Pages

সুন্নতের গুরুত্ব ও ফযীলত

Sunday, August 31, 2014




                 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার দরবারে। দরূদ ও সালাম বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানব নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর মহান সাহাবীগণ এবং তাঁর পরিবারবর্গের উপর। প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রই এ কথার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুম পালন করা এবং এর পাশাপাশি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতের ইত্তিবা ব্যতীত ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির কোন উপায় নেই। কুরআনের সাথে সাথে সুন্নতের অনুসরণও জরুরি। শুধু রাসূলের অনুসরণই নয় বরং মুক্তির জন্য তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং মহব্বত থাকাও আবশ্যক। 

                    অনুসরণ বলতে এমন অনুসরণই উদ্দেশ্য যা হবে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসার ফলশ্রুতি। অর্থাৎ- অন্তরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বত ও ভালবাসা এত অধিক পরিমাণে থাকতে হবে যার ফলে তাঁর অনুসরণে বাধ্য হতে হয়। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকায় যা পালন করা হবে তা-ই আল্লাহ পাকের কাছে ইবাদত হিসেবে কবুল হবে। সুন্নত তরীকা ব্যতীত অন্য যে কোন পন্থায় ইবাদত পালন করা হউক না কেন তা প্রত্যাখ্যাত হবে। মানব জীবনের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের আদর্শ রেখে যান নি। 

            একটি কথা প্রচলিত আছে যে, যার সুন্নত ঠিক তার ওয়াজিবও ঠিক, যার ওয়াজিব ঠিক, তার ফরযও ঠিক। কিন্ত যার সুন্নত ঠিক থাকে না তার ওয়াজিবও ঠিক থাকে না। যার ওয়জিব ঠিক থাকে না তার ফরযও ঠিক থাকে না। আর সুন্নত হলো আল্লাহ পাক পর্যন্ত পৌঁছার সহজ মাধ্যম। যে কোন কাজে সুন্নত সম্মত তরীকার সীমারেখা অতিক্রম করাই বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। 

            নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রকার বেদআতকে কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করেছেন। বুযুর্গানে দ্বীন নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, তিনটি সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার উপর আমল করতে পারলে অন্তরে নূর পয়দা হয়, যার বরকতে অন্যান্য সকল সুন্নতের উপর আমল করা সহজ হয়ে যায় এবং অন্তরে সুন্নতের উপর আমল করার স্পৃহা জাগ্রত হয়।

১. আগে আগে সালাম করা ও সর্বত্র সালামের ব্যাপক প্রসার করা। 
২. প্রত্যেক ভাল কাজ ও ভাল স্থানে ডান দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন মসজিদে ও ঘরে প্রবেশ কালে ডান পা আগে রাখা। পোশাক পরিধানের সময় ডান হাত ও ডান পা আগে প্রবেশ করানো। তাছাড়া তুলনায় প্রত্যেকটি নিম্নমানের কাজ এবং নিম্ন মানের স্থানে বাম দিককে প্রাধান্য দেয়া। যেমন বাথরুমে প্রবেশ কালে বাম পা আগে রাখা, বাম হাতে নাক পরিষ্কার করা, পোশাকের ভিতর হতে বাম হাত ও বাম পা আগে বের করা। 
৩. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা।(সূরা আহযাব:৪১, কান্যুল উম্মাল ১:৪১৪)
যেমন- প্রতিদিন কুরআন থেকে কিছু পরিমাণ তেলাওয়াত করা বা অন্যের তেলাওয়াত শ্রবণ করা। (মেশকাত ১:১৯০)
     

                পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর সুন্নত নামায থাকলে সুন্নতের পরে নতুবা ফরযের পরে ৩ বার ইস্তেগফার, একবার আয়াতুল কুরছী,একবার সূরায়ে ইখলাস, সূরায়ে ফালাক, সূরায়ে নাস, এবং তাছবীহে ফাতেমী অর্থাৎ- ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আল হামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। (তিরমিযী ১:৯৪) 
                  উপরে উঠার সময় আল্লাহু আকবার, নীচে নামার সময় সুবাহানাল্লাহ, সমতল ভূমিতে চলার সময় লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়তে থাকা এবং প্রত্যেক কাজে মাসনুন দোআ পড়া। (দারেকুতনী ২:২৩৩)
    

                      আল্লাহ তাআলার প্রতিটি হুকুমের এত্তেবা তো এ জন্যই করতে হবে যেহেতু তিনি আমাদের প্রভূ। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এত্তেবা এ জন্য জরুরি যেহেতু রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতিটি হুকুম ও নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। অতএব আল্লাহর প্রতিটি হুকুম বাস্তবায়নের জন্যই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণের বিকল্প নেই।

                     মূলত এ কারণেই কুরআনে কারীমের একাধিক স্থানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন।  
  • قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم لله ويغفرلكم ذنوبكم والله غفور الرحيم- قل اطيعوا الله والرسول فان تولوا فان الله لا يحب الكفرين ْ 

অর্থাৎ-  আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবে এবং  তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু। আপনি বলুন! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। বস্তুত যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে তাহলে আল্লাহ কাফেরদেরকে ভালবাসেন না। (সূরায়ে আল ইমরান :৩১,৩২)

  •     অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেন, واطيعوا الله ورسوله ان كنتم مؤمنين অর্থ- তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। (সূরা আনফাল:১)
  • আল্লাহ পাক আরো বলেন, 

ياايها الذين أمنوا اطيعوا الله واطيعوا الرسول ولا تبطلوا اعمالكم            অর্থ ঃ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। আর নিজেদের আমল ধ্বংস করে দিও না। (সূরায়ে মুহাম্মদ:৩৩)
  • আল্লাহ পাক আরো বলেন,

ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما
  অর্থ ঃ যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে। (সূরায়ে আহযাব:৭১)
  •   রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من احب سنتي فقد احبني ومن احبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নত ভালবাসে সে অবশ্যই আমাকে ভালবাসে। আর যে আমকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। অতএব, যে কেউ হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নত নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করবে সে জান্নাতে তাঁর সাথেই থাকবে। 
  • হাদীস শরীফে আরো বর্ণীত হয়েছে,

                                                  المرء مع من احب       
যে যাকে মুহাব্বত করবে সে তার সাথে থাকবে। 
আলোচ্য আয়াতসমূহে আল্লাহ তাআলা স্বীয় ভালবাসার মাপকাঠি বলে দিয়েছেন। কেউ যদি পরম প্রভূর ভালবাসার দাবী করে, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের অনুসরণের কষ্টি পাথরে তা যাছাই করে দেখা উচিত। 

  •      রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من احيي سنتي عند فساد امتي فله اجر مأة شهيد
আমার উম্মতের ফাসাদের সময় যে আমার সুন্নত যিন্দা করবে তার জন্য রয়েছে একশত শহীদের সওয়াব। এখানে সুন্নতের অর্থ একটি সুন্নত যিন্দা করলেও শত শহীদের সওয়াব তাতে কোন সন্দেহ নাই। বর্তমানে অমুসলিমদের পক্ষ থেকে সুন্নত মুছে‎‎ দেয়ার যে গভীর ষড়যন্ত্র চালানো  হচ্ছে তার মোকাবেলায় কেউ যদি ঢাল হয়ে দাড়ায় এবং  জানবাজী রেখে লড়াই করে যায় তাহলে তার জন্য উপরে হাদীসে সুসংবাদ বর্ণিত হয়েছে।
  • রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদীসে বলেন,

من رغب عن سنتي فليس مني
যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার দলভুক্ত নয়। সুন্নত যার থেকে বিদায় নিবে তার মধ্যে অবশ্যই বিদআত দেখা দিবে। 

         সুন্নতের গুরুত্ব যে কতটুকু তা উপরে উল্লেখিত হাদীস শরীফ দ্বারা সহজেই অনুমান করা যায়। সুন্নত মানব জীবনের সফলতার জন্য একটি সহায়ক। যার জীবন সুন্নত তরীকা অনুযায়ী যততুটু সাজানো তার জীবনও তত আরামদায়ক জীবন এবং উন্নত । যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আরামের যিন্দিগী  তালাশ করে তার জন্য সুন্নত আকড়ে ধরা উচিত। সুন্নত ব্যতীত আরামের যিন্দেগী তালাশ করা বোকামী ছাড়া কিছু নয়। আল্লাহ পাক যাদের মঙ্গল ও কল্যাণ চান তাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান এবং সুন্নত তরীকা অনুযায়ী জীবন গড়ার তৌফিক দান করেন। আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেকের জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুর তরীকায় চলার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like