Pages

গুনাহ বর্জনই আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম

Sunday, August 31, 2014



                 অসংখ্য শুকরিয়া মহান রাব্বুলআলামীনের দরবারে। লাখো কোটি দরূদ ও সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি। পাপ বর্জন মানব জীবনে অতীব জরুরি বিষয়। পাপের পরিণতিতে হাজারো নেকী অর্জন করার পর এক পলকে সমস্ত নেকী ধ্বংস হয়ে যায়। আওলিয়ায়ে কেরাম বলেন, এ ধ্বংস থেকে বাঁচার প্রধান উপায় মাত্র দু’টি ১. নযর হেফাজত করা। ২. যবান হেফাজত করা। এখানে প্রশ্ন জাগে যে, নযর ও যবান ছাড়াও তো অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ দ্বারা গুনাহ সংঘটিত হয়, কিন্তু পাপের ক্ষতি থেকে বাঁচার প্রধান উপায় দু’টি বলা হল কেন? প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে, একজন মানুষ যদি এক মন ওজন বহন করতে পারে তবে তার দশ কেজি বহন করার ব্যাপারে কোন সংশয় থাকে না। অতএব, যে ব্যক্তি নযর ও যবান হেফাজত করতে পারবে সে সহজেই অন্যান্য পাপ থেকে বাঁচতে পারবে। কারণ বর্তমান যামানায় এ দু’টি গুনাহ বর্জন করা সবচেয়ে কঠিন। 

         লোকেরা ভাবে যে, নেক আমল করতে পারলেই সফলকাম হওয়া যাবে। তাই তারা নেক আমল করার প্রতি যত বেশি গুরুত্ব দেয় গুনাহ ছাড়ার প্রতি তত বেশি গুরুত্ব দেয় না। তাদের উদাহরণ এরকম যে, একটি চারা গাছের যদি শিকড় কেটে মাথায় পানিও ঢালা হয় তবে চারা গাছটি অচিরেই মারা যাবে। মাথায় পানি দেয়ার ফলে কোনই উপকার হবে না । সুতরাং চারা গাছে পানি ঢালার উপকার পেতে হলে গাছের মূল শিকড়কে হেফাজত করতে হবে। ঠিক তদ্রুপ কেউ যদি নেক আমল করার পাশাপাশি পাপ বর্জন না করে তবে ধীরে ধীরে তার ঈমান দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হতে  থাকে। সুতরাং নেক আমলের দ্বারা ফায়দা পেতে হলে যাবতীয় পাপ বর্জনের মাধ্যমে ঈমানের চারা গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরি


প্রথম বিষয়ঃ  নযর হিফাযত
                    আল্লাহ পাক নযর হিফাযতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন “হে নবী! আপনি মুমিনগণকে বলুন, তারা যেন তাদের নযর নিম্নগামী করে রাখে।”
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لعن الله الناظروالمنظوراليه অর্থৎ- কুদৃষ্টিকারীর উপর ও যার উপর কুদৃষ্টি করা হয় তার উপর আল্লাহ তাআলার লা’নত। ঈমানদারগণ স্বভাবতই আউলিয়ায়ে কেরামের বদদোআকে ভয় করে। অতএব রাসূলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লামের বদদোআকে আরো বেশি ভয় করা উচিত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের লা’নতকে তার চেয়ে বেশি ভয় করা উচিত। যদি তা করা হয় তবে কেউই কুদৃষ্টি করতে পারে না। 

                আউলিয়ায়ে কেরাম বলেন, কোন মহিলার দিকে তাকানো, তাদের সাথে কথা বলা, বোরকা ও ওড়নার দিকে তাকানো, পায়ের দিকে তাকানো, এমন কি জুতার দিকে তাকানোও একটা মরাত্মক ব্যাধি। কারণ এ তাকানোই তাকে কুপ্রবৃত্তির দিকে ধাবিত করে। যদি দূর থেকে অনুমান হয় যে, কোন মহিলা আসছে তখন উচিৎ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা, অন্যথায় অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা। নতুবা চোখ বন্ধ রাখা। 
             একথা অতীব জরুরি যে, বর্তমান যামানায় দ্বীনদার মুত্তাক্বীগণের জন্য নারী ফেতনার চেয়ে দাড়ি-মোচ বিহীন সুশ্রী বালক তরুণদের ফেতনা অধিক মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক। কারণ হলো, তাদের সাথে পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার পথে বাহ্যিক বাধা কম। তাই শয়তান মানুষকে দ্রুত এ ফেতনায় লিপ্ত করে দেয়। আমরা জানি এ পাপের কারণে কওমে লূতের উপর খোদায়ী গযব নেমে এসেছিল যা পূর্বের কোন উম্মতের উপর আসে নি। 

                   এর কুফল সম্পর্কে হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মওলানা শাহ আশরাফ আলী থানবী র. বলেন, “গায়রে মাহরাম নারী ও সুদর্শন তরুণের সাথে যে কোন ধরণের সম্পর্ক রাখা যেমন, তাদের দিকে দৃষ্টি দেয়া, মনে আনন্দ লাভের জন্য তাদের সাথে কথা বলা, নির্জনে তাদের সাথে বসা, তাদের জন্য সাজ-গোজ করা ও মোলায়েম ভাষায় মিষ্টি সুরে কথা বলা হারাম। এ কুসম্পর্কের কারণে পাপীরা যেভাবে দোযখের আগুনে না মৃত না জীবিত থাকবে। সে ব্যক্তিও এরূপ এক আযাবের মধ্যে থাকবে। এ আযাবে তো সে দুনিয়াতেই পতিত হয়।  যার পরিণামে তার মন ছটফট করতে থাকে। অস্থিরতার আগুনে জ্বলতে থাকে। আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায়। অবশেষে তাকে পাগলা গারদে ভর্তি করতে হয়। আজকাল পাগলা গারদের শতকরা নব্বই ভাগই কুপ্রেম, কুসম্পর্কের রোগী। 

            যদি কোন সুন্দর ও সুশ্রী চেহারার দিকে নযর পড়ে যায় তখন এই খেয়াল করা উচিৎ যে, এরা মরণশীল, পঁচনশীল। এদের লাশ পঁচে বিশ্রী বীভৎস হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে মাসনবী শরীফে বিশ্ববিখ্যাত বুযুর্গ হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী র. বলেন, যখন তুমি মরে পঁচে গলে যাবে, তখন ঐ ব্যক্তিও তোমার দুর্গন্ধে নাক বন্ধ করবে যে তোমার রূপের উপর শতবার জান কোরবান করত। 


দ্বিতীয় বিষয় হলোঃ  যবান হিফাযত
                  এর গুরুত্ব সম্পর্কে কালামে পাকে অনেক আয়াত রয়েছে। যেমন- والذين هم عن اللغومعرضون সুরায় মুমিনের এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের একটি গুণ বর্ণনা করেছেন। তাহল মুমিনগণ অনর্থক কথা থেকে বেঁচে থাকে। অর্থাৎ- তারা মিথ্যা, ফাহেশা, অন্যায় কথা বলে না। এমন কি অনর্থক কথা থেকেও বেঁচে থাকে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন, عن سهل بن سعد رضي الله تعالي عنه قال قال رسول الله صلي الله عليه وسلم من يضمن لي مابين لحييه ومابين رجليه اضمن له الجنة (البخاري)  অর্থাৎ- যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু (জিহ্বা) ও দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থান (লজ্জাস্থান) এর নিরাপদ রাখার জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য বেহেশতের জিম্মাদার হব। তাই জান্নাত পেতে হলে আমাদেরকে উক্ত পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ। নিচে যবানের পাপ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। 

গীবত করা 
     আল্লাহ পাক বলেন, তোমাদের কেউ যেন অন্যের গীবত না করে। তোমদের কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া পছন্দ করে ? (সূরা হুজরাত) সুতরাং, যেভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া অপছন্দ করে  তেমনিভাবে গীবতকেও যেন অপছন্দ করে। কারণ এটাও মৃত ব্যক্তির গোস্ত খাওয়ার সমান। হাদীস শরীফে আছে, গীবতকারীর নেক আমল যার গীবত করা হয় তার আমলনামায় আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে লিখে দেয়া হয় এবং যার গীবত করা হয়েছে তার পাপ গীবতকারীর আমলনামায় লেখা হয়। সধারণতঃ গীবত করা হয় শত্রুদের। নিজেদের নেকিগুলো শত্রুদেরকে দিয়ে তাদের গুনাহগুলো গ্রহণ করা নিছ্ক বোকামী ছাড়া কিছু নয়।  

মিথ্যা বলা
     হাদীস শরীফে আছে, الكذب ام الخطيئة  মিথ্যা সকল পাপের মূল। একটি গাছের মূল (শিকড়) মাটিতে প্রোথিত থাকলে যেভাবে সেই গাছ কা-, পত্র-পল্লবের জন্ম দেয়, ঠিক সেভাবে যার কলবে মিথ্যা বলার ব্যাধি গেঁথে আছে তার দ্বারাও প্রতিনিয়ত বহু পাপ সংঘঠিত হওয়াই স্বাভাবিক। মাওলায়ে করীম আমাদের সকলকে রূহের এ মরণ ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। আমীন

হারাম খাওয়া
      মানুষ যদিও মুখের দ্বারাই হারাম খাদ্য ভক্ষণ করে। কিন্তু তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে সার্বাঙ্গে। অতএব, এ পাপ মুখ নামক অঙ্গের সাথেই জড়িত না। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, لايدخل الجنة جسد غذي بالحرام  অর্থ- হারাম ভক্ষণকারীর শরীর বেহেস্তে প্রবেশ করবে না। 

                     পরিশেষে বলা যায় যে, মানুষ যতই নেক আমল করুক না কেন তার পূর্ণ ফায়দা হবে না, যতক্ষণ না সে যাবতীয় পাপ বর্জন করবে। কারণ শিশির নিচে ছিদ্র থাকলে যেমন ঐ শিশিতে পানি জমা হয় না। অনুরূপ পাপ সংঘটিত হতে থাকলে ঐ ব্যক্তির আমলনামায় আমল জমা থাকে না। আর পাপ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল আউলিয়ায়ে কেরামের কোন একজনের হাতে নিজেকে সম্পূর্ণ সোপর্দ করে তাঁরই পরামর্শে জীবন যাপন করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে আউলিয়ায়ে কেরামের হাতে সম্পূর্ণ সোপর্দ হয়ে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like