলামের শত্রুরাও দুই প্রকার। এক প্রকার হল যাদের সাথে  সন্ধি করলে তারা সন্ধি করে মুসলমানদেরকে কষ্ট দেয়া ছেড়ে দেয়। সুতরাং তাদের সাথে সন্ধি করে নেয়া হয়। আর কিছু এমন কষ্টদায়ক ও সন্ত্রাসী হয় যে, সন্ধি করতে রাজি হয় না। এরাই হল সংক্রমন উৎস। এগুলোর জন্য অপারেশনের প্রয়োজন হয়। আর এরই নামই হল জিহাদ। সুতরাং জিহাদের দ্বারা মানুষকে মুসলমান বানানো উদ্দেশ্য নয় বরং মুসলমানদের নিরাপত্তা উদ্দেশ্য।
পরিশেষে আর একটি কথা না বলে পারছি না যে, যুদ্ধই যদি সন্ত্রাসী হয়ে থাকে তাহলে বর্তমান যুগে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী তথাকথিত সভ্যতার দাবিদার পশ্চিমারাই হবে। কারণ তারাই কারণে অকারণে খোঁড়া অজুহাত বানিয়ে মুসলমান অধ্যুষিত রাষ্ট্রসমূহকে বোমা বিষ্ফুরণ গঠিয়ে ধ্বংসাবশেষে পরিণত করতেছে। সুতরাং তাদের কাছে আমার দাবি, তারা যেন ইসলাম থেকে সভ্যতা শেখে। তারা যেন অহেতুক ইসলামের উপর অসভ্যতার কালিমা লেপনের চেষ্টা না করে।  

জীবন গড়ার একটাই পথ

Friday, August 29, 2014



           অসংখ্য শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে কোন আবেদন ব্যতীত নিজ দয়ায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উম্মত হিসেবে এ বিশ্ব চরাচরে প্রেরণ করেছেন। বেশুমার দরূদ-সালাম জানাই আমাদের সবচেয়ে আপনজন, সবচেয়ে দরদী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি, যাঁর বদৌলতে আমরা আল্লাহ পাকের পরিচয় লাভ করেছি।  

              এ সুন্দর ধরণী যখন আঁধারের কালো মেঘাচ্ছন্ন ছিল, আঁধারের পথ বেয়ে যুবসমাজ তথা সর্বস্তরের মানুষ যখন ছুটছিল নিশ্চিত ধ্বংসের দিকে, সত্যের মসনদ যখন অসত্যের খরস্রোতে ভেসে যাচ্ছিল, হত্যা-নৈরাজ্য, চুরি-ডাকাতি আর “জোর যার মুল্লুক তার” এর চর্চা হচ্ছিল পৃথিবীর সর্বত্র। সেই অন্ধকার যুগে আগমন করেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পৃথিবীর এ সংকটময় মুহূর্তে ধ্বংসের অতল তলে নিমজ্জিত অসভ্য জাতিকে সভ্যতার দিকে আহ্বান জানাতে তাঁকে অনেক নির্যাতনের এবং পদে পদে প্রতিকুলতার শিকার হতে হয়েছে। 

         সুদীর্ঘ তেইশ বছর তিনি আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহর দিকে, ইসলামের দিকে তথা জান্নাতের দিকে আহ্বান করেছেন। তাঁর দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল, একমাত্র আল্লাহ পাকের ইবাদত করা। আর ইবাদত হল আল্লাহ পাকের প্রতিটি হুকুম আহকাম মেনে চলা তথা তাঁর সন্তুষ্টির রাস্তায় চলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যহত রাখা। এক কথায় “নেক আমল করা এবং গুনাহের কাজ বর্জন করা”। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “তুমি হারাম কাজসমূহ বর্জন কর, এতে তুমি সবচেয়ে বেশী ইবাদতকারী হিসাবে বিবেচিত হবে।” হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, ছোট একটি গুনাহ বর্জন করা বনী আদমের সকল নফল ইবাদতের চেয়ে উত্তম।” তবে কোন ব্যক্তি যদি অধিক নফল আদায়ের পাশাপাশি যাবতীয় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তাহলে তিনি অবশ্যই প্রশংসার পাত্র হবেন। 

             যে ব্যক্তি গুনাহ বর্জন করে তাকেই মুত্তাকী বলা হয়। এ মুত্তাকী সম্পর্কেই পবিত্র কুরআন ও হাদীসে প্রশংসা ও সুসংবাদ মূলক অনেক বাণী রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, فريق في الجنة وفريق في السعير   অর্থাৎ- এক দল যাবে জান্নাতে। আর অন্য দল যাবে জাহান্নামে। 
আল্লাহ পাক বলেন, اعدت للمتقين   অর্থাৎ- জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে। মুত্তাকীগণ আল্লাহ পাকের বন্ধু এবং তার কাছে অধিক সম্মানিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ان اكرمكم عندالله اتقاكم   অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত হল, যে তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে অধিক ভয় করে, তথা অধিক তাকওয়া অবলম্বন করে। এ তাকওয়ার উৎস হল অন্তর। 

    হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, التقوي ههنا অর্থাৎ তাকওয়া হল এখানে। এ কথা বলে তিনি বুকের দিকে ইশারা করেন। তথা তাকওয়ার স্থান হল অন্তর। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে সব ঠিক। অন্তর পরিশুদ্ধ হলে তার থেকে যে সমস্ত কাজ প্রকাশ পাবে তা হবে শরীয়ত মুতাবেক। কিন্তু অন্তর পরিশুদ্ধ না হলে অর্থাৎ অন্তর পাপ-পঙ্কিলতায় ভরপুর হলে তার থেকে যে সমস্ত কাজ প্রকাশ পাবে তা শরীয়ত বিরোধী হওয়াই স্বাভাবিক। তাই সর্বপ্রথম অন্তর পরিশুদ্ধ করা জরুরি। 
       অপর দিকে অন্তর হল রাজধানী সাদৃশ্য। অন্যান্য অঙ্গÑপ্রত্যঙ্গ যেমন চোখ, মুখ, কান, ইত্যাদি দেশের বর্ডার সাদৃশ্য। যে দেশের বর্ডার এলাকা সংরক্ষিত থাকে না সে দেশের রাজধানীও নিরাপদ থাকে না। তেমনি ভাবে অঙ্গÑপ্রত্যঙ্গ নামক বর্ডার সুরক্ষিত না থাকলে অন্তর নামক রাজধানীও সুরক্ষিত থাকতে পারে না। তাই অন্তরকে সমস্ত গুনাহ থেকে হেফাজতের সাথে সাথে অন্যান্য অঙ্গÑপ্রত্যঙ্গকেও যাবতীয় গুনাহ ও নাফরমানীমূলক কাজ থেকে হেফাজত করা জরুরি। 
            
         যাবতীয় গুনাহ থেকে বাঁচা ও ত্বাকওয়া অর্জনের উপায় সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা একটি সহজ পথ আমাদেরকে বাতলে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, يا ايها الذين أمنوا اتقو الله وكونوا مع الصادقين    অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর (গুনাহ বর্জন কর)। আর (এর পদ্ধতি হল) তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারীদের সঙ্গী হও। তাই গুনাহ বর্জন ও নেক আমল করার একমাত্র পদ্ধতি হল, সোহবতে সালেহীন গ্রহণ করা। কেউ যদি একটি মেশিন তৈরী করে তা হলে মেশিন তৈরীকারী তার উন্নতি অবনতি সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল ধারণা রাখবে। আল্লাহ পাক যেহেতু আমাদের সৃষ্টি কর্তা কাজেই কোন পথে শান্তি, কোন পথে অশান্তি এটা একমাত্র তিনিই জানেন। তাঁর দেয়া পদ্ধতি গ্রহণ করলে অবশ্যই গুনাহমুক্ত শান্তিযুক্ত স্বার্থক জিন্দেগী গঠন করা সম্ভব। আর সেটা হল সোহবতে সালেহীন ও সুহবতে আহ্লুল্লাহ।   

         কেউ যদি কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে চায়,  ঐ বিষয়ে পূর্ণতায় পৌঁছতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই ঐ বিষয়ের দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের সাথে সার্বক্ষণ থাকতে হবে। তার পরামর্শ মোতাবেক চলার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।  যেমন- ডাক্তার হতে হলে ডাক্তারী বিষয়ে পাশ করার পরও তাকে অনেক দিন যাবত কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে থাকা জরুরি। কেউ যদি ভাল চালক হতে চায় তাহলে ড্রাইভিং লাইসেন্স লাভের পরও তাকে অবশ্যই কোন ভাল অভিজ্ঞ চালকের সাথে থাকা জরুরি। তেমনিভাবে আল্লাহওয়ালা হতে হলে, আল্লাহকে পেতে হলে অবশ্যই একজন আল্লাহওয়ালার সুহবতে থাকতে হবে।
       হাকীমুল উম্মাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. বলেন, “এই যামানায় আল্লাহওয়ালা লোকের সুহবত ফরযে আইন বলছি এবং এর উপর ফতোয়া দিচ্ছি। হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. কে একবার বলা হয়েছিল, আপনি ইলমের এ অজস্র স্রোতধারা কোথায় পেয়েছেন ? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমি কিতাব চর্চার পাশা পাশি কুতুব (আল্লাহর ওলী) চর্চা অনেক বেশি করেছি। এ জন্যই তোমরা আমাকে এ অবস্থায় দেখতে পাচ্ছ। তিনি প্রায় দেড় হাজারের অধিক অমূল্য গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। 
সুহবতের আশ্চর্যজনক প্রভাব রয়েছে। সামান্য সুহবতের বরকতে আল্লাহভোলা মানুষ আল্লাহওয়ালা লোকে পরিণত হয়ে যায়। জাহেলী যুগের সেই অসভ্য, বর্বর, কলুষিত মানুষগুলোই দোজাহানের বাদশা হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুহবতের বরকতে সর্ব শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন।
সুহবত বা অন্যের সঙ্গলাভ একটা স্বাভাবিক অভ্যাস। মানুষ মানুষের সাথেই চলবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের নিকট একটি চিরসত্য কথা হল, “মানুষ একাকী বসবাস করতে পারে না, সে তার বন্ধু চায়” এ কথার ব্যাখ্যায় জনৈক আহ্লুল্লাহ বলেন, আল্লাহ পাক যেন বলতে চাচ্ছেন,  হে মানব জাতি ! তোমাদের স্বভাব হল তোমরা একা একা চলতে পার না বরং একজনের সাথে চলতে চাও। আমিও চাই তোমরা কারো সাথে চল, তবে আমার কাম্য হল, তোমাদের কাছে আমার যে বন্ধু আছে তার সাথে চল। তাঁর মাধ্যমেই তোমরা আমার নৈকট্য লাভ করতে পারবে। জনৈক বুযুর্গ লোক বলেন, নতুন কোন লোক তাবলীগে কিছু দিন সময় কাটানোর পর এলাকায় এসেই মানুষকে নামাযের দিকে, নেক কাজের দিকে আহ্বান জানাতে থাকে, এটাও সুহবতের তা’সীর ও বরকত। কারণ সে আল্লাহর রাস্তায়, আল্লাহওয়ালাদের সাথে কিছুদিন নিজের পূর্ণ সময় ব্যয় করেছে। 

                   কেবল সুহবতের বরকতে সাহাবায়ে কেরাম রা. এমন মর্তবায় পৌঁছেছেন, যে স্তরে পৌঁছা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তাঁরা শ্রেষ্ঠ মানব রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুহবতে ছিলেন। তাই একবার হাসান বসরী ও আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রহ.কে হযরত মুয়াবিয়া রা. এবং হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয রহ. এর মধ্যে কার মর্তবা বেশি এ কথা জিজ্ঞসা করা হলে উভয়ে উত্তর দিয়ে ছিলেন যে, হযরত মুয়াবিয়া রা. যখন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন তখন মুয়াবিয়া রা. এর ঘোড়ার নাকের ভিতর যে ধুলা-ময়লা জমে ছিল তাও হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয হতে উত্তম। এর একমাত্র কারণ হযরত মুয়াবিয়া রা. সর্বশ্রেষ্ঠ মানবের সুহবত অর্জন করেছেন। 
             সুহবত ব্যতীত আলেমের ইলমও জ্যোতিহীন থাকে। সমাজে তার ইলমের প্রতিফলন কাক্সিক্ষত ও সুন্দর হয় না। এমনকি তার ইলম দ্বারা উপকারের পরিবর্তে সমাজে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। এ সম্পর্কে ডাঃ আব্দুল হাই রহ. এর উপমাটি খুব চমৎকার। তিনি বলেন, উন্নত মানের বিরিয়ানী রান্নার যাতীয় মাল-মসলা একত্রিত করে একটি ডেগে কাঁচা অবস্থায় যদি কিছুদিন রেখে দেয়া হয়, তাহলে সেগুলো পঁচে এত দুর্গন্ধযুক্ত হবে যে, পঁচা দুর্গন্ধে সকলেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে এবং সর্বত্রই রোগ ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু যদি ডেগের ঐ মাল-মসলাগুলো কোন সুদক্ষ বাবুর্চি আগুন দ্বারা তাপ দিয়ে ঠিকমত নাড়াচাড়া করে তাহলে ঐ বিয়িানীর মৌ মৌ ঘ্রাণে এলাকাবাসী মোহিত হয়ে যাবে। অনুরূপ আলেম ব্যক্তির ছিনার ইলম হল বিরিয়ানীর মাল-মসলার মতো। ইলম নামক মাল-মসলাগুলো যদি আল্লাহ পাকের কোন খাঁটি ওলীর সুহবত নামক নূর  দ্বারা তাপ দেয়া না হয়, তাহলে দুর্গন্ধযুক্ত বিরিয়ানীর উপকরণের মতোই ইলমওয়ালা ব্যক্তি সকলের কাছে ঘৃণ্য, অপদস্ত ও অমর্যাদার পাত্র হয়ে পড়বে। এর দ্বারা নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং যারা অনুসরণ করবে তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। 
            আর যদি ইলম নামক মাল-মসলাগুলো আল্লাহ পাকের মাহবূব, মাকবূল বান্দার সুহবতের দ্বারা তাপ দেয়া হয় তাহলে তার ঐ ইলম এমন বরকতময় ও নূরান্বিত হয় যে, সেই নূরের দ্বারা সর্বত্র আলোকিত হয়ে ওঠে। ফলে এর দ্বারা নিজেও উপকৃত হয় এবং অন্যরাও উপকৃত হয়। 
            সুহবতের বরকতে শুধু মানুষই নয় বরং অন্যান্য তুচ্ছ জিনিসেরও দাম অনেক বেড়ে যায়। যেমর- আসহাবে কাহাফের কুকুরটি নেককার লোকদের বরকতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উসতুয়ানা হান্নানা নামক গাছটিও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বরকতে বেহেশতে প্রবেশ করবে। 
           সুতরাং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলমীনকে পেতে আল্লাহ পাকের মনোনীত পদ্ধতি “সুহবতে সালেহীন” অবলম্বন করা সকল মানুষের জন্য জরুরি। বরং জীবন গড়ার এটাই একমাত্র পথ, একটাই পথ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য তাঁর প্রিয় বান্দাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া, তাঁদের সুহবত অর্জন করার তৌফিক দান করুণ। আমীন  

বিদআত ও তার কুফল



      বিদআত শব্দটি আমাদের সকলের পরিচিত এবং সব জাগায় বিদআত নিয়ে তর্ক-বিতর্কও হয়, তবে বিদআত যে ভ্রষ্ট পথ এ ব্যপারে কারো দ্বিমতনেই। কেননা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ধর্মের ব্যাপারে সকল নতুন কাজই বিদআত, আর সকল বিদআতই পথভ্রষ্টতা। তাই একজন কট্টর বিদআতী এই কথা স্বীকার করে যে, সকল বিদআতই পথ ভ্রষ্টতা ও জঘণ্য গুনাহ। তবে বিদআত নির্ধারণে কেউ একটা কাজকে বলেন। আবার কেউ ঐ কাজকেই নেকী মনে করেন। তাই বিদআত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে বিদআত এর সঠিক সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন।
        বিদআতের সংজ্ঞাঃ  বিদআতের আভিধানিক অর্থ হল, নতুন বিষয়, নতুন মডেল, নতুন পদ্ধতি, নতুন আবিষ্কার। আর শরীয়তের পভিাষায় বিদআত বলা হয় সওয়াবের উদ্দেশ্যে ধর্মের মধ্যে এমন কাজ বা পদ্ধতি বের করা যা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে  ছিল না, এমন কি সাহাবা ও তাবেয়ীনের যুগেও ছিল না। তাই সব নতুনকেও বিদআত বলা যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে গাড়ী চলা, বাস, মটর সাইকেল চলা, ঘড়ি ব্যবহার করা এবং চশমা ব্যবহার করা ইত্যাদি ছিল না। এই সবের উপর আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য হলেও পারিভাষিক অর্থে বিদআত বলা যাবে না। কারণ এ সব শরীয়তী বিষয় নয়। আর বিদআত বলা হয় সওয়াবের উদ্দেশ্যে দ্বীন মনে করে কোন আমল করা। এগুলো কেউ সওয়াবের উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসাবে করে না। 

          দাফনের পর কবরের কাছে আজান দেওয়া মাকরূহ ও বিদআত। কারণ এই আমল হযরত নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেমন নেই, তেমনি হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন থেকেও এর কোন প্রমাণ নেই। অথচ ঐ যামানাতেও কবর দেয়া হত। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হত। আযানের জন্য শরীয়তের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বচন করা আছে। তার সীমা অতিক্রম করা বিদআত বলা হবে। যেমন কুরআনে আছে যে من يتعدي حدود اللة فقد ظلم نفسه  অর্থাৎ- যে আল্লহ তাআলার সীমা অতিক্রম করে , সে নিজের উপর জুলুম করে। ফতাওয়া শামীর মধ্যে আছে যে, আযান নিদিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ করার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, দাফন ইত্যাদির সময় আযান দেওয়া সুন্নাত নয় বরং বিদআত।
ইবনে হাজার রহ. তার ফতোয়ায় সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, কবরের উপর আযান দেয়া বিদআত।

       এমন আর একটি বিদআত আমাদের সমাজে চলে আসছে । তাহল ওরসের গোস্ত খাওয়া। এর দলিল স্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেন যে, তিনি তেমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব-জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত এবং সে সব জীব-জন্তু যা আল্লাহর নাম ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। এখানে জানা আবশ্যক যে, বুজুর্গ এবং আউলিয়াগণের মাজারে, ভ-দের ওরসে যে সকল জীব-জন্তু জবেহ করা হয় চাই গরু, ছাগল বা মুরগী মূর্খ প্রকৃতির মুসলমানেরা যে মান্নত করে তা مااهل به لغيرالله   এ আয়াতের অন্তরভুক্ত হয়ে সবই হারাম বলে সাব্যস্ত হয়েছে। তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন (১:৪২১ পৃঃ)

        এমনিভাবে মৃত ব্যক্তির দাফনের পর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে ৩য় দিনে এবং ৪০তম দিনে বা মৃত্যু বার্ষিকীতে দোআ ও মীলাদের ব্যবস্থা করা বিদআতের মধ্যে গণ্য। কারণ তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় ছিল না এবং তাবে তাবিয়ীনের যুগেও ছিল না। এই তিন যামানা যেহেতু শ্রেষ্ঠ এবং এ তিন যামানায় এ সব ছিল না তাই এগুলো বিদআতের মধ্যে গণ্য। 

         এমনি ভাবে আর একটি বিদআত যা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তাহল ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করা। আপনিই বলুন যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৬৩ বছর জীবনের কোন সময়টি এমন রয়েছে যা স্মরনীয় নয়? যার উপর প্রাণ উৎসর্গ করার মত নয়? কিন্তু কখনো কি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, সাফা পর্বতের সেই দিনটি উদ্যাপন কর। মক্কা থেকে হিজরতের দিনটি উদ্যাপন কর। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জন্মদিন বরকতপূর্ণ ও মহিমান্বিত হওয়ার ব্যপারে কোনই সন্দেহ নাই। কিন্তু যেহেতু এ প্রসঙ্গে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন বর্ণনা নেই এবং সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ কোন আমলও এ ব্যপারে প্রমাণিত নেই। বিধায় মনগড়া ভাবে আমাদের এ হৈ-হুল্লোড় নিঃসন্দেহে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। আমারা কি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনের থেকেও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অধিক ভালবাসার দাবীদার? অথচ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ জন্ম দিন প্রতি বছর তাদের সামনে আসত। তাঁরাতো আদৌ এ ধরণের কোন দিবস উদ্যাপন করেন নি। 


বিদআতীর পরিণতি

       নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম কথা হলো আল্লাহর কালাম অর্থাৎ কুরআন শরীফ। আর সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হল মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আরো বলেন, দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নতুন কাজ মন্দ এবং প্রত্যেক মন্দ কাজই বিদআত এবং সকল বিদআতই গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা। প্রত্যেক গোমরাহীর ঠিকানা জাহান্নাম। অন্য এক হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ তাআলা বিতআতীর তওবাকেও কবুল করবেন না। কেননা কতিপয় বিদআত এমন রয়েছে যে, যা করলে শিরক হয়ে যায়। তাই যে বিদআত নামের শিরকে লিপ্ত থাকে এবং মুখে তওবা করে তা কখনো কবুল হবে না। কেননা তওবা কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হল, শিরক ও বিদআত পরিত্যাগ করা। 

      একটি হাদীস শরীফে আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে বলেন যে, সাবধান! আমার উম্মতের কিছু লোককে ধরে আনা হবে। তাদেরকে দোযখের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, তুমি জান না তোমার পরে এরা কত নতুন কাজ আবিষ্কার করে ছিল! (বুখারী শরীফ ৬৯৩ পৃঃ) অর্থাৎ মনগড়া পদ্ধতিকে ইবাদত হিসাবে চালু করেছিল। বিদআত মূলত এটাই। কাজেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত পেতে এবং পরকালে পূর্ণ কামিয়াবি হাসিল করতে সকল বিদআত হতে মুক্ত থাকা উচিত। 
    
           আল্লাহ আমাদেরকে বিদআতমুক্ত জীবন লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

সার্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কুরআন ও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম





“আকাশ হতে চাঁদ নেমেছে 
মা আমিনার কোলে,
আঁধার রাতে উঠল যেন
চাঁদের চেরাগ জ্বলে।”

            নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বকালের, শ্রেষ্ঠ মানব। মানব সমাজের জীর্ণ, ঘুণে ধরা কাঠামোর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তিনি বিরল। ব্যক্তিগতরূপে সমাদৃত। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। হৃদয় গভীরে বরণীয়। তিনি ছিলেন সাহাবীদের জন্য একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি অনাথ, উৎপীড়িত, নিপীড়িত, বিতাড়িত ব্যক্তির আদর্শ। তিনি দাম্পত্য জীবনের, বিচারকের, প্রভূর (মহাজন), ভৃত্যের আদর্শ। তিনি দাতা ও গ্রহীতার, বীরত্ব ও সৎ সাহসের আদর্শ। তার জীবনে বহু ঘটনারই আবর্তন ঘটেছিল। আজ তাঁর প্রবর্তিত মানবাধিকার সম্পর্কিত একটি ফিরিস্তি উপস্থাপন করব। 
    
             মানুষের সহজাত অধিকারই মানবাধিকার বলে বিবেচিত। যুগে যুগে, দেশে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণণ হয়েছে। দুর্বলের উপর সবলের জুলুম চালানো হয়েছে কখনও সমাজের নামে. কখনও রাষ্ট্রের নামে, কখনও বা ধর্মের নামে । মানবতার এ লাঞ্ছনা, সত্যের এ অবমাননা যুগে যুগে মানুষের মৌলিক অধিকারকে করছে পর্যুদস্ত। এ অবস্থার পরিপেক্ষিতে মানুষকে তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সুদীর্ঘ সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়। 
              মানুষের ইতিহাসের শুরু থেকে ষষ্ঠ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রামের কোন ইতিহাস আমরা জানি না। সে সময়ে বিশ্বের সরকার শাসন পদ্ধতি ছিল ব্যক্তি কেন্দ্রিক। বিধিবদ্ধ শাসন তন্ত্রের অনুপস্থিত তৎকালীন শাসকদের খেয়াল-খুশি জনিত মুখোচ্চারিত বাণীই ছিল রাষ্ট্রের আইন। কাজেই সেখানে জন স্বার্থের পরিপন্থী শাসকের যথেচ্ছাচারের অবকাশ ছিল। 

               কিন্তু সপ্তম শতকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে নতুন কথা শুনিয়ে বিশ্ববাসীকে বিমুগ্ধ করেন। ওহী লাভ করে তিনি প্রচার করেন যে, মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহ তা’য়ালার খলীফা এবং মানুষকে সর্বোত্তম আদর্শ রূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। অথচ মানুষ হল আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের এ ঘোষণা এক ইসলাম ছাড়া আর অন্য কোন জীবন ব্যবস্থায় করা হয় নি। ইসলাম বর্ণ, গোত্র, ভাষা, সম্পত্তি বা অন্য কোন মর্যাদার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। ইসলামের বাণী হচ্ছে, “মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ, নেই। সব মানুষই সমান এবং একে অন্যের ভাই।” রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্বাস করতেন যে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য না থাকলে দেশের কল্যাণ হয় না। তার মতে যে দেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বাস সে দেশে পরম সহিষ্ণুতার প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচতে দাও” নাগরিক জীবনের এ নীতির গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান করে এক বৈঠকে বসেন এবং সকলে সম্মতিক্রমে ৬২৪ সালে এক সন্ধিপত্র সম্পাদন করেন। এ সন্ধি পত্র ইতিহাসে “মদীনার সনদ” নামে আখ্যায়িত। “মদীনার সনদ” পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান এবং একে মহাসনদ (গধমহধ ঈধৎঃধ) বলা যেতে পারে। আরবী ভাষায় লিখিত ৪৭ টি শর্ত সম্বলিত “মদীনার সনদ” থেকে কয়েকটি ধারা নিচে তুলে ধরছি। 

  • মদীনার সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খ্রীষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায় সমূহ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে। 
  • পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে ; মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। 
  • রক্তপাত, হত্যা, বলাৎকার, এবং অপরাপর অপরাধ মূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হল 
  • দুর্বল অসহায়কে সর্বতভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে। 
  • ইহুদীদের মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। 


                এসব ধারায় সুস্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রই পৃথিবীতে প্রথম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের মানবাধিকার একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা যা সব মানুষের জন্য অনুকরণীয়।  
                 পরবর্তী পর্যায়েও আমরা দেখতে পাই যে, আরববাসীরা নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করে তাদের খলীফা নির্বাচন করে। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে হযরত আবু বকর সিদ্দি রা. প্রথম ভাষণে বলেন, আমি সৎপথে থাকলে আপনারা আমাকে সাহায্য করবেন এবং সমর্থন যোগাবেন। আর বিপথগামী হলে উপদেশ দিয়ে পথে আনবেন। হযরত উমর রা. এর শাসন আমলেও প্রত্যেক পুরুষ ও মহিলার পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত ছিল। শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারে তারা তাদের নিজস্ব অভিমত, অভিযোগ, বিকল্প প্রস্তাব ইত্যাদি পেশ করতে পারতেন। এর প্রমাণ আমরা পাই যখন আমরা দেখি যে, একদা একজন সাধারণ ব্যক্তি মসজিদে খুৎবা পাঠের প্রাক্কালে কাপড় বন্টন সংক্রান্ত বিষয়ে দ্বিতীয় খলীফার নিকট কৈফিয়ত চেয়ে তাকে খুৎবা পাঠ থেকে বিরত করেিেছলেন। জনগণের নাগরিক অধিকার ভোগ করার এ ধারা হযরত আলী রা. এর শাসনামল (৬৬১ সাল) এর পরেও অব্যাহত ছিল। এ পর্যায়ে কুরআনুল হাকীমে কি ভাবে মানবাধিকার সংরক্ষিত রয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরছি। 


মানব জন্মের প্রকৃত তথ্য দিয়ে মর্যাদা সংরক্ষণঃ

         দাম্ভিক বস্তুবাদি দর্শন কল্পিত বিবর্তনবাদী দর্শন সৃষ্টি করে মানুষকে স্তরক্রমে কাকড়া থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে বানরের বংশধর বলে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে চরমভাবে তার মর্যাদা বিনষ্ট করেছে। এরশাদে ইলাহী 
 يا ايها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحده وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونسـاء-


খলীফার মর্যাদা প্রদানঃ

           মানুষ কোন বানরের বংশধর নয় বরং তারা হলেন নবীর বংশধর। সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব। তাদেরকে দেয়া হয়েছে আল্লাহার প্রতিনিধি হওয়ার সৌভাগ্য। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
 اني جاعل في الارض خليفة-                                   

নিরাপত্তার অধিকারঃ

             ইসলামী আদালতে মৃত্যুদণ্ড যোগ্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়া ও আদালত কর্তৃক শাস্তি ঘোষণা ছাড়া কাউকে বিনা বিচারে হত্যা করাকে সমস্ত মানবকুলের হত্যার সমতুল্য অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, 
১: من قتل نفسا بغير نفس او فساد في الارض فكانما قتل الناس جميعا-      
২:- ومن يقتل مؤمنا متعمدا فجزائه جهنم خالدا فيها وغضب الله عليه ولعنه واعدله عذابا اليما-       

নারীর মর্যদা ও অধিকারঃ
          সম্প্রতি আধুনিকতার দোহাই দিয়ে নারী স্বাধীনতার নামে যে, স্বেচ্ছারিতা এবং অশ্লীলতার গড্ডালিকা প্রবাহ চলছে, তা জাহেলী যুগেরই পুনরাবৃত্তি মাত্র। 
             ইসলামই নারী পুরুষের মধ্যে পর্দার বিধান চালু করেছে। প্রগতিবাদীদের মগজটা যদি একেবারে নষ্ট হয়ে না গিয়ে থাকে, তবে তাদেরকে প্রশ্ন করব, নারীর নিরাপত্তা কি পর্দায় থাকার মধ্যে নাকি বে-পর্দায় থাকার মধ্যে? রাস্তায় নামিয়ে আপনারা নারীদেরকে কিছু কিছু অধিকার অবশ্যই দিতে পেরেছেন। যেমন ঃ- ১. অপহৃতা হওয়ার অধিকার। ২. ধর্ষিতা হওয়ার অধিকার। ৩. এসিডে দেহ ও মুখমন্ডল জ্বলসে যাওয়ার অধিকার। ৪. বখাটেদের উৎপাত উৎপীড়িত হওয়ার অধিকার। ৫. অতঃপর লাশ হওয়ার অধিকার। ৬. মহর থেকে বঞ্চিত হওয়ার অধিকার। ৭. যৌতুক দিতে বাধ্য হওয়ার অধিকার। ৮. গাড়ীর রড ধরে দাঁড়িয়ে থেকে পুরুষদের ঠাসাঠাসি খাওয়ার অধিকার ইত্যাদি। যারা পর্দা প্রথাকে নবযুগীয় বলে উড়িয়ে দিতে চান, তারা প্রকৃত পক্ষে মাতৃ জাতিকে অপমান এবং লাঞ্ছনারই মুখোমুখী করেন। ইরশাদে রব্বানী,
১:- هن لباس لكم وانتم لباس لهن-
২:- ولهن مثل الذي عليهن بالمعروف-

সম্পদের মালিকানা সংরক্ষণের অধিকারঃ

           মানুষের দুনিয়ার জীবনকে সুখী সমৃদ্ধ ও শান্তিময় করে গড়ে তোলার জন্য সম্পদের মালিকানা ও ভোগ দখলের অধিকার দিয়েছে ইসলাম। এ মর্মে আল্লাহ তা’য়ালার ঘোষণা, 
ولا تأكلوا اموالكم بينكم بالباطل الا ان تكون تجارة عن تراض منكم-                  

ইজ্জত ও মর্যাদা রক্ষার অধিকারঃ

          ইসলাম মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানুষের ইজ্জত সম্মান রক্ষার সুস্পষ্ট বিধান ঘোষণা করেছে। মানুষের মর্যাদাহানী, হেয় প্রতিপন্ন করা, কুৎসা রটনা, বিদ্রুপ, উপহাস, নাম ও উপাধিকে বিক্রিত করা ইত্যাদিকে হারাম ঘোষণা করেছে। এ ব্যাপারে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফের বাণী,
১:- لا يسخر قوم من قوم عسي ان يكونوا خيرا منهم-                  
২:- اجـتـنبوا كثيرا من الظن ان بعض الظن اثـم-                                    
৩:- لايغضب بعضكم بعضا-                                                         

 মতামত প্রকাশ ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে স্বাধীনাতার অধিকারঃ

          একটি ইসলামী রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধর্মের লোক নিরাপদে বাস করতে পারবে এবং তার মতামত প্রকাশও স্বাধীনভাবে র্ধম পালন করতে পরবে। 
এরশাদে বারী তা’আলা, لا اكرة في الدين    প্রত্যেক ধর্মের উপাস্যদের নিন্দাবাদ ও গালমন্দ কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ করেফে- لا تسبوا الذين يدعون من دون الله 

অমুসলিমদের ইসলামে আকৃষ্ট হওয়ার অধিকারঃ

     কোন অমুসলিমও যদি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ শোনার আগ্রহ নিয়ে মজলিসে হাজির হয় তাহলে সে সশ্রদ্ধ আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, وان احد من المشركين استجارك فاجره حتي يسمع كلام الله -                        
উৎপাদনের স্বধীনতা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অধিকার ঃ ইসলাম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষ তথা প্রাণীকুলের খাদ্যের নিারপত্তা ও নিজের শ্রমের বিধানকে সর্বাধিক উত্তম আহার বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থের বাণী, 
 فاذا قضيت الصلاة فانتشروا في الارض وابتغوا من فضل الله-              
وما من دابة في الارض الا علي الله رزقها-                             

সুবিচার প্রাপ্তির অধিকারঃ

         মানবাধিকার যেমন সকল মানুষের অধিকার তেমনি এ অধিকার সকলের সমানভাবে প্রাপ্য। চুরি করলে জমিদার কন্যা শুধু ধমক খেয়ে ছাড়া পাবে। আর দরিদ্র চাষীর মেয়ের হাত কাটা যাবে, কয়েদী হবে। এমন অবস্থা মানবাধিকার পরিপন্থী। এ বিষয়ে কুরআনুল হাকীম এর ঘোষণা,
  وانزل معهم الكتاب والميزان ليقوم الناس بالقسط -                      
ولا يجرمنكم شنئان قوم علي الا تعدلوا اعدلو هو اقرب للتقوي -                                


প্রতিভা বিকাশ ও শিক্ষার অধিকারঃ

       ইসলাম সকল স্তরের মানব সমাজের ওপর জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাগ্রহণ বাধ্যতামূলক করে মানবাধিকারকে সমুন্নত করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার যোগ্যতা ও প্রতিভা স্বাধীন ভাবে বিকাশ করার অধিকার দিয়েছে। রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন,
 يرفع الله الذين أمنوا منكم والذين اوتوا العلم درجات-                                
 واما بنعمة ربك فحدث-                                         
 ثم لتسئلن يومئذ عن النعيم-                                                              


শ্রমিকের অধিকারঃ

          ইসলাম শ্রমিকের অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সোচ্চার। শ্রমিক যেন তার যথাযথ প্রাপ্য যথাসময়ে পেয়ে যায় সে ব্যাপারে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন, শ্রমিককে তার ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার পাওনা বুঝিয়ে দাও। 


মৃত্যুর পরেও মানবাধিকারঃ

        কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার কাফনদাফন, অসিয়ত পূরণ ও ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে ইসলাম খুব গুরুত্ব দিয়েছে। আর মৃত্যু ব্যক্তি রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টনের পদ্ধতিও কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট। ইরশাদে ইলাহী
 ولكم نصف ما ترك وازاجكم ان لم يكن لهن ولد فان كان لهن ولد فلكم الربع مما تركنا من بعد وصية يوصين بها اودين -                                                           

মানবাধিকার করুণা নয় অপরিহার্যঃ

            মানবাধিকার সম্পর্কে সর্বশেষ কথা হচ্ছে এ যে, এগুলো কেউ কাউকে দান করে না। কারও কৃপা বা করুণার উপর এগুলো প্রাপ্তি নির্ভরশীল নয়। মানুষ মানুষ হিসাবে রয়েছে বলেই এসব অধিকার তার প্রাপ্য রয়েছে। মানুষের জীবন মৃত্যু যেমন মানুষ থেকে অবিচ্ছেদ্য, তেমনি এই অধিকারগুলো অপরিহার্য এবং অবিচ্ছেদ্য। 
সুতরাং,আসুন যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করেন, মৃত্যু যমিনকে সবুজ সুন্দর ও জীবন্ত লিলাভূমিতে পরিণত করেন, মানুষের সুখ শান্তির যাবতীয় ব্যস্থাপনা যার হাতে তিনি মানব সমাজের সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণ মানবাধিকারে প্রদান করতে সক্ষম। আর মানবাধিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে নারী অধিকার। শুধু বাহ্যিক ভাবে নয়, নারীর অধিকার নিয়ে গভীরভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখুন, ইসলাম নারীকে যে সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ তার বিন্দু মাত্র ও দেয় নি। বর্তমান যুগেও যদি সর্বকালের শ্রেষ্ঠমানব রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শের অনুসরণে আমাদের সার্বিক জীবন ব্যবস্থাকে সাজানো হয় তবেই সাফল্য সুনিশ্চিত।  

প্রতিবেশীর হক




               প্রতিবেশীর ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, নিকটতম প্রতিবেশীদের সাথে এবং দুরবর্তী প্রতিবেশীদের সাথে (সদ্বব্যবহার কর) এ আয়াতের প্রেক্ষিতে হযরত হাসান বসরী রহ.কে কেউ জিজ্ঞেস করল যে, কতদূর পর্যন্ত প্রতিবেশী ধর্তব্য হবে? তিনি জবাব দিলেন সামনের দিকে চল্লিশ ঘর, পিছনের দিকে চল্লিশ ঘর, ডান দিকে চল্লিশ ঘর, এবং বামদিকে চল্লিশ ঘর। হযরত আয়শা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার দুই প্রতিবেশী আছে, প্রথমে কার খোঁজ খবর নিব? রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যার দরজা তোমর দরজার বেশি নিকটবর্তী। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, নিকটতম প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে । আর দূরবর্তী প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। 

             নওফ শামী রহ. থেকে বর্ণিত আছে যে নিকটতম প্রতিবেশী হল মুসলমান প্রতিবেশী। আর দুরবর্তী প্রতিবেশী হল ইহুদী, নাসারা বা অমুসলিম প্রতিবেশী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে তার উচিত যে, সে কোন ভাবে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিবে না। বহু রিওয়ায়াতে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে অনেক বেশী তাগিদ করা হয়েছে। 
     
          এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা কি জান! প্রতিবেশীর হক কী? তা হচ্ছে যদি প্রতিবেশী সাহায্য চায় তাকে সাহায্য কর, যদি কর্জ চায় তাকে কর্জ দাও, যদি সে মুখাপেক্ষী হয় তার সহযোগিতা কর, যদি অসুস্থ হয় তার সেবা কর, যদি সে মারা যায় তার জানাযার সাথে যাও। যদি কোন ব্যাপারে সে আনন্দ লাভ করে তবে তাকে মুবারকবাদ দাও। যদি সে মুসীবতে পতিত হয় তাকে সান্তনা দাও। তার অনুমতি ব্যতীত তার বাড়ির পাশে নিজের বাড়ি এতটা উঁচু কর না যাতে তার হাওয়া-বাতাস বন্ধ হয়ে যায়। তুমি কোন ফল কিনলে তাকে তা থেকে হাদিয়া এবং উপহার স্বরূপ দাও। তা যদি না পার তবে ফল গোপনে ঘরে নিয়ে আস যাতে সে দেখতে না পায়। আবার তোমার সন্তানরাও যেন ফলসহ বাহির না হয় যাতে প্রতিবেশীর সন্তানরা তা দেখে কষ্ট না পায়। তেমনি ভাবে তোমার ঘরের ধোঁয়া দিয়ে প্রতিবেশীকে কষ্ট দিও না। হ্যাঁ, যদি পাকানো বস্তুর অংশ তাকে দাও তবে ভিন্ন কথা। 

             হযরত ইবনে উমর রা. ও আয়শা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত জিবরাঈল আ. আমাকে প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে এত বেশি তাগিদ করতে থাকলেন যে, তার বারংবার তাগিদের দরুণ আমার ধারণা জন্মেছিল যে, প্রতিবেশীকে বুঝি ওয়ারিস বনিয়ে দেওয়া হবে।

              উল্লেখিত হাদীসসমূহে প্রতিবেশীর হকের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাগিদ দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা অনেকেই প্রতিবেশীর হকের প্রতি খুবই উদাসীন। এজন্য পরকালে জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমাদের সাবধান হওয়া এবং সংশোধন হওয়া কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই হাদীসের উপর আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। 

নির্লজ্জতাই পতনের মূল



    হে লোক সকল, লজ্জাবোধ মনবতার ভূষণ ও বৈশিষ্ট, লজ্জাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠিত করে মর্যাদার শিখরে। আর লাজ-লজ্জার পতনে মানুষ তার চিরসম্মানীত মর্যাদার আসন থেকে ছিটকে পড়ে। মানুষ নেমে আসে বন্য প্রাণীর কাতারে। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “হায়া” তথা লজ্জার গুরুত্বের কথা বুঝাতে গিয়ে ইরশাদ করেন,
             ان لكل دين خلقا وخلق الاسلام الحياء           
প্রত্যেক ধর্মে কিছু স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্টপূর্ণ চরিত্র থাকে। ইসলামের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল লজ্জাবোধ। যার হৃদয়ে এ বোধ ও বিশ্বাস আছে সে অন্তত মানুষের সামনে অপরাধ করতে পারে না। আর এই লজ্জাবোধ যখন হারিয়ে যায় তখন আর মনুষ্যত্ব ও পশুত্বের মাঝে কোন পার্থক্য থাকে না। এ মর্মে প্রসিদ্ধ হাদীস হল اذا فاتك الحياء فافعل ماشئت   যখন তোমার থেকে লজ্জা  বিদায় নেবে তখন যা খুশি তাই করতে শুরু করবে। 
         চক্ষু লজ্জায় হলেও অন্যায় অপরাধ থেকে নিজেকে রক্ষা করা নিঃসন্দেহে উত্তম চরিত্রের পরিচয়। কিন্তু একজন মুমিন বান্দার জন্যে কি এতটুকু চরিত্রই কাম্য? কারণ ঈমানের সূচনাই তো হল অদৃশ্যের বিশ্বাস থেকে। কেউ থাকলে তার ভয়ে পাপ থেকে বিরত থাকবে। আর না থাকলে পাপে ডুবে যাবে একি কোন মুমিনের বৈশিষ্ট্য? আর মুমিন তো সর্বদাই অদৃশ্য জগতের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আল্লাহ ও রাসূল, পরকাল ও বেহেস্তের প্রতি থাকে তার সার্বক্ষণিক চিন্তা- চেতনা, ধ্যান-ধারণা। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 
 استحيوا من الله حق الحياء-   তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাসাধ্য লজ্জাশীল হও। এটাই হচ্ছে প্রকৃত লজ্জা। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথার পরিপেক্ষিতে আমরা বললাম,
 انا نستحيي من الله يارسول الله والحمد لله  হে রাসূল! আলহামদুলিল্লাহ। অবশ্যই আমরা আল্লাহকে লজ্জা করি। একথার জবাবে তিনি বললেন, লজ্জা বলতে শুধু এতটুকু যথেষ্ট নয়। আল্লাহকে পূর্ণ রূপে লজ্জা করার অর্থ হল,  মাথা ও মাথার সাথে সংশ্লিষ্ট চিন্তা ভাবনাকে অন্যায় অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। উদর ও উদরের চাহিদাকে রক্ষা করবে। মৃত্যু ও পরকালকে স্বরণ করবে। যে পরকাল প্রার্থী হবে সে দুনিয়ার রঙ তামাশা পরিহার করবে। আর পরকালকে প্রাধান্য দিবে দুনিয়ার উপর। যে ব্যাক্তি এ বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ মাত্রা যত্নবান সেই মূলতঃ আল্লাহকে যথাযথ ভয় করেছে। এ কথা এখন আর খুলে বলার অপেক্ষা রাখে না। 

           আধুনিকতার নগ্ন দোলায় আন্দোলিত পৃথিবীর পিঠ থেকে লজ্জার সম্মানীত ভূষণ হারিয়ে গিয়েছে বহু দিন আগে। নগ্নতা, বেহায়াপনা, ও নির্লজ্জতায় ভরা জগতে এখন আমাদের বসবাস বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমাদের কথিত শিক্ষিত সভ্য ও বুদ্ধিজীবী সমাজ নির্লজ্জতার এই বিশাল বিজয়ে তৃপ্ত আনন্দিত উল্লাসিত। চক্ষু লজ্জা বলতে যৎসামান্য লজ্জাবোধ মানুষের ক্ষুদ্র একটি শ্রেণীর মাঝে আজও বেঁচে আছে। সেটাকেও তাড়ানোর জন্য তাদের ফন্দি ফিকিরের শেষ নেই। ধর্মকে অন্ধত্ব, গোড়ামী, মূর্খতা এবং শেকেলে চন্তা আর ধর্মহীনতাকে প্রগতি উন্নতি, উদারতা, নিষ্ঠা ও আধুনিকতা বলে জল ঘোলা করতে অবিরাম চক্রান্ত করে যাচ্ছে এই দিকহারা ঘুঘুরা। আজ গভীর ভাবে বিচার করার সময় এসেছে। মতলব বাজ এই ঘুঘুরা আমাদেরকে কি দিয়েছে? নির্লজ্জতার পঙ্খিরাজে চড়ে যে উড়ছি, এ উড়ার শেষ কোথায় ? তাই আজ বলতে চাই, এই নির্লজ্জত যে আমাদের কিছু দেয় নি তা নয়। যা দিয়েছে সে দানের ফিরিস্তিও কম নয়। এই নির্লজ্জতার উষ্ণ পরশে আল্লাহর দেয়া চির কল্যাণের পথ ছেড়ে শয়তানের পথের পথিকের সংখ্যা বেড়েছে। ধর্ম ও সভ্যতা বিরোধী চিন্তা-চেতনা বেড়েছে। 

         আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের অন্তরালে নাস্তিকতার অনুশীলন, সাহিত্য-সাংস্কৃতির মাঝে নষ্টামী ও নগ্নতার প্রাচুর্য  সৃষ্টি হয়েছে। সচেতনতা ও উন্নতির নামে কলমের খোঁচায় জাতিকে দেউলিয়া করে নিজের পকেট ভারি করার পথ প্রসারিত হয়েছে। বিক্রিত মস্তিষ্কের নির্লজ্জ কামনা পূরণের বেহায়া আবদারের টানে সম্ভ্রমহানী, পরকীয়ার স্ফুর্তি, রমণ ধর্ষণ, খোলা মেলা দালালী আর দিনে দুপুরে রাজপথে গাড়ী থামিয়ে সরকারী পোশাক পড়ে মুক্ত হস্তে ঘুষ গ্রহনের টেকনিক গুলো কালের তাজা আর্ট হিসেবে লাভ করেছে অসামান্য স্বীকৃতি। তাই আজ আমরা জানতে টাই ফ্যাশনের বেলুন ধরতে গিয়ে যে নারীরা যৌন পণ্যের আড়তে উঠল, শোবিজ আর অভিনয়ের পুচ্ছ ধরতে গিয়ে যে আর্ট মাষ্টারের বিশেষ কক্ষে জীবনের বিশেষত্ব খুইয়ে এলো, সুন্দরী প্রতিযোগীতার নেশায় যে নারী নিজেকে অন্যের হাতে রমন পুতুলে পরিণত করল, আর স্বাধীনতার নামে এক স্বামীকে উপেক্ষা করে হাজার বন্ধুর খাহেশের ঘানি টেনে টেনে ক্ষোভে ঘৃণায় নীরবে করল আত্মহত্যা। আল্লাহর প্রতি যদি তাদের সামান্যতম লজ্জাবোধ থাকত তাহলে কি এমন সর্বনাশটা হতো? 
আল্লাহ বলেছেন, ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه   আর যে কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন জীবন পথ-দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে আল্লাহ তা আদৌ গ্রহণ করবেন না। 


     আমাদের সমাজের আধুনিকতাবাদি বুদ্ধিজীবীগণ যতই প্রোপাগান্ডা করুক না কেন, ইসলামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্লজ্জতার পথে যারাই অগ্রসর হয়েছে আধুনিকতা, অগ্রগতি, উন্নতি, আর প্রগতির ছাই দিয়ে তারা তাদের এই নির্লজ্জতার লক্ষ্যকে ঢেকে রাখতে পারে নি। আজ ইউরোপ আমেরিকাসহ কথিত উন্নত বিশ্বের আধুনিকতার আবিষ্কারক শিল্পী, কুশলী, শ্রমিকরা এখন বিবাহ পূর্ব যৌন বন্ধন, কুমারী মাতৃত্বের অবিরাম অভিজ্ঞতা, মোবাইল ইন্টারনেট আর চেটিং পথে অর্জিত বেহিসাব সংসার ভাঙ্গন, সন্তান, সম্পদ ও জীবনের ভয়াল অনিরাপত্তার শাব্দিক চানক্য থেকে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে পালাচ্ছে। আর তাদের পিছন থেকে ধাওয়া করছে অশুভ নির্লজ্জতার শ্রেষ্ঠ উপহার এইড্স। 

          তাই বলি- الحياء شعبة من الايمان  লজ্জা ঈমানের অন্যতম ভূষণ। লজ্জার প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কি পেয়েছ হে কথিত আধুনিক পৃথিবী? পচন ধরেছে সর্বত্র। এখনও সময় আছে ফিরে এসো কাঙ্খীত লজ্জার পথ ধরে পূর্ণাঙ্গ ইসলামের আলোকিত পথে। যে পথ শুধুই সুস্থতা, নিরাপত্তা ও সফলতার। আল্লাহ আমাদের সকলকে সে পথেই পরিচালিত করুন। আমীন। 

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের তাৎপর্য




    নামায একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবীবকে আরশে আযীমে দাওয়াত করে হাদিয়া স্বরূপ দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবুয়াত লাভ করার পর সর্ব প্রথম নামাযের বিধান নাযিল হয়। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব চাওয়া হবে। নামায হল সমস্ত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সমস্যায় পড়লে নামাযে দাড়িয়ে যেতেন। অনুরূপ সাহাবায়ে কেরামকে রা. ও নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায গুরুত্ব সহকারে সময় মত আদায় করে আল্লাহপাক তাকে নিজ জিম্মায় বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। 


পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত হলো যেভাবে-

  ফজরঃ হযরত আদম আলাইহিস সালাম বেহেশতে থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। অবশেষে ফজরের সময় আল্লাহপাক তাঁর দোআ কবুল করেন। এর শুকরিয়া স্বরূপ সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালাম দুই রাকআত নামায পড়েন। 
যোহরঃ হযরত ইব্রাহীম আলইহিস সালাম পর্যায়ক্রমে তারকা, চন্দ্র ও সূর্য দেখার পর যখন বুঝলেন যে, এগুলো প্রকৃত রবের পরিচয় বহনকারী। এ অনুধাবন করতে পেরে যোহরের সময় শুকরিয়া স্বরূপ চার রাকআত নামায আদায় করেন।
আছরঃ হযরত নূহ আলইহিস সালাম যাকে দ্বিতীয় আদম বলা হয় তাঁর সম্প্রদায়কে খোদাদ্রোহীতার কারণে মহাপ্লাবন দিয়ে ধ্বংস করা হয়। চল্লিশ দিন পর পানি শুকিয়ে গেলে আসরের সময় শুকরিয়া স্বরূপ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম চার রাকআত নামায আদায় করেন।
মাগরিবঃ হযরত দাউদ আলাইহিস্সালাম এর দোআ আল্লাহ তাআলা মাগরিবের পূর্বে কবুল করেন। তাই শুকরিয়া আদায় করে তিনি নামায আরম্ভ করলেন। তিন রাকআত পড়ার পর কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। তার পর আর পড়তে পারেন নি। ফলে মাগরিব তিন রাকআত থেকে যায়।
এশাঃ এই নামায সর্বপ্রথম আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছেন। অন্য কোন নবী ইতি পূর্বে এশার নামায আদায় করেননি। 
    
         নামায দুই তিন চার রাকআত হওয়ার হেকমত হলো আল্লাহপাক মানুষকে পঞ্চইন্দ্রিয় দান করেছেন। যেমন ত্বক, নাক, জিহ্বা, চোখ ও কান। এই পঞ্চইন্দ্রিয়ের শুকরিয়া আদায়ের পন্থা স্বরূপ দুই, তিন, চার রাকআত নামায ফরয করা হয়েছে। ত্বক বা চামড়ার মাধ্যমে গরম ও ঠা-া এই দু’টি জিনিস অনুভব করতে পারি। তাই এর শুকরিয়া স্বরূপ ফজরের নামায দুই রাকআত ফরয করা হয়েছে। নাসিকা ঃ মানুষকে চার দিক থেকে সাহায্য করে চার দিকের সুগন্ধি বা দুর্গন্ধ অনুভব করা যায়। এর শুকরিয়া হিসাবে যোহরের নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েছে। জিহ্বার আস্বাদন শক্তির মাধ্যমে আমরা যে কোন খাদ্যের মিষ্টতা, তিক্ততা টক বা লোনা এই চার জিনিস বুঝতে পারি। তাই এর শুকরিয়া স্বরূপ আসরের নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েছে। দৃষ্টি শক্তি দ্বারা আমরা ডানে বামে সামনে তিন দিকে দেখতে পাই। তাই এর শুকরিয়া আদায়ে মাগরিব তিন রাকআত ফরয করা হয়েছে। কান বা শ্রবন শক্তির মাধ্যমে আমরা ডানে বামে সামনে পিছনের সর্ব দিকের আওয়াজ শ্রবণ করে থাকি। এর শুকরিয়া স্বরূপ এশার নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েচে।
    পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকআত সংখ্যা হলো মোট সতের রাকআত। এর সতের রাকআত হওয়ার হেকমত হলো মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মে’রাজের রজনীতে সর্বমোট সতেরটি স্থান ভ্রমন করান। আর উম্মত যেন এই সতেরটি স্থান আধ্যাত্মিক ভাবে সতের রাকআত নামাযের মাধ্যমে অতিক্রম করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। তাই সতের রাকাআত নামায ফরয করা হয়েছে। 

তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা

Saturday, August 23, 2014



           সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি এক স্থানকে অন্য স্থানের উপর, এক সময়কে অন্য সময়ের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যিনি মানব জাতিকে জ্ঞান গড়িমা বুদ্ধি দিয়ে সকল সৃষ্টি কুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি দুনিয়াতে মুয়াল্লিম ও রহমত হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ করেছেন, আমি সৃষ্টিকুলকে মানব জাতির উপকারার্থে সৃজন করেছি এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃজন করেছি। সুতরাং উল্লেখিত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার বুকে মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সেই উদ্দেশ্য হলো মানব জাতি যেন ধ্বংসশীল এই দুনিয়ার বুকে তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদাত করে তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করে তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে। 

             আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে যেই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তা তারা একটি গুণের মাধ্যমে অতি সহজে অর্জন করতে সক্ষম হবে। আর সেই গুণটি হলো তাকওয়া। কারণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করার জন্য তাকওয়া একমাত্র চাবিকাঠি। তাকওয়া শব্দের আসল অর্থ হলো আত্মরক্ষা করা। শরীয়তের পরিভাষায় গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করার অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত হলে এর অনুবাদ করা হয় আল্লাহকে ভয় করা। উদ্দেশ্য আল্লাহর অবাধ্যতা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও ভয় করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ করেন
ومن يّتّق الله يجعلّه مخرجا و يرزقه من حيث لا يحتسب
অর্থাৎ ঃ যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকট ও বিপদ থেকে মুক্তির পথ করে দেন এবং ধারণাতীত রিযিক দান করেন। 

         
আলোচ্য আয়াতে তাকওয়া তথা খোদাভীতির দু’টি কল্যাণ বর্ণিত হয়েছে। 

১. তাকওয়া অবলম্বনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার যাবতীয় সংকট ও বিপদ থেকে এবং পরকালের সব বিপদাপদ থেকে মুক্তির পথ করে দেন। 

২. তাকে এমন জায়গায় থেকে রিযিক দান করেন যা কল্পনাও থাকে না। এখানে রিযিক এর অর্থ- ইহকাল এবং পরকালের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বস্তু। এই আয়াতে মুমিন-মুত্তাকীর জন্য আল্লাহ তাআলা এই ওয়াদা ব্যক্ত করেছেন যে, তিনি তার প্রত্যেক সমস্যা সহজসাধ্য করেন এবং তার অভাব অনটন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এমন পথে তার প্রয়োজনাদি সরবরাহ করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না। 

অন্যত্র কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,
  انّ للمتّقين مفازا   অর্থ্যাৎ- মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সাফল্য। সুতরাং কুরআন পাকের উল্লেখিত আয়াতদ্বয় দ্বারা এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মাছের জীবন রক্ষা করার জন্য যেমন পানির প্রয়োজন তেমনি ভাবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং ইহকাল ও পরকালে সাফল্য অর্জন করার জন্য তাকওয়ার প্রয়োজন। তাই আসুন আমরা সকলেই তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য অর্জন করি। এর জন্য আল্লাহ ওয়ালার কাছে নিজেকে সোপর্দ করে দেই। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমিন।

ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফযিলত




        সমস্ত প্রসংশা ঐ মহান আল্লাহ জন্য যার কুদরতি কব্জায় আমাদের জীবন-মরণ। যিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষা করাকে আমাদের উপর ফরয করেছেন। অঝর ধারায় দরূদ বর্ষিত হোক, ইলমের ঝর্ণাধারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। ইল্মের গুরুত্ব আমলের চেয়ে অনেক বেশি। কেননা ইল্মে আমলের রাস্তাকে সুগম করে। যে জাতি ঐশী  শিক্ষায় যত শিক্ষিত উভয় জগতে সে জাতি তত উন্নত। আর যে জাতি এ শিক্ষা থেকে যত দূরে, তারা উভয় জাহানে সফলতা থেকে দূরে। সুতরাং উক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক যিনি, ইল্মের মালিকও তিনিই। তাই যারা এ সুশিক্ষা থেকে দূরে তারা আপন  প্রতিপালকের পরিচয় থেকেই দূরে। আর একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, মালিক বিহীন যে কোন জিনিসই মূল্যহীন। সেই মহান মালিককে চিনে মূল্যবান হওয়ার জন্য এই এলমে দ্বীন শিক্ষার বিকল্প কোন শিক্ষা নেই। মহান মালিক তাকে চেনার নিমিত্তেই মানব ও দানবকে সৃজন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون  
অর্থ ঃ আমি জ্বিন এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। 

        এ আয়াতে মুফাসসীরীনে কেরাম ليعبدون এর তাফসীর ليعرفون দ্বারা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালার পরিচয় লাভ করার জন্যই তিনি মানব ও দানবকে সৃষ্টি করেছেন। আর তার পরিচয় লাভের জন্য এলমে দ্বীন অপরিহার্য। কেননা এলমে দ্বীন ব্যতিরেকে তার পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। কে না চায় সেই চির সুখের নীড় জান্নাতে প্রবেশ করতে । উপায় হলো ঐ অনাবিল শান্তিময় সুখের ঠিকানার মালিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এ এলেম মহান মালিকের সাথে গভীর ও নিবির সম্পর্ক কায়েম করে দেয় । এলমে দ্বীন এমন এক মহাদৌলত যা দ্বারা মানুষ পরিচয় পায় আপন অস্তিত্বের। খোদার অবাধ্যতা থেকে আত্মসংবরণ করতে সচেষ্ট হয় । কুফরীর অন্ধকার থেকে সংযত হয়ে হেদায়েতের নূরে পথ চলতে শেখে। ধাবিত হয় মন আপন ঠিকানায়। ইলমে দ্বীনের চর্চা বহাল আছে বলেই স্তম্বহীন সুবিশাল এই আসমান স্বস্থানে প্রতিষ্টিত রয়েছে। সূর্য আপন তেজে জ্বলছে, চন্দ্র তার রূপালী কিরণ ধরণী অভিমুখে ঢালছে। তারকারাজি আপন কক্ষপথে মিটিমিটি জ্বলছে। যতদিন থাকবে ইলমে দ্বীনের আলোচনা বহমান, ততদিন থাকবে কায়েম মাথার উপর নীলিমাময় আসমান। একজন ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারী বিয়োগ বেদনায় আসমান জমিন ও তৎসংশ্লিষ্ট সবই কাঁদতে থাকে।

সন্ত্রাসীদের ঘৃণ্য চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন


     ইসলাম ধর্মকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের উপর বিভিন্নভাবে অস্ত্র সন্ত্রাসের পাশা-পাশি তথ্য সন্ত্রাসও চালিয়ে যাচ্ছে।

   ১. অস্ত্র সন্ত্রাসঃ আপনাদের জানা মতে তৎকালীন আমেরিকার জজ ডব্লিউ বুশ গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরী করার অভিযোগে তার সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে ইরাকের উপর হামলা চালায়। ইরাক দখলের পর গদিতে বুশের পুতুল সরকার বসায়। ইরাকের প্রেসিডেণ্ট সাদ্দামকে হোসেনকে ঈদের দিন সকালে ফাঁসি দেয়। এরপর যখন বুশ গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রমাণ করতে পারল না তখন বিশ্বের বিবেকবানদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসতে লাগল যে, কোন অপরাধে ইরাকের উপর হামলা হয়েছে তা জানাতে হবে। 

      যখন কোন নিষিদ্ধ অস্ত্রের প্রমাণ দেখাতে পারল না তখন তাদের একথার জওয়াব দিতে না পেড়ে ইরাকের হামলাটাকে বৈধ করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র করল। তাহল ২০০৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি সমিতি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস শিরোনামে ঢাকায় একটি সেমিনার করে। সেখানে প্রধান বক্তা হিসাবে প্রফেসর হেন্সকে আমন্ত্রণ করে আনা হয়। বাংলাদেশের প্রায় চৌদ্দ কোটি মুসলমানের রাজধানী ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে সে বক্তৃতা দেয় যে, ইসলাম সূচনা কাল থেকেই সন্ত্রাস লালন করে আসছে। ইসলামের নবী নিজেই জঙ্গী (নাউজু বিল্লাহ)। হেন্সের বক্তৃতায় যারাই ইসলাম ধর্ম পালন করে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যারাই রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করে চাই তাদের দাড়ি টুপি থাক বা না থাক তারা সবাই সন্ত্রাসী। এর প্রমাণ স্বরূপ হেনস বলে যে , ইসলামের সর্বশেষ নবী যদি জঙ্গীই না হতেন তাহলে ৬৬টি যুদ্ধ কেন পরিচালনা করেছিলেন? অথচ ইতিহাস খুললে অতি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো সন্ত্রাস করেন নি। বরং সন্ত্রাস দমন করেছেন। আর ৬৬টি যুদ্ধ ছিল সন্ত্রাস দমন করার জন্য। এ ব্যপারে আলোচনা করলে তা একটি বিশাল পুস্তিকার রূপ ধারণ করবে। তাই ৬৬টি যুদ্ধের সর্ব প্রথমটির ব্যপারে সামান্য কিছু আলোচনা করছি। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০বছর বয়সের পর যখন বলতে লাগলেন
يا ايها الناس قولوا لا اله الا الله تفلحون-
হে লোক সকল! لا اله الا الله স্বীকার কর। তোমরা সফলকাম হয়ে যাবে।
     
       তখন থেকেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আরম্ভ হল সন্ত্রাসী হামলা আর নির্যাতন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য বাজারে যেতেন তখন মক্কার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু জেহেল নিজ চেলা-চামু-াদেরকে নিয়ে বাজারের মানুষদেরকে বলত, শোন মুহাম্মদ পাগল (নাউজুবিল্লাহ)। তার কথা তোমরা শুনবেনা। কিন্তু যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিতেই থাকেন তখন আবু জেহেল নিজের দলবল নিয়ে নবীজীর শরীর মোবারকে থুথু নিক্ষেপ করে শরীর ভিজিয়ে ফেলত। তার পর সেই ভিজা শরীরে রাস্তার বালু নিক্ষেপ করত। এরপরও যখন নবীজীকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরাতে পারত না তখন রাস্তার ধারালো পাথর নবীজীর গায়ে নিক্ষেপ করে সারা শরীরকে রক্তে রঞ্জিত করে ফেলত (নাঊজুবিল্লাহ)। এর পরেও যখন কাজ হল না তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গলায় গামছা বেঁধে রাস্তার অলি-গলিতে নবীজীকে টানা হেছড়া করত। এই হল ইসলামের সূচনাকালের মর্মান্তিক ইতিহাস।
                                                                                                                                                                        এ রকমের অমানুষিক সন্ত্রাসী হামলা সহ্য করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ ১৩টি বৎসর পর্যন্ত মক্কাবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। যার ফলে মক্কার কয়েক জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত খাব্বাব রা.। তাকে ইসলাম গ্রহণ করার অপরাধে আগুনের জ্বলন্ত অংগাারের উপর চিৎকরে শোয়ায়ে রাখা হত। যার ফলে তার চামড়া পুড়ে চর্বি গলে আগুন নিভে যেত। অনুরূপ হযরত বেলাল রা. এর সাথেও করা হত। এমন কি বৃদ্ধা মহিলা হযরত সুমাইয়া রা.কে ইসলাম গ্রহণের অপরাধে আবু জেহেল বর্ষা হাতে নিয়ে তার লজ্জাস্থানে আঘাত করে শহীদ করে ছিল। দীর্ঘ ১৩বছর সন্ত্রাসী হামলা সহ্য করার পর আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলেন, হে মুহাম্মদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আপনার নিরিহ নির্যাতিত অনুসারীদেরকে নিয়ে হিজরত করুন। তখন তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিজ্ঞা করল যে, তাদেরকে সেখানেও শান্তিতে বসবাস করতে দিবে না। তাই হিজরতের দু’বছর পর মক্কার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু জেহেল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত, অশ্বারোহী ১০০০জনের এক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মদীনায় হামলা করার জন্য রওনা হল। তারা ২২০মাইল অতিক্রম করে চলে আসল। এবার আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলেন যে, আর সন্ত্রাস সহ্য নয়। এবার সন্ত্রাস দমন করার জন্য বের হয়ে যান। কারণ ১৩টি বছর পর্যন্ত সন্ত্রাস সহ্য করেছেন। এখনো যদি সন্ত্রাস সহ্য করতে করতে দুনিয়া থেকে চলে যান তাহলে পৃথিবীটাকে সন্ত্রাস মুক্ত করে গড়ে তুলবে কে? এই নির্দেশ পেয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নিরীহ প্রায় নিরস্ত্র ও পদাতিক ৩১৩জন সাহাবীদেরকে নিয়ে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার জন্য বের হলেন।
     অতঃপর মদীনা থেকে ৮০মাইল দুরে বদরের প্রান্তে মুখোমুখী হয়ে যান। আল্লাহ পাকের সাহায্যে মুসলমানের হাতে ৭০জন সন্ত্রাসী নিহত হল এবং ৭০জন বন্দী হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বন্দীদেরকে পাহাড়া দেয়ার জন্য যে সমস্ত মুসলমানকে নিযুক্ত করেছিলেন তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন যে, এদের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এরা তোমাদের মেহমান। সুবহানাল্লাহ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বন্দীদেরকে মেহমান বলার কারণে তারা তাদেরকে গোস্ত রুটি খেতে দিতেন। আর নিজেরা প্রত্যেকেই একটা/দুইটি খেজুর খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। দেখুন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বড় দয়ালু মহামানব! খোদার কসম, গোটা সৃষ্টি জগতে তাঁর চেয়ে বড় উদার মহামানব নেই। 
         বর্তমানে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ইতিহাস দেখুন যে, তারা কেমন নির্দয়, নিষ্ঠুর। একটি নিরপেক্ষ সূত্রে জানা যায় যে, ২০০৩সালের মার্চে ইরাকে আগ্রাসী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২০০৪অক্টোবর পর্যন্ত ১৯ মাস সময়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর আগ্রাসী হামলায় লক্ষাধিক ইরাকী নিহত হয়েছে। ইরাকের কারাগারগুলোতে সন্দেহ ও অজ্ঞতাবশত ধরে এনে আটক করা হয় নিরীহ বেসামরিক নারী-পুরুষদেরকে। অকারণে তাদের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পাশাপশি উলঙ্গ করে রাখা হয় বন্দীদের। কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়। লজ্জস্থানে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রেখে কিংবা ভারি বাক্স মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে নির্যাতন চালায় তারা। 

          গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ সেনারা কেনিয়ার প্রায় দশ হাজার নাগরিককে জবাই করে হত্যা করে। ষাটের দশকে আমেরিকানরা ভিয়েতনামের জনগণকে বলত, মানব উকুন। সেখানে তারা লোমহর্ষক অত্যাচার ও হত্যাকা- চালায়। চালায় নারী ও শিশুদের উপর যৌননিপীড়ন। বোমার আঘাতে পঙ্গু করে দেয় হাজার হাজার জনগণকে। সেখানে তারা মহিলাদের গণধর্ষণ শেষে স্তন কর্তন করে উল্লাস করে। এক নির্যাতিতা ইরাকী মুসলিম বোনের ইজ্জতের উপর যে লোমর্ষক বর্বর নির্যাতন চালায় তা তিনি হৃদয়ের আবেগ দিয়ে আবুগারীব বন্দিশালা থেকে উদাসীন তমসাচ্ছন্ন মুসলিম উম্মাহর নামে ১০মে ২০০৪ তারিখে একটি পত্র লেখেন, যার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হল।
         প্রিয় ভাই-বোনেরা! আমি নূর। নিরপরাধ বন্দী এক তরুণী। তোমাদের বোন খুনের কালিতে লিখছে তার মিনতি। আবুগারীব বন্দীশালায় নির্যাতিতা মা-বোনদের দুঃখের কথা। আমাদের উপর যে নির্মম অমানবিক জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আমাদের পবিত্র আচল, মর্যাদার চাদর আজ ছিন্নভিন্ন। আমরা আমেরিকার ক্রুসেডের শূলে ঝুলন্ত। তারা আমাদের এত অসহনীয় ও অকল্পনীয় শারীরিক নির্যাতন করছে যার ফলে আমরা ক্ষত-বিক্ষত। প্রতি রাতে আমেরিকার শয়তানগুলো আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইজ্জত লুন্ঠন করছে। আমাদের ইজ্জত ধুলোয় মিশে গেছে। মৃত্যুর জন্য আমরা বিলাপ করছি। হায়! মৃত্যু আসতে বিলম্ব করছে! হে শান্তিময় মুক্ত আবহাওয়ায় বসবাসকারীগণ! তোমরা যখন আয়েশী জীবনে বিলাসী খানায় মশগুল। রুচিকর সুস্বাদু বাহারী খাবার নিয়ে যখন তোমরা আনন্দে লিপ্ত তখন তোমাদের মা-বোন এক মুঠ খাবারের জন্য কাতর। তারা ক্ষুধার্ত, পিপাষার্ত। তোমরা যখন শীতল পানীয় পানে ব্যস্ত, তখন তোমাদের মা-বোন এক ফোঁটা পানি থেকেও বঞ্চিত। তোমরা যখন নরম তুল তুলে ঝকঝকে আরামদায়ক শয্যায় শায়িত, তখন তোমার বোন কণ্টকযুক্ত বিছানার অপেক্ষায় অপেক্ষমান। বন্দীশালায় আমরা পরস্পরে জিজ্ঞাসা করি, আমাদের স্বজাতীয় বীর ভাইয়েরা কোথায়? প্রতিদিন জিন্দানখানার অন্ধকারময় পরিবেশে জানালার ফাঁক দিয়ে অপেক্ষা করি। এইতো আমাদের ভাইয়েরা আসছে। তারা আমাদের শিকল পড়া হাত-পা থেকে বাধন খুলে দিচ্ছে। এই তো তারা আমাদেরকে শোনাচ্ছে, মা ও বোনেরা! যাও। তোমরা মুক্ত স্বাধীন। আমরা প্রতিদিন মরুভূমির তপ্ত পথে নির্জন বিয়াবানের পথ চেয়ে অপেক্ষা করি। এইতো আসছে যুগরে মুহাম্মদ বিন কাসেম। না! আমাদের অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। দুঃখের দীর্ঘ সময় আর কাটে না। নাহ! কেউ আর আসছে না। কেউ নেই আমাদের আওয়াজ শোনার। মুসলিম উম্মাহ! তোমরা আমাদের চিৎকার শোন! আমাদের আর্তনাদে সাড়া দাও।
       মুসলিম ভাইয়েরা! আমরাও ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত। আমরাও মুসলিম। তোমরা আমার মিনতি শোন। আমরা আমাদের গর্ভে কাফিরদের সন্তান ধারণ করতে পারব না। কি হবে বেঁচে থেকে?
 

             পত্রটি ১০ই মে ২০০৪ সনে আল বসরা ওয়েব সাইটে আরবী ভাষায় প্রকাশিত হয়। ইহুদী-খ্রীষ্টানরা এরকম হাজারো নির্যাতন মুসলমানদের উপর চালিয়ে যাচ্ছে। চালাচ্ছে হিংস্রতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-। এর কারণ হল তাদের ধর্ম বিশ্বাসই তাদেরকে এসব করতে উদ্বুদ্ধ করে। এর একটি প্রমাণ হল, কুরআনের আলোকে বেহেস্তে যাওয়ার পথ নামক বইটিতে খ্রীষ্টানরা লিখেছে, “সব মানুষের আদি পিতা আদম আ. প্রথম মানুষ প্রথম পাপীষ্ঠ”। কাজেই এই পাপীষ্ঠ আদমের ঘরে যত নবী জন্মগ্রহণ করেছেন সব নবীই পাপীষ্ঠের ঘরের পাপীষ্ঠ। তাই আল্লাহ তাআালা একজন নবীকে পাপমুক্ত করে নিজেই পিতা হয়ে জন্ম দিলেন। আর সেই নবীর নাম হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। যেহেতু তিনি ছাড়া সবাই পাপীষ্ঠ তাই তিনি তার পিতা আল্লাহর কাছে আবদার করলেন, তুমি আমার শত্রুদেরকে সুযোগ দাও তারা যেন আমাকে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করে। তাতে আমার যে কষ্ট হবে, সে কষ্ট কিয়ামত পর্যন্ত আগত-অনাগত ঐ সব মানুষের জন্য অগ্রীম কাফ্ফারা হবে। যারা আমাকে তোমার পুত্র বলে স্বীকার করবে ও বিশ্বাস করবে। তখন পিতা তাঁর পুত্রের এই দরখাস্ত মঞ্জুর করলেন” সুতরাং তাদের ধর্ম বিশ্বাস মতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত যত অপরাধ করবে, জীবনে যত সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতী, ব্যভিচার, যা কিছুই করবে সব আগেই মাফ হয়ে গেছে। সুতরাং খ্রীষ্টানদেরকে তাদের ধর্ম বিশ্বাসই সন্ত্রাসী বানায়, সন্ত্রাস শিক্ষা দেয়।
           কিন্তু ইসলাম ধর্ম মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হতে দেয় না। ইসলামের বিধানে কারো বিরুদ্ধে ন্যায়সংগতভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না দিয়ে গোপনে হামলা করে নিরীহ মানষ হত্যা করা হারাম। সুতরাং শেখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই যে সমস্ত কর্মকান্ড করেছিল তা ছিল ইহুদী-খ্রীষ্টানদের দালাল হিসেবে। যাতে বুশ এবং প্রফেসর হেনস বিশ্বের মানুষের কাছে প্রমাণ করতে পারে যে, এই দেখ ! মুসলমানেরাই সন্ত্রাসী। আরো কিছু নামধারী মুসলমান এমনও আছে যারা বলে যে কওমী মাদ্রসায় শুধু বোমা বানানো শিখানো হয়। এর প্রমাণ স্বরূপ শেখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইকে পেশ করে থাকে। অথচ তারা কোন কওমী মাদ্রাসায় পড়ে নাই। বরং বোমাবাজ ডঃ আসাদুল্লাহ গালিব ছিল ভার্সিটির প্রফেসর। অতএব, ভার্সিটি বন্ধ না করে মাদ্রসা বন্ধ করতে বলা এটা নিঃসন্দেহে তথ্য সন্ত্রাস এবং ইহুদী- খ্রীষ্টানদের দালালী।
সবাই জানে যে, আফগানিস্থানে ইসলামী হুকুমত কায়েম হওয়ার পর ঐ দেশটিই ছিল সঠিক অর্থে পৃথিবীর একমাত্র স্বাধীন মুসলিম দেশ। তারা কারো বশ্যতা স্বীকার করে নি। তাই আফগানিস্তানে যদি ইসলামী হুকুমতের শিকড় মজবুত হত তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্ব বিজয়ী সাহাবাগণের ইতিহাস রচনা করত। কারণ এটাই হত সমস্ত মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র। এ কারণে চক্রান্তের বিজ্ঞ নায়করা কালক্ষেপণ না করে নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার নাটকটি সাজিয়েছে। এর কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ  যুদ্ধবাজ মিস্টার ডিকচেনি বলেছেন বিন লাদেনকে গ্রেফ্তার করে তাকে বিচারের কাঠ গড়ায় হাজির করতে হবে। তবে এর যথেষ্ট প্রমাণ বা অজুহাত আমাদের হাতে নাই। আর এদিকে টুইন টাওয়ারটি তো এমনিতেই কিছুদিন পর ধ্বংস করা হত। কারণ এর মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। তাই এমন একটি নাটক সাজানো হয় যাতে টুইন টাওয়ারটি মুসলমানদের টাকায় পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করা হয় এবং বিন লাদেনকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ মিলে। আর পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের পরিচয় এভাবে দেয়া হয় যে, মুসলমানরা মূর্খ, অসভ্য, বর্বর, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, লম্পট, ব্যভিচারী, ইত্যকার যত অসৎগুণ আছে তা মুসলমানদের সাথে যুক্ত করা হয় । তাদের এ সকল দাবি যে সঠিক এ কথা জনগণকে বুঝানোর জন্য তারা নিজেদের লোকদের দিয়ে টুইন টাওয়ারের নাটকটি বাস্তবায়ন করে। আর দোষ চাপায় মুসলমানদের উপর। তাদেরকে প্রশ্ন করা হল যে, নিরীহ মুসলমানদের উপর জুলুম চালাও কেন? তখন তারা বলে যে, সন্ত্রাস দমন করি। তখন তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা হল যে, মুসলমান ছাড়া আর কোন সন্ত্রাসীজাতি কি পৃথিবীতে নেই? তখন এর জবাব তারা এভাবে দিল যে, মুসলমানদের নবী নিজেই ছিলেন সন্ত্রাসী। অতএব, সন্ত্রাস দমন করতে হলে আগে মুসলমাদেরকেই নিধন করতে হবে। (নাউযু বিল্লাহ)
 
          তারা নিজেরা সন্ত্রাসী হয়ে অন্যদেরকে সন্ত্রাসী বলে কেন? এর রহস্য একটা ঘটনার মাধ্যমে আপনারা সহজে বুঝতে পারবেন। ঘটনাটি হলো ২৬/০৩/২০১১ তারিখে ঢাকা, দোহার এলাকার নারিশা পশ্চিমচর গ্রামে জয়নুদ্দিন হাওলাদারের বাড়িতে ডাকাতরা ডাকাতি করে পালিয়ে যাবার সময় যখন দেখল যে, এলাকার চতুর্পাশ থেকে লোকজন তাদেরকে ধরার জন্য ছুটছে। তখন তারা রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি ফন্দি এটে বড় গলায় বলতে লাগল যে, ডাকাত পালিয়ে গেল! ডাকাত পালিয়ে গেল! এ সময় হৈ হট্টগোল করে তারা উধাও হয়ে গেল।
 
            ঘটনাটি বুঝে থাকলে বলুন ডাকাতরা কেন তাদের মুখে বলে যে, ডাকাত পালিয়ে গেল ? সমাজের মানুষ যেন বুঝতে না পারে তারা নিজেরাই ডাকাত। ঠিক তেমনি ভাবে সমাজের শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই সন্ত্রাস দমন করি বলে দাবি করে। সারা বিশ্বের সরল জনতা যেন জানতে না পারে যে, সন্ত্রাস দমনের নামে তারাই বিশ্ব সন্ত্রাসী। তারা যে জিহাদকে সন্ত্রাস বলে আক্ষায়িত করে এর কারণ হল, তারা ভালো করেই জানে যে, মুসলমানরা যদি সংঘবদ্ধ ভাবে জিহাদ করতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মুসলমানেরা আবার ফিরে পাবে তাদের হৃত ঐতিহ্য, গৌরব ও মর্যাদা। অবসান হবে এই পৃথিবী থেকে সব ধরণের পাপাচার, অত্যাচার, অন্যায়-অবিচার। অবসান হবে এই ধরণের সন্ত্রাস শোষণ, নির্যাতন। দুনিয়ায় আবার ফিরে আসবে সাম্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ভ্রাতৃত্ব। আর তখন হবে সম্রাজ্যবাদ সহ পৃথিবীর সকল কায়েমী স্বার্থবাদের মৃত্যু। তাই কি ভাবে দুনিয়া থেকে খোদাই বিধান জিহাদকে চিরতরে উঠিয়ে দেয়া যায় এ জন্যই তারা গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
 
           সারকথা, শেষনবী যেরূপ সন্ত্রাস উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করেছেন আমাদেরও তার অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হন। আমীন।
 
 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like