Pages

বিদআত ও তার কুফল

Friday, August 29, 2014



      বিদআত শব্দটি আমাদের সকলের পরিচিত এবং সব জাগায় বিদআত নিয়ে তর্ক-বিতর্কও হয়, তবে বিদআত যে ভ্রষ্ট পথ এ ব্যপারে কারো দ্বিমতনেই। কেননা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, ধর্মের ব্যাপারে সকল নতুন কাজই বিদআত, আর সকল বিদআতই পথভ্রষ্টতা। তাই একজন কট্টর বিদআতী এই কথা স্বীকার করে যে, সকল বিদআতই পথ ভ্রষ্টতা ও জঘণ্য গুনাহ। তবে বিদআত নির্ধারণে কেউ একটা কাজকে বলেন। আবার কেউ ঐ কাজকেই নেকী মনে করেন। তাই বিদআত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমে বিদআত এর সঠিক সংজ্ঞা জানা প্রয়োজন।
        বিদআতের সংজ্ঞাঃ  বিদআতের আভিধানিক অর্থ হল, নতুন বিষয়, নতুন মডেল, নতুন পদ্ধতি, নতুন আবিষ্কার। আর শরীয়তের পভিাষায় বিদআত বলা হয় সওয়াবের উদ্দেশ্যে ধর্মের মধ্যে এমন কাজ বা পদ্ধতি বের করা যা নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে  ছিল না, এমন কি সাহাবা ও তাবেয়ীনের যুগেও ছিল না। তাই সব নতুনকেও বিদআত বলা যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে গাড়ী চলা, বাস, মটর সাইকেল চলা, ঘড়ি ব্যবহার করা এবং চশমা ব্যবহার করা ইত্যাদি ছিল না। এই সবের উপর আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য হলেও পারিভাষিক অর্থে বিদআত বলা যাবে না। কারণ এ সব শরীয়তী বিষয় নয়। আর বিদআত বলা হয় সওয়াবের উদ্দেশ্যে দ্বীন মনে করে কোন আমল করা। এগুলো কেউ সওয়াবের উদ্দেশ্যে দ্বীন হিসাবে করে না। 

          দাফনের পর কবরের কাছে আজান দেওয়া মাকরূহ ও বিদআত। কারণ এই আমল হযরত নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যেমন নেই, তেমনি হযরত সাহাবায়ে কেরাম রা. থেকে, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন থেকেও এর কোন প্রমাণ নেই। অথচ ঐ যামানাতেও কবর দেয়া হত। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হত। আযানের জন্য শরীয়তের একটি নির্দিষ্ট সময় নির্বচন করা আছে। তার সীমা অতিক্রম করা বিদআত বলা হবে। যেমন কুরআনে আছে যে من يتعدي حدود اللة فقد ظلم نفسه  অর্থাৎ- যে আল্লহ তাআলার সীমা অতিক্রম করে , সে নিজের উপর জুলুম করে। ফতাওয়া শামীর মধ্যে আছে যে, আযান নিদিষ্ট সময়ের সাথে সীমাবদ্ধ করার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, দাফন ইত্যাদির সময় আযান দেওয়া সুন্নাত নয় বরং বিদআত।
ইবনে হাজার রহ. তার ফতোয়ায় সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, কবরের উপর আযান দেয়া বিদআত।

       এমন আর একটি বিদআত আমাদের সমাজে চলে আসছে । তাহল ওরসের গোস্ত খাওয়া। এর দলিল স্বরূপ বলা যায়, আল্লাহ কুরআন শরীফে বলেছেন যে, তিনি তেমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব-জন্তু, রক্ত, শূকরের গোস্ত এবং সে সব জীব-জন্তু যা আল্লাহর নাম ব্যতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। এখানে জানা আবশ্যক যে, বুজুর্গ এবং আউলিয়াগণের মাজারে, ভ-দের ওরসে যে সকল জীব-জন্তু জবেহ করা হয় চাই গরু, ছাগল বা মুরগী মূর্খ প্রকৃতির মুসলমানেরা যে মান্নত করে তা مااهل به لغيرالله   এ আয়াতের অন্তরভুক্ত হয়ে সবই হারাম বলে সাব্যস্ত হয়েছে। তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন (১:৪২১ পৃঃ)

        এমনিভাবে মৃত ব্যক্তির দাফনের পর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে ৩য় দিনে এবং ৪০তম দিনে বা মৃত্যু বার্ষিকীতে দোআ ও মীলাদের ব্যবস্থা করা বিদআতের মধ্যে গণ্য। কারণ তা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় ছিল না এবং তাবে তাবিয়ীনের যুগেও ছিল না। এই তিন যামানা যেহেতু শ্রেষ্ঠ এবং এ তিন যামানায় এ সব ছিল না তাই এগুলো বিদআতের মধ্যে গণ্য। 

         এমনি ভাবে আর একটি বিদআত যা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তাহল ঈদে মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করা। আপনিই বলুন যে, নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ৬৩ বছর জীবনের কোন সময়টি এমন রয়েছে যা স্মরনীয় নয়? যার উপর প্রাণ উৎসর্গ করার মত নয়? কিন্তু কখনো কি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, সাফা পর্বতের সেই দিনটি উদ্যাপন কর। মক্কা থেকে হিজরতের দিনটি উদ্যাপন কর। নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জন্মদিন বরকতপূর্ণ ও মহিমান্বিত হওয়ার ব্যপারে কোনই সন্দেহ নাই। কিন্তু যেহেতু এ প্রসঙ্গে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন বর্ণনা নেই এবং সাহাবায়ে কেরামের বিশেষ কোন আমলও এ ব্যপারে প্রমাণিত নেই। বিধায় মনগড়া ভাবে আমাদের এ হৈ-হুল্লোড় নিঃসন্দেহে বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। আমারা কি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনের থেকেও রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি অধিক ভালবাসার দাবীদার? অথচ রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ জন্ম দিন প্রতি বছর তাদের সামনে আসত। তাঁরাতো আদৌ এ ধরণের কোন দিবস উদ্যাপন করেন নি। 


বিদআতীর পরিণতি

       নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম কথা হলো আল্লাহর কালাম অর্থাৎ কুরআন শরীফ। আর সবচেয়ে উত্তম আদর্শ হল মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  আরো বলেন, দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক নতুন কাজ মন্দ এবং প্রত্যেক মন্দ কাজই বিদআত এবং সকল বিদআতই গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা। প্রত্যেক গোমরাহীর ঠিকানা জাহান্নাম। অন্য এক হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ তাআলা বিতআতীর তওবাকেও কবুল করবেন না। কেননা কতিপয় বিদআত এমন রয়েছে যে, যা করলে শিরক হয়ে যায়। তাই যে বিদআত নামের শিরকে লিপ্ত থাকে এবং মুখে তওবা করে তা কখনো কবুল হবে না। কেননা তওবা কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হল, শিরক ও বিদআত পরিত্যাগ করা। 

      একটি হাদীস শরীফে আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ভাষণে বলেন যে, সাবধান! আমার উম্মতের কিছু লোককে ধরে আনা হবে। তাদেরকে দোযখের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রভু! এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, তুমি জান না তোমার পরে এরা কত নতুন কাজ আবিষ্কার করে ছিল! (বুখারী শরীফ ৬৯৩ পৃঃ) অর্থাৎ মনগড়া পদ্ধতিকে ইবাদত হিসাবে চালু করেছিল। বিদআত মূলত এটাই। কাজেই রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াত পেতে এবং পরকালে পূর্ণ কামিয়াবি হাসিল করতে সকল বিদআত হতে মুক্ত থাকা উচিত। 
    
           আল্লাহ আমাদেরকে বিদআতমুক্ত জীবন লাভ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like