সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাদেরকে নিজ কুদরত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন তার নির্দেশ মোতাবেক জিন্দেগী যাপন করে সুরক্ষিত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারি। আমাদের সকলেরই একই আশা, আমরা যেন মৃত্যুর পরই সেই কাক্সিক্ষত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারি। আর সেই কাক্সিক্ষত বেহেস্ত লাভ করতে হলে আমাদের পূর্ণ ঈমানদার হতে হবে। কেননা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন যে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা বেহেস্তে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আর আমি তোমদের মাঝে এমন একটি বিষয় বলে দিচ্ছি সে অনুযায়ী কাজ করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। আর তা হচ্ছে, “তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন কর। পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম দাও।”
তাই আমাদের পূর্ণ ঈমানদার হতে হলে নামায, রোযাা, হজ্ব ও যাকাতের সাথে সাথে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, কালো-সুন্দর, নির্বিচারে সকল মানুষকে ভালবাসা উচিত। হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করে সকলের সাথে সুমধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার যে সকল উপায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলে দিয়েছেন, সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর এবং পরীক্ষিত হল সালামের ব্যাপক প্রচলন করা। তাই আমাদের করণীয় হল, কারো সাথে দেখা হলেই আস্সালামু আলাইকুম বলে তাকে সম্ভাষণ জানানো এবং তার কল্যাণ কামনা করা।
সালাম এমন একটি মহৎ শক্তি যা দিয়ে বিনা রক্তপাতেই শত্রুকে আপন করা যায়। শত্রুতা ভুলিয়ে বন্ধুত্বের মায়াজালে আটকে ফেলা যায়। পরীক্ষা মূলক সালামের আমলটি করে দেখি। যদি আমাদের সহপাঠি, প্রতিবেশী বা খেলার সাথীদের মধ্যে কেউ কারো সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে, শত্রুতা মূলক আচরণ করে, তাহলে সেও যদি তার সাথে শত্রুতা পোষণ কর তাহলে উভয়ের মাঝে শত্রুতা কখনো শেষ হবে না। বরং বেড়েই চলবে দিন দিন। তাছাড়া কোন মানুষকে শত্রু মনে করে অবিরাম তার সাথে শত্রুতা পোষণ করা মানবিক নয়, বরং এটা পাশবিক আচরণ। বনের হিংস্র পশুদের মধ্যে এ স্বভাব থাকে। আমাদের কারো মাঝে এ দোষ থাকা আদৌ উচিৎ নয়। তাই আমরা নিজেদেরকে সংযত করি, ধৈর্য্য ধারণ করি, শত্রুর সাথে দেখা হলেই তাকে সুন্দর ভাবে হাসি মুখে আসসালামু আলাইকুম বলি। হয়তো সে প্রথম কিছু দিন সালামের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে চলবে, তবুও আমরা হতাশ হব না। বরং তাকে সালাম দিতে থাকব। কেননা প্রতিটি সালামের বিনিময়ে আল্লাহর দরবারে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর শত্রুর মনেও কিছুটা পরিবর্তন আসতে থাকবে। এক সময় দেখা যাবে শত্রুই আগে সালাম দিয়ে ফেলবে। এভাবে সালাম আদান প্রদান করার মাধ্যমে শত্রুতার পরিবর্তে নিবিড় ভালবাসা গড়ে উঠবে। আর এভাবে আমরা পরস্পরকে ভালবেসে পূর্ণ ঈমানদার হয়ে প্রিয় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অমূল্য বাণী অনুযায়ী আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারব। ইনশাআল্লাহ।