Pages

ইবাদত সুন্দর করার পদ্ধতি

Sunday, August 31, 2014


    
           প্রত্যেক মুমিনের জন্য রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে ফরয, ওয়াজিব, সুন্নত ও কিছু নফল ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী করতে হয় এবং প্রত্যেকের অন্তর এটা অবশ্যই চায় যে, তার আমল আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হোক। হক্কানী, রব্বানী, সুবিজ্ঞ ও সুক্ষদর্শী উলামায়ে কেরাম কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের আলোকে ইবাদত কবুল হওয়ার ৪টি বিষয় বর্ণনা করে থাকেন। এই সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করা হল। 

          ইবাদত বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এর মধ্যে কিছু ইবাদত রয়েছে যা যবানের দ্বারা সম্পাদিত হয়। যেমন কুরআন মজীদ তেলাওয়াত করা, যিকির-আযকার করা, দোআ-কালাম ও দরূদ শরীফ পড়া। 

এ ধরণের আমল কবুল হতে ৪টি শর্ত রয়েছে। তা হচ্ছে -

১. ইবাদত শুরু করার পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা। 

২. ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা। 
                         
                               ৩. সহীহ্ ও শুদ্ধভাবে করা। 

                              ৪. ধীরস্থিরভাবে করা অর্থৎ তাড়াহুড়া না করা। 


          
         আর কিছু ইবাদত রয়েছে যা তেলাওয়াত জাতীয় নয় অর্থাৎ যা করতে যবানে কিছু উচ্চারণ করতে হয় না। যেমনঃ পর্দা, রোযা, দান-সদকা এবং লোকের সাথে উত্তম ব্যবহার ইত্যাদি। এরূপ আমল কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম দুটি শর্ত প্রযোজ্য। 

               আবার কিছু ইবাদত রয়েছে যাতে যবান সহ অন্যান্য অঙ্গও ব্যবহৃত হয়। যেমন- নামায ও হজ্ব ইত্যাদি। এই সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে উপরে উল্লেখিত ৪টি শর্তই প্রযোজ্য। 
প্রথম ও দ্বিতীয় শর্তের ফায়দা হচ্ছে তা পালন করলে রিয়া বা র্শিক (লোক দেখানো মনোভাব) ও অহঙ্কার থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর রিয়া ও অহঙ্কার ইবাদত কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় বাঁধা। 

      ৩য় শর্তও অতীব জরুরি। কেননা যে কোন ভাষারই একটি পঠনরীতি  থাকে। যার খেলাপ করলে ভাষার শ্রুতিকটু হয়। এমনকি অর্থ পাল্টে যেতে পারে। যেমন- বাংলা ভাষায় ‘বারি’ শব্দের অর্থ হল পানি। আর ‘বাড়ি’ অর্থ মানুষের বসবাসের স্থান। আরবীতে نصر  অর্থ  সাহায্য করা আর نسر অর্থ শকুন। উপরিউক্ত উদাহরণে অক্ষর ও উচ্চারণের ভিন্নতায় অর্থ সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। কাজেই তেলাওয়াত ও দোআকালাম শুদ্ধ করা (কম পক্ষে শুদ্ধ করতে চেষ্টা করতে থাকা) একান্তই আবশ্যক। 
     ৪র্থ শর্ত আমল করলে বাকী তিন শর্ত সহজেই পালন করা সম্ভব অর্থাৎ ধীরে ধীরে তথা শান্তভাবে আমল করলে ইবাদত শুরুর পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির খেয়াল, ইবাদত চলাকালেও তার সন্তুষ্টির খেয়াল এবং ইবাদত শুদ্ধভাবে করা এ সকল শর্ত সহজেই পালিত হবে।


              আর যদি কোন আমল করতে ঐ শর্তগুলো সাধ্যানুযায়ী পালন করার চেষ্টা করা হয় তাহলে আল্লাহ পাকের দরবারে আমল মাকবুল হওয়ার প্রবল আশা করা যায়। হাদীস শরীফে বর্ণীত রয়েছে ঃ اخلص دينك يكفيك العمل القليل অর্থাৎ- তুমি তোমার দ্বীন (ইবাদত)কে খাঁটি কর, অল্প আমলই তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে। 
         উপরে বর্ণিত শর্তের পক্ষে কুরআন ও হাদীস শরীফে অনেক দলিল রয়েছে। নিম্নে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হল । প্রথম শর্তে বলা হয়েছে ইবাদত শুরুর পূর্বে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,  وما امروا الا ليعبدواالله مخلصين له الدينঅর্থ- তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয় নি যে, তারা একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে। অর্থাৎ-  আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে তারা যে ইবাদতই করবে তা যেন খাঁটি হয়। আর খাঁটি নিয়ত ব্যতীত খাঁটি ইবাদত হয় না। সুতরাং এ আয়াতে ইবাদতের ক্ষেত্রে খাঁটি নিয়তের নির্দেশ দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, انماالاعمال بالنيات   অর্থাৎ- আমলের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কাজেই প্রত্যেক ইবাদতের পূর্বেই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টির নিয়ত করা আবশ্যক। দ্বিতীয় শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের দিকে ধ্যান রাখা। 

এ প্রসংঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 
ان تعبدالله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك
অর্থ- তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে কর যে, তুমি যেন তাকে দেখছ। আর যদি তুমি তাকে দেখছ এ ধারণা করতে না পার তাহলে মনে এ ধারণা রাখবে যে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন। হাদীস শরীফের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হল যে, ইবাদত চলাকালীন আল্লাহ পাকের খেয়াল রাখতে হবে। তৃতীয়  শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত সহীহ্ ও শুদ্ধভাবে করতে হবে। এ ব্যপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
رب قارئ للقرأن والقرأن يلعنه
অর্থ- কতিপয় কুরআন পাঠকের উপর কুরআন মজীদ লা’নত করে থাকে।  
অর্থাৎ- যারা ভুল তেলাওয়াত করে তাদের উপর কুরআন শরীফ লা’নত করে। কাজেই প্রত্যেক দোআ, দরূদ এবং তেলাওয়াত (তাজবীদ অনুযায়ী) শুদ্ধভাবে পাঠকরা জরুরি। 


                        চতুর্থ শর্তে বলা হয়েছে, ইবাদত ধীরস্থিরভাবে করা। এ কথা সকলের কাছে সুস্পষ্ট যে, যত সহজ কাজই হোক না কেন তা যদি কেউ তাড়াহুড়ার সাথে করে তাহলে  কম-বেশি ত্রুটি হবেই। আর যদি কোন কঠিন কাজও ধীরস্থিরভাবে করা হয় তাহলে তা নৈপূণ্যতার সাথে নির্ভুলভাবে হওয়ার আশা করা যায়। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,  ورتل القرأن ترتيلا  অর্থাৎ- আপনি ধীরস্থিরতার সাথে স্পষ্টভাবে কুরআন তেলাওয়াত করুন। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, দ্রুত কুরআন তেলাওয়াত করবেন না বরং সহজভাবে এবং ধীরে ধীরে আয়াত শরীফ উচ্চরণ করবেন।অত্র আয়াতে ترتيل  এর শাব্দিক অর্থ হল, সহজ ও সঠিকভাবে বাক্য উচ্চারণ করা। 

                       হযরত হাসান বসরি র. থেকে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে কুরআনের একটি আয়াত পাঠের সময় ক্রন্দন করতে দেখে বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলাورتل القرأن ترتيلا  আয়াত শরীফে যে, তারতীলের আদেশ করেছেন এটাই সেই তারতীল। (কুরতুবী)। এর মাধ্যমে আল্লাহ পাক শিক্ষা দিয়েছেন যে, যেহেতু কুরআন শরীফ তেলাওয়াত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কাজেই তোমরা যখন তেলাওয়াত কর তখন তা খুব মনোযোগের সাথে তেলাওয়াত করবে।

               উপরিউক্ত কুরআন ও হাদীস শরীফের বর্ণনায় একথাই প্রতীয়মান হয় যে, উল্লেখিত শর্তের কোন একটি ব্যতীত নেক আমল সুন্দর হতে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে উল্লেখিত চারটি শর্তের আলোকে নেক আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন। 

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like