Pages

পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের তাৎপর্য

Friday, August 29, 2014




    নামায একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহপাক তার প্রিয় হাবীবকে আরশে আযীমে দাওয়াত করে হাদিয়া স্বরূপ দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নুবুয়াত লাভ করার পর সর্ব প্রথম নামাযের বিধান নাযিল হয়। হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব চাওয়া হবে। নামায হল সমস্ত সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সমস্যায় পড়লে নামাযে দাড়িয়ে যেতেন। অনুরূপ সাহাবায়ে কেরামকে রা. ও নামাযে দাঁড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতেন। কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায গুরুত্ব সহকারে সময় মত আদায় করে আল্লাহপাক তাকে নিজ জিম্মায় বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। 


পাঁচ ওয়াক্ত নামায নির্ধারিত হলো যেভাবে-

  ফজরঃ হযরত আদম আলাইহিস সালাম বেহেশতে থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘদিন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। অবশেষে ফজরের সময় আল্লাহপাক তাঁর দোআ কবুল করেন। এর শুকরিয়া স্বরূপ সর্বপ্রথম আদম আলাইহিস সালাম দুই রাকআত নামায পড়েন। 
যোহরঃ হযরত ইব্রাহীম আলইহিস সালাম পর্যায়ক্রমে তারকা, চন্দ্র ও সূর্য দেখার পর যখন বুঝলেন যে, এগুলো প্রকৃত রবের পরিচয় বহনকারী। এ অনুধাবন করতে পেরে যোহরের সময় শুকরিয়া স্বরূপ চার রাকআত নামায আদায় করেন।
আছরঃ হযরত নূহ আলইহিস সালাম যাকে দ্বিতীয় আদম বলা হয় তাঁর সম্প্রদায়কে খোদাদ্রোহীতার কারণে মহাপ্লাবন দিয়ে ধ্বংস করা হয়। চল্লিশ দিন পর পানি শুকিয়ে গেলে আসরের সময় শুকরিয়া স্বরূপ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম চার রাকআত নামায আদায় করেন।
মাগরিবঃ হযরত দাউদ আলাইহিস্সালাম এর দোআ আল্লাহ তাআলা মাগরিবের পূর্বে কবুল করেন। তাই শুকরিয়া আদায় করে তিনি নামায আরম্ভ করলেন। তিন রাকআত পড়ার পর কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যান। তার পর আর পড়তে পারেন নি। ফলে মাগরিব তিন রাকআত থেকে যায়।
এশাঃ এই নামায সর্বপ্রথম আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছেন। অন্য কোন নবী ইতি পূর্বে এশার নামায আদায় করেননি। 
    
         নামায দুই তিন চার রাকআত হওয়ার হেকমত হলো আল্লাহপাক মানুষকে পঞ্চইন্দ্রিয় দান করেছেন। যেমন ত্বক, নাক, জিহ্বা, চোখ ও কান। এই পঞ্চইন্দ্রিয়ের শুকরিয়া আদায়ের পন্থা স্বরূপ দুই, তিন, চার রাকআত নামায ফরয করা হয়েছে। ত্বক বা চামড়ার মাধ্যমে গরম ও ঠা-া এই দু’টি জিনিস অনুভব করতে পারি। তাই এর শুকরিয়া স্বরূপ ফজরের নামায দুই রাকআত ফরয করা হয়েছে। নাসিকা ঃ মানুষকে চার দিক থেকে সাহায্য করে চার দিকের সুগন্ধি বা দুর্গন্ধ অনুভব করা যায়। এর শুকরিয়া হিসাবে যোহরের নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েছে। জিহ্বার আস্বাদন শক্তির মাধ্যমে আমরা যে কোন খাদ্যের মিষ্টতা, তিক্ততা টক বা লোনা এই চার জিনিস বুঝতে পারি। তাই এর শুকরিয়া স্বরূপ আসরের নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েছে। দৃষ্টি শক্তি দ্বারা আমরা ডানে বামে সামনে তিন দিকে দেখতে পাই। তাই এর শুকরিয়া আদায়ে মাগরিব তিন রাকআত ফরয করা হয়েছে। কান বা শ্রবন শক্তির মাধ্যমে আমরা ডানে বামে সামনে পিছনের সর্ব দিকের আওয়াজ শ্রবণ করে থাকি। এর শুকরিয়া স্বরূপ এশার নামায চার রাকআত ফরয করা হয়েচে।
    পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের রাকআত সংখ্যা হলো মোট সতের রাকআত। এর সতের রাকআত হওয়ার হেকমত হলো মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মে’রাজের রজনীতে সর্বমোট সতেরটি স্থান ভ্রমন করান। আর উম্মত যেন এই সতেরটি স্থান আধ্যাত্মিক ভাবে সতের রাকআত নামাযের মাধ্যমে অতিক্রম করার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। তাই সতের রাকাআত নামায ফরয করা হয়েছে। 

তাকওয়ার প্রয়োজনীয়তা

Saturday, August 23, 2014



           সমস্ত প্রসংশা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি এক স্থানকে অন্য স্থানের উপর, এক সময়কে অন্য সময়ের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। যিনি মানব জাতিকে জ্ঞান গড়িমা বুদ্ধি দিয়ে সকল সৃষ্টি কুলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি যিনি দুনিয়াতে মুয়াল্লিম ও রহমত হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ করেছেন, আমি সৃষ্টিকুলকে মানব জাতির উপকারার্থে সৃজন করেছি এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃজন করেছি। সুতরাং উল্লেখিত বর্ণনার দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার বুকে মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পেছনে একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। আর সেই উদ্দেশ্য হলো মানব জাতি যেন ধ্বংসশীল এই দুনিয়ার বুকে তার জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তাআলার ইবাদাত করে তাঁর আদেশ নিষেধ পালন করে তার নৈকট্য অর্জন করতে পারে। 

             আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে যেই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন তা তারা একটি গুণের মাধ্যমে অতি সহজে অর্জন করতে সক্ষম হবে। আর সেই গুণটি হলো তাকওয়া। কারণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা অর্জন করার জন্য তাকওয়া একমাত্র চাবিকাঠি। তাকওয়া শব্দের আসল অর্থ হলো আত্মরক্ষা করা। শরীয়তের পরিভাষায় গুনাহ থেকে আত্মরক্ষা করার অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত হলে এর অনুবাদ করা হয় আল্লাহকে ভয় করা। উদ্দেশ্য আল্লাহর অবাধ্যতা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা ও ভয় করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ করেন
ومن يّتّق الله يجعلّه مخرجا و يرزقه من حيث لا يحتسب
অর্থাৎ ঃ যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য প্রত্যেক সংকট ও বিপদ থেকে মুক্তির পথ করে দেন এবং ধারণাতীত রিযিক দান করেন। 

         
আলোচ্য আয়াতে তাকওয়া তথা খোদাভীতির দু’টি কল্যাণ বর্ণিত হয়েছে। 

১. তাকওয়া অবলম্বনকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার যাবতীয় সংকট ও বিপদ থেকে এবং পরকালের সব বিপদাপদ থেকে মুক্তির পথ করে দেন। 

২. তাকে এমন জায়গায় থেকে রিযিক দান করেন যা কল্পনাও থাকে না। এখানে রিযিক এর অর্থ- ইহকাল এবং পরকালের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বস্তু। এই আয়াতে মুমিন-মুত্তাকীর জন্য আল্লাহ তাআলা এই ওয়াদা ব্যক্ত করেছেন যে, তিনি তার প্রত্যেক সমস্যা সহজসাধ্য করেন এবং তার অভাব অনটন পূরণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এমন পথে তার প্রয়োজনাদি সরবরাহ করেন যা সে ধারণাও করতে পারে না। 

অন্যত্র কুরআন পাকের মধ্যে ইরশাদ হয়েছে,
  انّ للمتّقين مفازا   অর্থ্যাৎ- মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সাফল্য। সুতরাং কুরআন পাকের উল্লেখিত আয়াতদ্বয় দ্বারা এ কথাই প্রতীয়মান হয় যে, মাছের জীবন রক্ষা করার জন্য যেমন পানির প্রয়োজন তেমনি ভাবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং ইহকাল ও পরকালে সাফল্য অর্জন করার জন্য তাকওয়ার প্রয়োজন। তাই আসুন আমরা সকলেই তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সাফল্য অর্জন করি। এর জন্য আল্লাহ ওয়ালার কাছে নিজেকে সোপর্দ করে দেই। 

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন। আমিন।

ইলমে দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব ও ফযিলত




        সমস্ত প্রসংশা ঐ মহান আল্লাহ জন্য যার কুদরতি কব্জায় আমাদের জীবন-মরণ। যিনি ইলমে দ্বীন শিক্ষা করাকে আমাদের উপর ফরয করেছেন। অঝর ধারায় দরূদ বর্ষিত হোক, ইলমের ঝর্ণাধারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর। ইল্মের গুরুত্ব আমলের চেয়ে অনেক বেশি। কেননা ইল্মে আমলের রাস্তাকে সুগম করে। যে জাতি ঐশী  শিক্ষায় যত শিক্ষিত উভয় জগতে সে জাতি তত উন্নত। আর যে জাতি এ শিক্ষা থেকে যত দূরে, তারা উভয় জাহানে সফলতা থেকে দূরে। সুতরাং উক্ত আলোচনার দ্বারা একথাই প্রতীয়মান হয় যে, কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক যিনি, ইল্মের মালিকও তিনিই। তাই যারা এ সুশিক্ষা থেকে দূরে তারা আপন  প্রতিপালকের পরিচয় থেকেই দূরে। আর একথা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট যে, মালিক বিহীন যে কোন জিনিসই মূল্যহীন। সেই মহান মালিককে চিনে মূল্যবান হওয়ার জন্য এই এলমে দ্বীন শিক্ষার বিকল্প কোন শিক্ষা নেই। মহান মালিক তাকে চেনার নিমিত্তেই মানব ও দানবকে সৃজন করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون  
অর্থ ঃ আমি জ্বিন এবং মানব জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। 

        এ আয়াতে মুফাসসীরীনে কেরাম ليعبدون এর তাফসীর ليعرفون দ্বারা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালার পরিচয় লাভ করার জন্যই তিনি মানব ও দানবকে সৃষ্টি করেছেন। আর তার পরিচয় লাভের জন্য এলমে দ্বীন অপরিহার্য। কেননা এলমে দ্বীন ব্যতিরেকে তার পরিচয় লাভ করা সম্ভব নয়। কে না চায় সেই চির সুখের নীড় জান্নাতে প্রবেশ করতে । উপায় হলো ঐ অনাবিল শান্তিময় সুখের ঠিকানার মালিকের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এ এলেম মহান মালিকের সাথে গভীর ও নিবির সম্পর্ক কায়েম করে দেয় । এলমে দ্বীন এমন এক মহাদৌলত যা দ্বারা মানুষ পরিচয় পায় আপন অস্তিত্বের। খোদার অবাধ্যতা থেকে আত্মসংবরণ করতে সচেষ্ট হয় । কুফরীর অন্ধকার থেকে সংযত হয়ে হেদায়েতের নূরে পথ চলতে শেখে। ধাবিত হয় মন আপন ঠিকানায়। ইলমে দ্বীনের চর্চা বহাল আছে বলেই স্তম্বহীন সুবিশাল এই আসমান স্বস্থানে প্রতিষ্টিত রয়েছে। সূর্য আপন তেজে জ্বলছে, চন্দ্র তার রূপালী কিরণ ধরণী অভিমুখে ঢালছে। তারকারাজি আপন কক্ষপথে মিটিমিটি জ্বলছে। যতদিন থাকবে ইলমে দ্বীনের আলোচনা বহমান, ততদিন থাকবে কায়েম মাথার উপর নীলিমাময় আসমান। একজন ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারী বিয়োগ বেদনায় আসমান জমিন ও তৎসংশ্লিষ্ট সবই কাঁদতে থাকে।

সন্ত্রাসীদের ঘৃণ্য চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচন


     ইসলাম ধর্মকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের উপর বিভিন্নভাবে অস্ত্র সন্ত্রাসের পাশা-পাশি তথ্য সন্ত্রাসও চালিয়ে যাচ্ছে।

   ১. অস্ত্র সন্ত্রাসঃ আপনাদের জানা মতে তৎকালীন আমেরিকার জজ ডব্লিউ বুশ গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরী করার অভিযোগে তার সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে ইরাকের উপর হামলা চালায়। ইরাক দখলের পর গদিতে বুশের পুতুল সরকার বসায়। ইরাকের প্রেসিডেণ্ট সাদ্দামকে হোসেনকে ঈদের দিন সকালে ফাঁসি দেয়। এরপর যখন বুশ গণবিধ্বংসী অস্ত্র প্রমাণ করতে পারল না তখন বিশ্বের বিবেকবানদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসতে লাগল যে, কোন অপরাধে ইরাকের উপর হামলা হয়েছে তা জানাতে হবে। 

      যখন কোন নিষিদ্ধ অস্ত্রের প্রমাণ দেখাতে পারল না তখন তাদের একথার জওয়াব দিতে না পেড়ে ইরাকের হামলাটাকে বৈধ করার জন্য একটি ষড়যন্ত্র করল। তাহল ২০০৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি সমিতি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস শিরোনামে ঢাকায় একটি সেমিনার করে। সেখানে প্রধান বক্তা হিসাবে প্রফেসর হেন্সকে আমন্ত্রণ করে আনা হয়। বাংলাদেশের প্রায় চৌদ্দ কোটি মুসলমানের রাজধানী ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে সে বক্তৃতা দেয় যে, ইসলাম সূচনা কাল থেকেই সন্ত্রাস লালন করে আসছে। ইসলামের নবী নিজেই জঙ্গী (নাউজু বিল্লাহ)। হেন্সের বক্তৃতায় যারাই ইসলাম ধর্ম পালন করে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যারাই রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করে চাই তাদের দাড়ি টুপি থাক বা না থাক তারা সবাই সন্ত্রাসী। এর প্রমাণ স্বরূপ হেনস বলে যে , ইসলামের সর্বশেষ নবী যদি জঙ্গীই না হতেন তাহলে ৬৬টি যুদ্ধ কেন পরিচালনা করেছিলেন? অথচ ইতিহাস খুললে অতি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো সন্ত্রাস করেন নি। বরং সন্ত্রাস দমন করেছেন। আর ৬৬টি যুদ্ধ ছিল সন্ত্রাস দমন করার জন্য। এ ব্যপারে আলোচনা করলে তা একটি বিশাল পুস্তিকার রূপ ধারণ করবে। তাই ৬৬টি যুদ্ধের সর্ব প্রথমটির ব্যপারে সামান্য কিছু আলোচনা করছি। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০বছর বয়সের পর যখন বলতে লাগলেন
يا ايها الناس قولوا لا اله الا الله تفلحون-
হে লোক সকল! لا اله الا الله স্বীকার কর। তোমরা সফলকাম হয়ে যাবে।
     
       তখন থেকেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে আরম্ভ হল সন্ত্রাসী হামলা আর নির্যাতন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য বাজারে যেতেন তখন মক্কার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু জেহেল নিজ চেলা-চামু-াদেরকে নিয়ে বাজারের মানুষদেরকে বলত, শোন মুহাম্মদ পাগল (নাউজুবিল্লাহ)। তার কথা তোমরা শুনবেনা। কিন্তু যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত দিতেই থাকেন তখন আবু জেহেল নিজের দলবল নিয়ে নবীজীর শরীর মোবারকে থুথু নিক্ষেপ করে শরীর ভিজিয়ে ফেলত। তার পর সেই ভিজা শরীরে রাস্তার বালু নিক্ষেপ করত। এরপরও যখন নবীজীকে ইসলামের দাওয়াত থেকে ফিরাতে পারত না তখন রাস্তার ধারালো পাথর নবীজীর গায়ে নিক্ষেপ করে সারা শরীরকে রক্তে রঞ্জিত করে ফেলত (নাঊজুবিল্লাহ)। এর পরেও যখন কাজ হল না তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গলায় গামছা বেঁধে রাস্তার অলি-গলিতে নবীজীকে টানা হেছড়া করত। এই হল ইসলামের সূচনাকালের মর্মান্তিক ইতিহাস।
                                                                                                                                                                        এ রকমের অমানুষিক সন্ত্রাসী হামলা সহ্য করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘ ১৩টি বৎসর পর্যন্ত মক্কাবাসীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। যার ফলে মক্কার কয়েক জন লোক ইসলাম গ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত খাব্বাব রা.। তাকে ইসলাম গ্রহণ করার অপরাধে আগুনের জ্বলন্ত অংগাারের উপর চিৎকরে শোয়ায়ে রাখা হত। যার ফলে তার চামড়া পুড়ে চর্বি গলে আগুন নিভে যেত। অনুরূপ হযরত বেলাল রা. এর সাথেও করা হত। এমন কি বৃদ্ধা মহিলা হযরত সুমাইয়া রা.কে ইসলাম গ্রহণের অপরাধে আবু জেহেল বর্ষা হাতে নিয়ে তার লজ্জাস্থানে আঘাত করে শহীদ করে ছিল। দীর্ঘ ১৩বছর সন্ত্রাসী হামলা সহ্য করার পর আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলেন, হে মুহাম্মদ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি আপনার নিরিহ নির্যাতিত অনুসারীদেরকে নিয়ে হিজরত করুন। তখন তিনি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিজ্ঞা করল যে, তাদেরকে সেখানেও শান্তিতে বসবাস করতে দিবে না। তাই হিজরতের দু’বছর পর মক্কার শীর্ষ সন্ত্রাসী আবু জেহেল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত, অস্ত্রে-সস্ত্রে সজ্জিত, অশ্বারোহী ১০০০জনের এক সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মদীনায় হামলা করার জন্য রওনা হল। তারা ২২০মাইল অতিক্রম করে চলে আসল। এবার আল্লাহ পাক নির্দেশ দিলেন যে, আর সন্ত্রাস সহ্য নয়। এবার সন্ত্রাস দমন করার জন্য বের হয়ে যান। কারণ ১৩টি বছর পর্যন্ত সন্ত্রাস সহ্য করেছেন। এখনো যদি সন্ত্রাস সহ্য করতে করতে দুনিয়া থেকে চলে যান তাহলে পৃথিবীটাকে সন্ত্রাস মুক্ত করে গড়ে তুলবে কে? এই নির্দেশ পেয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের নিরীহ প্রায় নিরস্ত্র ও পদাতিক ৩১৩জন সাহাবীদেরকে নিয়ে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করার জন্য বের হলেন।
     অতঃপর মদীনা থেকে ৮০মাইল দুরে বদরের প্রান্তে মুখোমুখী হয়ে যান। আল্লাহ পাকের সাহায্যে মুসলমানের হাতে ৭০জন সন্ত্রাসী নিহত হল এবং ৭০জন বন্দী হল। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বন্দীদেরকে পাহাড়া দেয়ার জন্য যে সমস্ত মুসলমানকে নিযুক্ত করেছিলেন তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন যে, এদের ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এরা তোমাদের মেহমান। সুবহানাল্লাহ! নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বন্দীদেরকে মেহমান বলার কারণে তারা তাদেরকে গোস্ত রুটি খেতে দিতেন। আর নিজেরা প্রত্যেকেই একটা/দুইটি খেজুর খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করতেন। দেখুন মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত বড় দয়ালু মহামানব! খোদার কসম, গোটা সৃষ্টি জগতে তাঁর চেয়ে বড় উদার মহামানব নেই। 
         বর্তমানে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ইতিহাস দেখুন যে, তারা কেমন নির্দয়, নিষ্ঠুর। একটি নিরপেক্ষ সূত্রে জানা যায় যে, ২০০৩সালের মার্চে ইরাকে আগ্রাসী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গত ২০০৪অক্টোবর পর্যন্ত ১৯ মাস সময়ে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনীর আগ্রাসী হামলায় লক্ষাধিক ইরাকী নিহত হয়েছে। ইরাকের কারাগারগুলোতে সন্দেহ ও অজ্ঞতাবশত ধরে এনে আটক করা হয় নিরীহ বেসামরিক নারী-পুরুষদেরকে। অকারণে তাদের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। পাশাপশি উলঙ্গ করে রাখা হয় বন্দীদের। কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়। লজ্জস্থানে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ছাদের সাথে ঝুলিয়ে রেখে কিংবা ভারি বাক্স মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে নির্যাতন চালায় তারা। 

          গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ সেনারা কেনিয়ার প্রায় দশ হাজার নাগরিককে জবাই করে হত্যা করে। ষাটের দশকে আমেরিকানরা ভিয়েতনামের জনগণকে বলত, মানব উকুন। সেখানে তারা লোমহর্ষক অত্যাচার ও হত্যাকা- চালায়। চালায় নারী ও শিশুদের উপর যৌননিপীড়ন। বোমার আঘাতে পঙ্গু করে দেয় হাজার হাজার জনগণকে। সেখানে তারা মহিলাদের গণধর্ষণ শেষে স্তন কর্তন করে উল্লাস করে। এক নির্যাতিতা ইরাকী মুসলিম বোনের ইজ্জতের উপর যে লোমর্ষক বর্বর নির্যাতন চালায় তা তিনি হৃদয়ের আবেগ দিয়ে আবুগারীব বন্দিশালা থেকে উদাসীন তমসাচ্ছন্ন মুসলিম উম্মাহর নামে ১০মে ২০০৪ তারিখে একটি পত্র লেখেন, যার কিছু অংশ এখানে উল্লেখ করা হল।
         প্রিয় ভাই-বোনেরা! আমি নূর। নিরপরাধ বন্দী এক তরুণী। তোমাদের বোন খুনের কালিতে লিখছে তার মিনতি। আবুগারীব বন্দীশালায় নির্যাতিতা মা-বোনদের দুঃখের কথা। আমাদের উপর যে নির্মম অমানবিক জুলুম অত্যাচার করা হচ্ছে তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। আমাদের পবিত্র আচল, মর্যাদার চাদর আজ ছিন্নভিন্ন। আমরা আমেরিকার ক্রুসেডের শূলে ঝুলন্ত। তারা আমাদের এত অসহনীয় ও অকল্পনীয় শারীরিক নির্যাতন করছে যার ফলে আমরা ক্ষত-বিক্ষত। প্রতি রাতে আমেরিকার শয়তানগুলো আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইজ্জত লুন্ঠন করছে। আমাদের ইজ্জত ধুলোয় মিশে গেছে। মৃত্যুর জন্য আমরা বিলাপ করছি। হায়! মৃত্যু আসতে বিলম্ব করছে! হে শান্তিময় মুক্ত আবহাওয়ায় বসবাসকারীগণ! তোমরা যখন আয়েশী জীবনে বিলাসী খানায় মশগুল। রুচিকর সুস্বাদু বাহারী খাবার নিয়ে যখন তোমরা আনন্দে লিপ্ত তখন তোমাদের মা-বোন এক মুঠ খাবারের জন্য কাতর। তারা ক্ষুধার্ত, পিপাষার্ত। তোমরা যখন শীতল পানীয় পানে ব্যস্ত, তখন তোমাদের মা-বোন এক ফোঁটা পানি থেকেও বঞ্চিত। তোমরা যখন নরম তুল তুলে ঝকঝকে আরামদায়ক শয্যায় শায়িত, তখন তোমার বোন কণ্টকযুক্ত বিছানার অপেক্ষায় অপেক্ষমান। বন্দীশালায় আমরা পরস্পরে জিজ্ঞাসা করি, আমাদের স্বজাতীয় বীর ভাইয়েরা কোথায়? প্রতিদিন জিন্দানখানার অন্ধকারময় পরিবেশে জানালার ফাঁক দিয়ে অপেক্ষা করি। এইতো আমাদের ভাইয়েরা আসছে। তারা আমাদের শিকল পড়া হাত-পা থেকে বাধন খুলে দিচ্ছে। এই তো তারা আমাদেরকে শোনাচ্ছে, মা ও বোনেরা! যাও। তোমরা মুক্ত স্বাধীন। আমরা প্রতিদিন মরুভূমির তপ্ত পথে নির্জন বিয়াবানের পথ চেয়ে অপেক্ষা করি। এইতো আসছে যুগরে মুহাম্মদ বিন কাসেম। না! আমাদের অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। দুঃখের দীর্ঘ সময় আর কাটে না। নাহ! কেউ আর আসছে না। কেউ নেই আমাদের আওয়াজ শোনার। মুসলিম উম্মাহ! তোমরা আমাদের চিৎকার শোন! আমাদের আর্তনাদে সাড়া দাও।
       মুসলিম ভাইয়েরা! আমরাও ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত। আমরাও মুসলিম। তোমরা আমার মিনতি শোন। আমরা আমাদের গর্ভে কাফিরদের সন্তান ধারণ করতে পারব না। কি হবে বেঁচে থেকে?
 

             পত্রটি ১০ই মে ২০০৪ সনে আল বসরা ওয়েব সাইটে আরবী ভাষায় প্রকাশিত হয়। ইহুদী-খ্রীষ্টানরা এরকম হাজারো নির্যাতন মুসলমানদের উপর চালিয়ে যাচ্ছে। চালাচ্ছে হিংস্রতা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-। এর কারণ হল তাদের ধর্ম বিশ্বাসই তাদেরকে এসব করতে উদ্বুদ্ধ করে। এর একটি প্রমাণ হল, কুরআনের আলোকে বেহেস্তে যাওয়ার পথ নামক বইটিতে খ্রীষ্টানরা লিখেছে, “সব মানুষের আদি পিতা আদম আ. প্রথম মানুষ প্রথম পাপীষ্ঠ”। কাজেই এই পাপীষ্ঠ আদমের ঘরে যত নবী জন্মগ্রহণ করেছেন সব নবীই পাপীষ্ঠের ঘরের পাপীষ্ঠ। তাই আল্লাহ তাআালা একজন নবীকে পাপমুক্ত করে নিজেই পিতা হয়ে জন্ম দিলেন। আর সেই নবীর নাম হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। যেহেতু তিনি ছাড়া সবাই পাপীষ্ঠ তাই তিনি তার পিতা আল্লাহর কাছে আবদার করলেন, তুমি আমার শত্রুদেরকে সুযোগ দাও তারা যেন আমাকে শূলিতে চড়িয়ে হত্যা করে। তাতে আমার যে কষ্ট হবে, সে কষ্ট কিয়ামত পর্যন্ত আগত-অনাগত ঐ সব মানুষের জন্য অগ্রীম কাফ্ফারা হবে। যারা আমাকে তোমার পুত্র বলে স্বীকার করবে ও বিশ্বাস করবে। তখন পিতা তাঁর পুত্রের এই দরখাস্ত মঞ্জুর করলেন” সুতরাং তাদের ধর্ম বিশ্বাস মতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত যত অপরাধ করবে, জীবনে যত সন্ত্রাস, চুরি, ডাকাতী, ব্যভিচার, যা কিছুই করবে সব আগেই মাফ হয়ে গেছে। সুতরাং খ্রীষ্টানদেরকে তাদের ধর্ম বিশ্বাসই সন্ত্রাসী বানায়, সন্ত্রাস শিক্ষা দেয়।
           কিন্তু ইসলাম ধর্ম মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী হতে দেয় না। ইসলামের বিধানে কারো বিরুদ্ধে ন্যায়সংগতভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না দিয়ে গোপনে হামলা করে নিরীহ মানষ হত্যা করা হারাম। সুতরাং শেখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই যে সমস্ত কর্মকান্ড করেছিল তা ছিল ইহুদী-খ্রীষ্টানদের দালাল হিসেবে। যাতে বুশ এবং প্রফেসর হেনস বিশ্বের মানুষের কাছে প্রমাণ করতে পারে যে, এই দেখ ! মুসলমানেরাই সন্ত্রাসী। আরো কিছু নামধারী মুসলমান এমনও আছে যারা বলে যে কওমী মাদ্রসায় শুধু বোমা বানানো শিখানো হয়। এর প্রমাণ স্বরূপ শেখ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইকে পেশ করে থাকে। অথচ তারা কোন কওমী মাদ্রাসায় পড়ে নাই। বরং বোমাবাজ ডঃ আসাদুল্লাহ গালিব ছিল ভার্সিটির প্রফেসর। অতএব, ভার্সিটি বন্ধ না করে মাদ্রসা বন্ধ করতে বলা এটা নিঃসন্দেহে তথ্য সন্ত্রাস এবং ইহুদী- খ্রীষ্টানদের দালালী।
সবাই জানে যে, আফগানিস্থানে ইসলামী হুকুমত কায়েম হওয়ার পর ঐ দেশটিই ছিল সঠিক অর্থে পৃথিবীর একমাত্র স্বাধীন মুসলিম দেশ। তারা কারো বশ্যতা স্বীকার করে নি। তাই আফগানিস্তানে যদি ইসলামী হুকুমতের শিকড় মজবুত হত তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্ব বিজয়ী সাহাবাগণের ইতিহাস রচনা করত। কারণ এটাই হত সমস্ত মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র। এ কারণে চক্রান্তের বিজ্ঞ নায়করা কালক্ষেপণ না করে নাইন ইলেভেনের টুইন টাওয়ার নাটকটি সাজিয়েছে। এর কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ  যুদ্ধবাজ মিস্টার ডিকচেনি বলেছেন বিন লাদেনকে গ্রেফ্তার করে তাকে বিচারের কাঠ গড়ায় হাজির করতে হবে। তবে এর যথেষ্ট প্রমাণ বা অজুহাত আমাদের হাতে নাই। আর এদিকে টুইন টাওয়ারটি তো এমনিতেই কিছুদিন পর ধ্বংস করা হত। কারণ এর মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। তাই এমন একটি নাটক সাজানো হয় যাতে টুইন টাওয়ারটি মুসলমানদের টাকায় পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা করা হয় এবং বিন লাদেনকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ মিলে। আর পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমানদের পরিচয় এভাবে দেয়া হয় যে, মুসলমানরা মূর্খ, অসভ্য, বর্বর, সন্ত্রাসী, চোর, ডাকাত, লম্পট, ব্যভিচারী, ইত্যকার যত অসৎগুণ আছে তা মুসলমানদের সাথে যুক্ত করা হয় । তাদের এ সকল দাবি যে সঠিক এ কথা জনগণকে বুঝানোর জন্য তারা নিজেদের লোকদের দিয়ে টুইন টাওয়ারের নাটকটি বাস্তবায়ন করে। আর দোষ চাপায় মুসলমানদের উপর। তাদেরকে প্রশ্ন করা হল যে, নিরীহ মুসলমানদের উপর জুলুম চালাও কেন? তখন তারা বলে যে, সন্ত্রাস দমন করি। তখন তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করা হল যে, মুসলমান ছাড়া আর কোন সন্ত্রাসীজাতি কি পৃথিবীতে নেই? তখন এর জবাব তারা এভাবে দিল যে, মুসলমানদের নবী নিজেই ছিলেন সন্ত্রাসী। অতএব, সন্ত্রাস দমন করতে হলে আগে মুসলমাদেরকেই নিধন করতে হবে। (নাউযু বিল্লাহ)
 
          তারা নিজেরা সন্ত্রাসী হয়ে অন্যদেরকে সন্ত্রাসী বলে কেন? এর রহস্য একটা ঘটনার মাধ্যমে আপনারা সহজে বুঝতে পারবেন। ঘটনাটি হলো ২৬/০৩/২০১১ তারিখে ঢাকা, দোহার এলাকার নারিশা পশ্চিমচর গ্রামে জয়নুদ্দিন হাওলাদারের বাড়িতে ডাকাতরা ডাকাতি করে পালিয়ে যাবার সময় যখন দেখল যে, এলাকার চতুর্পাশ থেকে লোকজন তাদেরকে ধরার জন্য ছুটছে। তখন তারা রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি ফন্দি এটে বড় গলায় বলতে লাগল যে, ডাকাত পালিয়ে গেল! ডাকাত পালিয়ে গেল! এ সময় হৈ হট্টগোল করে তারা উধাও হয়ে গেল।
 
            ঘটনাটি বুঝে থাকলে বলুন ডাকাতরা কেন তাদের মুখে বলে যে, ডাকাত পালিয়ে গেল ? সমাজের মানুষ যেন বুঝতে না পারে তারা নিজেরাই ডাকাত। ঠিক তেমনি ভাবে সমাজের শীর্ষ সন্ত্রাসীরাই সন্ত্রাস দমন করি বলে দাবি করে। সারা বিশ্বের সরল জনতা যেন জানতে না পারে যে, সন্ত্রাস দমনের নামে তারাই বিশ্ব সন্ত্রাসী। তারা যে জিহাদকে সন্ত্রাস বলে আক্ষায়িত করে এর কারণ হল, তারা ভালো করেই জানে যে, মুসলমানরা যদি সংঘবদ্ধ ভাবে জিহাদ করতে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে মুসলমানেরা আবার ফিরে পাবে তাদের হৃত ঐতিহ্য, গৌরব ও মর্যাদা। অবসান হবে এই পৃথিবী থেকে সব ধরণের পাপাচার, অত্যাচার, অন্যায়-অবিচার। অবসান হবে এই ধরণের সন্ত্রাস শোষণ, নির্যাতন। দুনিয়ায় আবার ফিরে আসবে সাম্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ভ্রাতৃত্ব। আর তখন হবে সম্রাজ্যবাদ সহ পৃথিবীর সকল কায়েমী স্বার্থবাদের মৃত্যু। তাই কি ভাবে দুনিয়া থেকে খোদাই বিধান জিহাদকে চিরতরে উঠিয়ে দেয়া যায় এ জন্যই তারা গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
 
           সারকথা, শেষনবী যেরূপ সন্ত্রাস উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করেছেন আমাদেরও তার অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হন। আমীন।
 

আল্লাহর মহব্বত অর্জন



      আল্লাহ তা’য়ালা আসমান, যমীন, গাছপালা, নদী-নালা, খাল-বিল, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, পাহাড়-পর্বত, সব কিছুকে সুন্দরভাবে মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ পাক এর সাথে সম্পর্ক করার জন্য।  মানব জাতি যা কিছু করবে সব কিছু যেন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য হয়। আমরা সারা জীবন যেন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি মুতাবেক আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি। আল্লাহ তাআলার আমাদেরকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মখলুকের মহব্বত পরিত্যাগ করে আল্লাহ পাকের প্রতি  মহব্বত স্থাপন করা এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করা। যদি আল্লাহ পাক আমাদের এই মহব্বতকে গ্রহণ করে নেন, তাহলে  আমাদের দুনিয়ায় শান্তি হবে এবং আখেরাতে ভয় ভীতি থাকবে না। যেমন তিনি নিম্ন আয়াতে বলেছেন,
الا ان اولياء الله لا خوف عليهم ولاهم يحزنون
       অর্থাৎঃ  নিশ্চই আল্লাহর ওলীগণের কোন ভয় নেই, কোন চিন্তা নেই। আল্লাহ তাআলার ভালবাসা ও মহব্বত পেতে হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন আদর্শকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরী। এই কথার অর্থ হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পূর্ণ জীবন কিভাবে কাটিয়েছেন, কোন কাজ করতে আদেশ করেছেন, কোন কাজ করতে নিষেধ করেছেন, কোন কাজ আমাদের করণীয়, কোন কাজ আমাদের বর্জনীয়, এই সকল কাজকে আমাদের প্রিয় নবী যে ভাবে তাঁর সারা জীবন পরিচালনা করেছেন ঠিক তেমনিভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।
       আমাদের করণীয় হল, কালেমা, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত সবগুলো ঠিক ভাবে গুরুত্বের সাথে আদায় করা। যিকির দরূদ ও নফল নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া। নফল নামাযের দ্বারা আল্লাহ পাকের নৈকট্য বেশী অর্জন করা যায়।
     
       আমাদের বর্জনীয় কার্যবলী হল, শিরিক, কুফর, তাকাব্বুর, হিংসা, বিদ্বেষ, মিথ্যা, জুলুম-অত্যাচার, দুনিয়ার মহব্বত, আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করা। এ সকল কাজ থেকে যদি নিজেদের অন্তরকে পবিত্র রাখা যায়, তাহলে অন্তরে নূর সৃষ্টি হবে, আল্লাহর মহব্বতে অন্তর পরিপূর্ণ থাকবে। শয়তানের ধোকা অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর ভালবাসা অর্জন হবে।
 
       আল্লাহ পাক যদি আমাদের মহব্বতকে কবুল করে নেন এবং আমাদের প্রতি রাজি হয়ে যান তাহলে আমাদের মৃত্যুকালে তেমন কোন কষ্ট হবে না। কবরের জগতে সুখের নিদ্রায় থাকা সম্ভব হবে। হাশরের দিনে আল্লাহ পাকের আরশের ছায়ায় স্থান হবে। মিজানে হিসাব হবে না। পূলছিরাতে গুনাহের বোঝা বহন করতে হবে না। সর্বশেষে জান্নাতে স্থান হবে। সেখানে আল্লাহ তাআলার দিদার নছিব হবে, চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ হবে। আমরা যেন আল্লাহ পাকের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বত আমাদের অন্তরে পয়দা করতে পারি আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন।

কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মুজিযা



      সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি হাজারো নিয়ামতের মধ্যে আমাদেরকে ডুবিয়ে রেখেছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম বিশ্ব নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর উপর, যার কারণে আমরা পবিত্র কুরআন ও শরীয়ত পেয়েছি এবং প্রকৃত মাহবুবের পরিচয় লাভ করেছি। ইসলামী মূলনীতির প্রথম ও প্রধান উৎস এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির একমাত্র সনদ হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। যাতে রয়েছে শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মূলসূত্র। আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনের মূল কথা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম এর মাধ্যমে যার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষের আধ্যাত্মিক, জাগতিক সকল বিভাগের পর্যাপ্ত ও পরিপূর্ণ আলোচনার এক মাত্র অধ্যায় হচ্ছে আল-কুরআন। কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন-
 ولقد جئنهم بكتاب فصلناه علي علم هدي ورحمة لقوم يؤمنون-          অর্থাৎ- আমি তাদের কাছে এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছি যা আমি স্বীয়  জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত। (সূরা আ’রাফ-৫২)

কুরআন শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব

      পবিত্র আল-কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যার সাথে বিশ্বের কোন গ্রন্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব নয়। বিশ্বে কোন গ্রন্থের সাবলিলতা, সাহিত্যকতা, মাধুর্যতা ও রচনা বিন্যাস কুরআনের সমকক্ষ হতে পারে না। যার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেছেন, হে নবী! বলুন, যদি সমগ্র মানব ও জ্বিন জাতি একত্রিত হয়ে এই কুরআনের মত কোন গ্রন্থ আনতে চায় তাহলে আদৌও তা পারবে না। যদি তারা একে অপরে সাহায্য গ্রহণ করে তবুও পারবে না। (বনী ইসরাঈল- ৮৮)
      
আরবরা ছিল সাহিত্যমোদী। যখন কুরআন অবতীর্ণ হল তখন তার সাহিত্য রস প্লাবিত করল সাহিত্য সাগর। পরাজিত করল সাহিত্য কলার সকল কবি যাদুকরদেরকে। তখন আর তাদের বিষ্ময়ের সীমা রইল না। বিষ্ময়কর মধুময় ইলাহী কথা মালার বাক্যগুলোর আবৃতি হয়ে উঠল সাহিত্য মনের সর্বোচ্চ খোরাক। তারা মুগ্ধ হয়ে গেল এই কিতাবের তেলাওয়াতে। নিঃসন্দেহে ভাষা শৈলীর সাবলিলতা ও চমৎকারিত্বে আজও এর তুলনা নেই। তাই এ কথা চিরন্তন সত্য যে, এ কুরআন সর্বজনীন জীবন ব্যাবস্থা। তাই মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে ‘আপনার উপর কুরআন নাযিল করেছি। তাতে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের আলোকে হাদীস বর্ণনা করেন। কিছু কিছু মাসআলা ইজমা ও কিয়াসের আওতায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে হাদীস, ইজমা ও কিয়াস থেকে সব মাসআলা নির্গত হয়েছে। সেগুলোও পরোক্ষভাবে কুরআনের বর্ণিত মাসআলা। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন)
 
      কুরআনের আয়াতগুলো এক দৃষ্টিতে গদ্যের আবার অন্য দৃষ্টিতে পদ্যের ন্যায়। বিশ্বের কোন সাহিত্য এ ধরণের সংমিশ্্রন দেখা যায় না। আল-কুরআন এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান প্রমাণ হচ্ছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ থেকে অদ্যাবদি এ গ্রন্থ আবিকৃত অবস্থায় স্বকীয়তার উপর বিদ্যমান রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্তও এতে কোন পরিবর্ত হবে না।
 
     মূলত কথা হলো যে, এক বুজুর্গ বলেন যে, মাথা যখন শয়তানের দখলে চলে যায় তখন অযৌক্তিক সব কথা যুক্তির মাপকাঠি বলে মনে হয়। আর ভাল জিনিস মেনে নিতে পারে না। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের জিম্মাদার। যুগে যুগে বিজ্ঞানীদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কুরআন অভূতপুর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। এ মহাগ্রন্থে স্থান পেয়েছে এমন সব বিষ্ময়কর তথ্য, যার প্রতিটির কনিকাই সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করে যে, এটা কোন মানুষের রচনা নয়। কোন মানুষের দ্বারা অদৃশ্য জগতের এই সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সকল বিজ্ঞানী মিলেও এখন পর্যন্ত আকাশের অস্তিত্বকেই স্পষ্ট করতে পারে নি। অথচ কুরআন শুনিয়েছে সপ্ত আকাশে রহস্য কথা। আকাশ ম-লীর বহু উর্ধ্বে অবস্থিত আল্লাহর আরশ কুরসির কথা। তাদের শক্তি হল মেশিনের দ্বারা পরিচালিত। অর্থাৎ- মেশিনের উপর নির্ভর, কিন্ত তাদের সে মেশিনের শক্তি হল চোখের নজর পর্যন্ত। হাওয়ার উপর থেকে আরশের উপরে কিছুই আজ পর্যন্ত তথ্য দিতে পারেনি। তাই কুরআনই হল মানুষের সব কিছুর সমস্যার সমাধান।
 
পৃথিবীর যে কোন গ্রন্থ একাধিকবার পাঠ করলে মনে বিরক্তির ভাব জন্মায় উহা নিজের কাছে পুরাতন মনে হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের কালামে পাকের এমন শান যে, ইহা শতবার পাঠ করলেও মনের তৃষ্ণা মিটেনা। এমনকি হাজার বার তেলাওয়াত করলেও ইহা কখনো পুরাতন হয় না। বরং যত বার পাঠ করা হয় ততই যেন উহার আকর্ষণ এবং মধুরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

পবিত্র কুরআন মাজীদের কিছু অলৌকিক ঘটনা

 
  •  রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন কাফেররা আকর্ষণে বিমুগ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু কেউ কিছু বলত না। একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মসজিদে কুরআন তেলাওয়াত করেন, তখন পাশে দাড়িয়ে আবু জাহল শুনে মুগ্ধ হয়। এরপর অন্যান্য কাফেররা শুনে ইসলাম গ্রহণ করে।
  •  হযরত ইসমাঈল শহীদ রহ. যখন এক পতিতালয় এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন  তার দারোয়ানকে বলেন যে, ভিতরে গিয়ে মেয়েদেরকে বল যে, একজন লোক তোমাদেরকে গজল শোনাবে। অতঃপর ইসমাঈল শহীদ রহ. তাদেরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান। মেয়েরা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে। অতঃপর সবাই মুসলমান হয়ে যায়।
 কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুণ এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় আমাদের কল্যাণ দান করেন। আমীন।

কুরআন ও হাদীসের আলোকে পীর-মুরীদি



পীর-মুরীদি কী?
     
     হক্কানী পীর-মাশায়েখ আল্লাহওয়ালা বুজুর্গানে দ্বীন আল্লাহ ভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ ওয়ালা বানানোর জন্য ঈমান ও আমলকে খাঁটি ও মজবুত করার লক্ষ্যে কুরআন সুন্নাহ থেকে যে সকল পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে যে সকল পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন এগুলোকে সাধারণ মানুষ পীর-মুরীদি বলে। একে বায়াত বা বায়াত করাও বলে। আবার কেউ একে সুলুক ও তরীকত এবং তাছাওউফ ও তাযকিয়াও বলে। পীর ফার্সী ভাষার শব্দ আরবীতে এর জন্য শায়েখ শব্দ ব্যবহার হয়। শায়েখ এর সর্বশেষ বহুবচন মাশায়েখ। সুতরাং পীর এবং মাশায়েখ একই অর্থের। তবে মুরীদ আরবী শব্দ। যিনি বায়াত করান তিনি পীর বা শায়েখ। আর যিনি বায়াত হন তিনি মুরীদ।

পীর শব্দ কুরআন-সুন্নায় নেই
 
     পীর শব্দ কুরআন-সুন্নায় কোথাও নেই এ কারণে অনেকেই একে বর্জনীয় ভাবেন। আসলে বিষয়টা হল, কাজ যদি কুরআন-সুন্নাহর তথা শরীয়তের মাপকাঠিতে হয় তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে সহীহ মানা উচিত, নাম যেটাই হোক। যেমন নামায, রোযা, দরূদ ইত্যাদি শব্দ কুরআন-সুন্নায় কোথাও নেই। তাই বলে এগুলোকে কেউ বাতিল বলে না। বললে তার কথাই কুরআন হাদীসের বিপক্ষে হবে। অনুরূপ পীর-মুরীদীর তরীকার সকল কাজ যদি কুরআন সুন্নাহ তথা শরীয়তের মাপকাঠিতেই হয় তাহলে তার বিরোধিতা করা হবে নিজের ইহকাল ও পরকাল বরবাদ করা।

সাহাবী হওয়ার পরও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের থেকে বায়াত গ্রহণ

 
     বর্তমানে হক্কানী পীর মাশায়েখ যে সকল বিষয়ে বায়াত করান তা অবিকল ভাবে কুরআন হাদীসে পাওয়া যায়। অথচ অনেকেই মনে করেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু অমুসলিমদেরকে মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রেই বায়াত করিয়েছেন। অথচ বর্তমানে মুসলমানদেরকে বায়াত করানো হয় যা নিরর্থক। এ ধারণা ঠিক নয়।
     কেননা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের থেকেও বায়াত (আনুগত্যর শপথ) নিয়েছেন। অথচ তাদের ঈমানের সার্টিফিকেট কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণিত। তা ছাড়া যে সকল অবস্থা, ক্ষেত্রে বা বিষয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়াত নিয়েছেন তা যদি বিশেষ অবস্থা বা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তা হলে তা পরবর্তীতে বহাল থাকবে না। নইলে তা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। যেমন- ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে মক্কা থেকে অন্যত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে তিনি বায়াত করাতেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের উদ্দেশ্যে অনেকে বায়াতের জন্য উপস্থিত হলেও তিনি তাদেরকে বায়াত করান নি। অনুরূপ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় হযরত উসমান রা. মক্কায় শহীদ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হুদায়বিয়ায় উপস্থিত সবাইকে বায়াত করান। একেই ‘বায়াতে রেদওয়ান’ বলা হয়। পরে এ বায়াত করান নি। তবে তিনি ১. ঈমানের উপর অবিচল থাকার জন্য, ২. নামায কায়েমের জন্য, ৩. যাকাত আদায়ের জন্য, ৪. মৃত্যুর পর বিলাপ না করার, ৫. জিহাদ করার এবং ৬. জিহাদের ময়দানে ধৈর্য্য ধারণের জন্য, ৭. চুরি না করার, ৮. অপবাদ না দেয়ার, ৯. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজে প্রস্তুত থাকার, এবং ১০. আল্লাহর আরো যত বিধান আছে সে গুলোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও কখনো অবাধ্য না হওয়ার উপর পুরুষ ও মহিলা সাহাবীদের থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন। এ সময় তারা অমুসলিম ছিলেন না। বরং তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত পরবর্তী সকল উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঈমান ও আমলের অধিকারী ছিলেন। আর বর্তমান পীর মাশায়েখ ঈমান ও আমল খাঁটি করার লক্ষ্যে মুসলমান মহিলা ও পুরুষ থেকে এ সকল বিষয়েই বায়াত নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে নিচে কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণ দেয়া হল।
  اخبرني عروة ان عائشة زوج النبي صلي الله عليه وسلم اخبرته ان رسول الله صلي الله عليه وسلم كان يمتحن من هاجر اليه من المؤمنات بهذه الأ ية بقول الله – يا ايها النبي اذا جاءك المؤمنات يبايعنك علي ان لا يشركن بالله شيئا ولا يسرقن ولايزنين ولا يقتلن اولادهن ولا يأتين ببهتان يفترينه بين ايديهن وارجلهن ولا يعصينك في معروف فبايعهن واستغفرلهن الله ان الله غفور رحيم ، قال عروة قالت عائشة فمن اقر بهذا الشرط من المؤمنات قال لها رسول الله صلي الله عليه وسلم قد بايعتك كلاما ولا والله ما مست يده يدامرأة قط في المبايعة ، ما يبايعهن الا بقوله قد بايعتك علي ذلك- رواه البخاري                                                                   

     উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়শা রা. তাকে বলেছেন, কোন মু’মিন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে হিজরত করে এলে, তিনি তাকে আল্লাহর এ আয়াতের ভিত্তিতে পরীক্ষা করতেন-অর্থ ঃ হে নবী! মু’মিন নারীগণ যখন আপনার কাছে এই মর্মে বায়াত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকর্মে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়াত গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৬০ ঃ ১২)
      উরওয়া রহ. বলেন আয়শা রা. বলেছেন, যে মু’মিন মহিলা এসব শর্ত মেনে নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়াত করে নিলাম। আল্লাহর কসম ! বায়াত গ্রহণ কালে কোন নারীর হাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতকে স্পর্শ করে নি। নারীদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়াত করতেন।قد بايعتك علي ذلك   অর্থাৎ- আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়াত করলাম। সূত্র ঃ ২: ৭৫৭, বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৪৫৩১।
    
     এ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. মহিলাদের বায়াত গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন যা সূরা মুমতাহিনায় উল্লেখ হয়েছে। এখানে যাদের বায়াত করার কথা উল্লেখ হয়েছে তারা আল্লাহর কাছে ঈমানদার মহিলা সাহাবী হিসেবে সাব্যস্ত। তদুপরি তারা যে সকল বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বায়াত গ্রহণের জন্য এসেছেন আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের থেকে ঐ সকল বিষয়ে বায়াত করাতে আদেশ করেছেন। আর এ বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং বিষয়গুলো কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। সুতরাং বর্তমানে হক্কানী পীর-মাশায়েখ মহিলাদের থেকেও এ সকল বিষয় সহ আরো অন্যন্য নেকের বিষয়ে বায়াত করাতে পারেন। এটা কেউ অস্বীকার করলে তার থেকে কুরআনের এ আয়াত এবং বুখারী শরীফের এ হাদীস অস্বীকার করা হবে। পুরুষ সাহাবীদের ক্ষেত্রেও অবিকল এরূপ বিষয়ের উপর বায়াত করার বর্ণনা বুখারী শরীফে উল্লেখ হয়েছে।
             قال اخبرنا ابو إدريس عائذ الله بن عبد الله ان عبادة بن الصامت رضي الله عنه وكان شهيد بدرا وهو احد النقباء ليلة العقبة ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال وحوله عصابة من اصحابه بايعوني علي ان لاتشركوا بالله شيئا ولا تسرقوا ولاتزنوا ولاتقتلوا اولادكم ولا تأتوا ببهتان تفترونه بين أيديكم وأرجلكم ولا تعصوا في معروف فمن وفي منكم فأجره علي الله ومن أصاب من ذلك شيئا فعوقب في الدنيا فهو كفارة له ومن أصاب من ذلك شيئا ثم ستره الله فهو إلي الله إن شاء عفا عنه وإن شاء عاقبه فبايعناه علي ذلك
 رواه البخاري والنسائي
   ‘আয়িযুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও লাইলাতুল আকাবার একজন নকীব ‘উবাদা ইব্ন সামিত রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পার্শ্বে উপস্থিত এক দল সাহাবীকে তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়াত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, সে তার বিনিময় আল্লাহর কাছে পাবে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান তাকে মাফ করে দিবেন। আর যদি চান তাকে শাস্তি দিবেন। আমরা এর উপর বায়াত গ্রহণ করলাম।- সূত্র ঃ বুখারী শরীফ ১:৭, হাদীস নং ১৭; নাসাঈ ২:১৬৬, হাদীস ৪২১১ ।
 
      এ হাদীসে একদল সাহাবীর উপস্থিতিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল বিষয়ের উপর বায়াত করিয়েছেন তা সর্ব যুগের জন্যই প্রযোজ্য এবং জরুরী। সুতরাং বর্তমানে হক্কানী পীর- মাশায়েখ এ সকল বিষয় সহ আরো অন্যান্য নেকের বিষয় বায়াত করালে তা জরুরি বিষয়ে নবীর সুন্নাত আদায় করা হবে। তা ভিত্তিহীন বা বিদআত আখ্যায়িত করা বৈধ হবে না। উপরোক্ত আয়াত এবং হাদীসে অমুসলিমদের ঈমান কবুলের সময়ের বায়াতের কথা উল্লেখ হয়েছে। এমন দাবি তো কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। করলে তা তাহরীফ হবে। বরং তাঁরাই তখন ঈমানে আমলে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত তারাই শ্রেষ্ঠ। তবুও তাদের থেকে বায়াত নেয়া হয়েছে। সুতরাং বর্তমান মুসলমান এবং আলেম-উলামা থেকেও এই বায়াত নেয়া হলে তা  অবিকল কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ি হবে। এ দু’য়ের বহির্ভুত হবে না।
    স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. বোখারী শরীফে বায়াতের বিষয়ে একটা শিরোনাম এভাবে লিখেছেন, باب البيعة علي اقامة الصلواة (নামায কায়েমের বায়াত গ্রহণ) এর পর হাদীস উল্লেখ করেছেন,

حدثنا محمد بن المثني قال حدثنا يحيي قال حدثنا إسماعيل قال حدثنا قيس عن جرير بن عبدالله قال بايعت رسول الله صلي الله عليه وسلم علي اقامة الصلواة و إيتاء الزكاة والنصح لكل مسلم                             
 
হযরত মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না রহ. ........ জারীর বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার বায়াত গ্রহণ করেছি। সূত্র: বুখারী ১:৭৫, হাদীস:৪৯৯। এছাড়া বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও মুওয়াত্তা শরীফে নবীদের পরে কিয়ামত পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ মুসলামন তথা সাহাবীদের থেকে আরো বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়াত নিয়েছেন।

সূরা ফাতিহায় পীর-মুরীদির আলোচনা
    
     আল্লাহ তাআলা মানব-দানবের হেদায়েতের জন্য কুরআন নাযিল করেছেন। সূরা ফাতিহা তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং সূরা ফাতিহার মধ্যে যে বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে সে গুলোর গুরুত্ব পূর্ণকুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাআলা প্রথম পাঁচ আয়াতে তাঁর গুণগান ও বান্দার কাকুতি-মিনতির কথা উল্লেখ করেছেন। তারপর ছয় নং আয়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে সকল মানব-দানবের প্রতি আদশ জারি করেছেন যে, তারা যেন মাওলার কাছে সিরাতে মুস্তাকীমের হিদায়াত বা মাওলাকে পাওয়ার সহজ তরীকায় চলার ও বহাল থাকার জন্য শয়নে-স্বপনে, ঘুম-জাগরণে সদা দোআ করতে থাকে। এখন প্রশ্ন হল সিরাতে মুস্তাকীম বা মাওলাকে পাওয়ার সরল তরীকা কোনটা? পরক্ষণেই আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করে বলেছেন, صراط الذين انعمت عليهم
(যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন।) তবে নিয়ামত পেয়েও অবাধ্য হয়ে গেছে এমন কেউ যাতে এতে শরীক থাকার ধারণা না করতে পারে তার জন্য সর্ব শেষে বলেছেন, غير المغضوب عليهم ولا الضالين (তারা গজব প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট নয়।)  এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল, আল্লাহ তাআলা নিজের প্রিয় বান্দাদের তরীকাকেই সীরাতে মুস্তাকীম তথা আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ কেউ মাওলা প্রদত্ত সরল তরীকায় চলতে চাইলে তাকে কেবল মাওলা প্রেমিকের তরীকায়ই চলতে হবে। এটা সূরা ফাতিহার শাব্দিক অর্থ থেকে প্রমাণিত হয়। যাদের তরীকা সিরাতে মুস্তাকীমের মাপকাঠি আল্লাহ তাআলা অন্যত্র তাদের উল্লেখ করে বলেছেন।

الذين انعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين

    (যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন তারা হলেন আম্বিয়া, সিদ্দীকীন, শুহাদা এবং সালেহীন। ( সূরা নিসা : ৬৯।) সূরা ফাতিহার সাথে এই আয়াত যুক্ত হলে স্পষ্ট অর্থ হয় যে, আম্বিয়া, সিদ্দীকীন, শুহাদা এবং সালেহীনের তরীকাই হল আল্লাহর কাছে সীরাতে মুস্তকীম ও আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত। এ আয়াতে সালেহীন অর্থাৎ নেককার বলতে হক্কানী পীর- মাশায়েখ, বুজুর্গানে দ্বীন এবং আল্লাহওয়ালাগণ উদ্দেশ্য। চাই তিনি যে যুগের হন, যে ভাষার হন বা যে দেশের হন না কেন। সুতরাং সূরা ফাতিহার প্রতি ঈমান রাখতে হলে তাকে প্রত্যেক যুগের হক্কানী পীর-মাশায়েখের উদ্ভাবিত ঈমান আমল মজবুত করার তরীকাকেও অনিবার্যভাবে সীরাতে মুস্তাকীমেরে মধ্যে শামিল মানতে হবে।

কতিপয় মানুষের পীর-মুরীদির বিষয়ে ভুল বোঝা-বুঝির উৎস
   
      কতিপয় লোক বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে গেলাম। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এদুটি আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ গোমরাহ হবে না। একটি হল কিতাবুল্লাহ (কুরআন শরীফ)। অন্যটি হল আমার সুন্নাহ (আমার জীবনাদর্শ)। এ হাদীসের স্পষ্ট মর্মার্থ হল, শুধু কুরআনÑহাদীসই মানতে হবে। অন্য কোন ব্যক্তিকে মানলে সে গোমরাহ হয়ে যাবে। তা ছাড়া হাদীসে এসেছে, দুজন বায়াত গ্রহণ করালে শেষোক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে দাও।Ñমুসলিম শরীফ ২: ১২৮)।
      এ কারণে সারা দেশে একজন বায়াতকারী হওয়া উচিৎ। মুসলিম শরীফের এ হাদীসের এমন ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কেননা এটা শুধু প্রশাসনিক বায়াত ছিল যা ইসলামী রাষ্ট্রের আমীর নির্ধারণের জন্য প্রযোজ্য। এটা শুধু মদনী জীবনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয়। আর বর্তমানে হক্কানী পীর-মাশায়েখ যে বায়াত করেন তা মক্কী ও মদনী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র থাকলেও ঐ সকল বিষয়ে বায়াত প্রযোজ্য। না থাকলেও প্রযোজ্য। কেননা এ সকল বিষয় প্রশাসনিক নয়। আর বিদায় হজ্জের উক্ত হাদীসের বিষয়ে বর্তমানে অনেকের থেকেই ঐরূপ বলতে শোনা যায়। কিন্তু এটা তাদের একটা মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি বলা যেতে পারে। কেননা হাদীস ভা-ারে শুধু এই একটি হাদীস থাকলেও তাদের ঐ দাবি সঠিক হত না। অথচ ঈমান আমল মজবুত করার জন্য বায়াত করার বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে যা ইতোপূর্বে  উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শকেও আঁকড়ে ধরতে বলেছেন-
 عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين 
(তোমরা আমার জীবনার্শ ও হিদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শকে আঁকড়ে ধর।Ñমিশকাত শরীফ ২৯ হা: ১৫৮।)
      এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক খলীফায়ে রাশেদ এর জীবনাদর্শকেও সুন্নত আখ্যায়িত করেছেন এবং আমাদেরকে তা মেনে চলার জন্য আদেশ করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদীন পরবর্তীতে চার জন প্রসিদ্ধ হলেও হাদীসে কোন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় নি। সুতরাং যারাই এ মাপকাঠিতে আসবেন এ হাদীসের ফলে তাদের জীবনাদর্শ সুন্নত আখ্যায়িত হবে এবং তারাও পরবর্তীদের সবার জন্য অনুকরণীয় হবেন। তাদের শরীয়ত সম্মত জীবনাদর্শ হাদীস বহির্ভূত বলা হাদীস শাস্ত্র সম্বন্ধে অজ্ঞতা হবে। বরং কেউ বললে সে হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী হবে।
   
 এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল, اصحابي كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم  (আমার সাহাবীগণ তারকারাজির ন্যায়। তাদের যাকে অনুসরণ করবে হিদায়াত পাবে।) এ হাদীস দ্বারা খোলাফায়ে রাশেদীনের সাথে সাথে সকল সাহাবীর জীবনাদর্শ অনুকরণীয় হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ হাদীসকে যঈফ আখ্যায়িত করার কোন স্বার্থকতা নেই। কেননা প্রচুর সংখ্যক আয়াত দ্বারা সাহাবীদের জীবনাদর্শ সকলের অনুকরণীয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন
 ومن .............. يتبع غيرسبيل المؤمنين نوله ماتولي ونصله جهنم . وساءت مصيرا

অর্থ : আর যারা .............. মু’মিনদের তরীকার বাইরে চলবে, আমরা তাদেরকে ঐদিকেই চালাব যা তারা অবলম্বন করেছে। আর তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। এটা তাদের নিকৃষ্টতর গন্তব্য স্থান। সূরা নিসা : ১১৫
 
এ আয়াতে মু’মিন বলতে সাহাবায়ে কেরামই বিশেষভাবে উদ্দেশ্য। কেননা কুরআন নাজিল হওয়ার সময় একমাত্র তাঁরাই মুমিন হিসাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে স্বীকৃত। এখানে যেহেতু মুমিন বহুবচন ব্যাবহার হয়েছে এ কারণে সকল সাহাবীর জীবনাদর্শ অনুকরণীয় হওয়া প্রমাণিত হয়। উক্ত হাদীস যঈফ হলেও যেহেতু তা হুবুহু আয়াতের অর্থ বহন করে এ কারণে এ হাদীসকে কেন্দ্র করে সকল সাহাবীকে হকের মানদ- হতে অস্বীকার করা আদৌ ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
فان امنوا بمثل ما امنتم به فقداهتدوا وان تولوا فانماهم في شقاق 
অর্থ : অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত তবেই তারা হেদায়াত প্রাপ্ত গণ্য হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারীতায় রয়েছে।  সূরা বাকারা : ১৩৭
 
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত পরবর্তী সকলের আমল বরং ঈমানের ক্ষেত্রেও সাহাবাদেরকে মাপকাঠি বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং উপরোক্ত হাদীসকে যঈফ আখ্যায়িত করে সাহাবায়ে কেরামকে হকের মাপকাঠি গণ্য না করার যুক্তি নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাহাবায়ে কেরামকে হকের মাপকাঠি গণ্য না করা হঠকারিতা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন : واذا قيل لهم امنوا كما امن الناس 
অর্থ : যখন তাদেরকে বলা হয় অন্যান্য মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সে ভাবে ঈমান আন।Ñসূরা বাকারা : ১৩।
 
      কুরআন নাযিল হওয়ার সময় যারা ঈমান এনেছেন তাঁরাই সাহাবায়ে কেরাম। এ আয়াতেও সকল সাহাবীকে ঈমানের জন্যও মাপকাঠি আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ- কারো ঈমান ও আমল আল্লাহ দরবারে কবুল হওয়ার জন্য তা কমপক্ষে সাহাবায়ে কেরামের ঈমান ও আমলের নমুনায় হওয়া জরুরি। বহু আয়াত থেকেই এরূপ প্রমাণিত হয়। এরপরেও একটি হাদীসকে কেন্দ্র করে সকল সাহাবীকে হক ও সত্যের মাপকাঠি গণ্য না করা ইসলাম প্রীতির পরিচয় বহন করে না। এর পরেও উক্ত হাদীসকে ইস্যু করে সাহাবাদেরকে কটাক্ষ করার সুযোগ নিতে চাইলে এ জাতীয় আয়াতের আলোকে তার ঈমান-আমল দুরুস্ত করা জরুরী।
     এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল-
من سن سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل عليها
(যে কেউ কোন নেক কাজ চালু করবে সে তার সওয়াব পাবে এবং তার পদ্ধতি অনুযায়ী যারা আমল করবে তাদের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সেও পাবে।) এ হাদীসে কিয়মত পর্যন্ত অনেক বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি অনুসরণীয় হওয়ার এবং তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমলকারী সকল ব্যক্তি সওয়াব প্রাপ্ত হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। এই অর্থে বুখারী শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
من احدث في امرنا هذا ماليس منه فهو رد
(যে এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা দ্বীন সমর্থিত নয় তা বর্জনীয়। (বুখারী)
এ হাদীসে দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন দ্বীন সমর্থিত হলে গ্রহণীয়। নইলে বর্জনীয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এই দুই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীন সমর্থিত অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হবে সে পদ্ধতি ও তার ইদ্ভাবক অনুসরণীয় হবেন। তার উপর প্রত্যেক আমলকারী সওয়াব প্রাপ্ত হবে। সে সকল নতুন পদ্ধতি বিদআত আখ্যায়িত করলে এবং উদ্ভাবকদেরকে বিদআতী বললে সে এ দুই হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী হবে। এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল,
مارأه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن
   (মুসলমানগণ যেটা ভাল হওয়ার রায় দেবেন সেটা আল্লাহর কাছে ভাল হওয়া গণ্য হবে। (মুসলিম শরীফ) এ হাদীছে শুধু সে সকল মুসলমান উদ্দেশ্য যাদের রায় চুড়ান্ত গণ্য করা হয়। যাঁরা আল্লাহভীরু এবং ইসলামের বিষয়ে গভীর জ্ঞানের আধিকারী হয়ে থাকেন। এমন মুসলমানগণ যে বিষয়টা কুরআন সুন্নাহর আলোকে ভাল হওয়ার রায় দেবেন তা পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে ভাল হওয়ার প্রমাণ বহন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
اتقوا فراسة المؤمن فانه ينظر بنورالله
আল্লাহ ওয়ালার ফেরাসত ও গভীর উপলব্ধিকে মূল্যায়ন করে চল। কেননা তিনি আল্লাহর নূরে দেখে বলেন। এ হাদীসের দৃষ্টিতেও সর্বযুগের সকল স্থানের আল্লাহ ওয়ালা আলেম ও হক্কানী পীর-মাশায়েখের মতাদর্শ গ্রহণীয় হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কেউ তা বিদআত আখ্যায়িত করলে সে এ সকল হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী গণ্য হবে। সুতরাং একটি হাদীসের আক্ষরিক অর্থকে কেন্দ্র করে হাদীস ভা-ারের অন্য সকল হাদীসকে উপেক্ষা করাকি গোমরাহী হবে না ? সুতরাং উপরোক্ত হাদীসগুলোর ধারাবাহিক  আলোচনা থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হল যে, সাহাবা কিরামের যুগ থেকে পরবর্তী সর্ব যুগের হক্কানী আলেম, পীর-মাশায়েখ যুগ চাহিদা ভাষা ও অঞ্চল ভেদে জনমনে ইসলামের বীজ সুদৃঢ় করার জন্য অনেক পন্থা উদ্ভাবন করতে থাকবেন। যার বিস্তারিত বিবরণ ও পদ্ধতি অবিকল ভাবে হাদীসে থাকবে না বরং থাকা জরুরিও নয়। বরং এমন দাবি করাও ঠিক নয়। কেননা ইসলাম বিস্তারে তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলো গ্রহণীয় হওয়ার কথা পূর্ব থেকেই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং ইল্লাল্লাহর যিকির ও পাগড়ী বা রুমাল ছড়িয়ে বায়াত করা ইত্যাদি হাদীসের আলোকে গ্রহণীয়, বিদআত নয়।

পীর ধরার উদ্দেশ্য আল্লাহওয়ালা হওয়া


      আল্লাহ তাআলা বলেন :
ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم  অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর মাহবুব ও ওলী হতে চাইলে আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে মাহবুব ও ওলী হিসাবে কবুল করে নেবেন এবং তিনি তোমাদের পাপরাশিকে মুছে দেবেন। -সূরা আল ইমরান ঃ ৩১।
 
     এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণকে ওলী হওয়ার মাপকাঠি নির্ণয় করেছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে দেখেই তাকে অনুসরণ করেছেন। এ জন্য তাঁরা জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর সাহচর্যেই উৎসর্গ করেছেন। যার ফলে তাঁরা উম্মতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামকে যারা অনুসরণ করেছেন তাঁরাই তাবেঈ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তাঁদেরকে যারা অনুসরণ করেছেন তাঁরা তাবে-তাবেঈ হিসাবে গণ্য হয়েছেন। এই অনুসরণের ফলেই তারা উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়েছেন এবং তাদের যুগকে সোনালী যুগ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, যদি কেউ আল্লাহর প্রিয় পাত্র তথা আল্লাহর ওলী হতে চায় তাহলে  তাকে সর্বপ্রথম কোন সুন্নাতের অনুসারী খাঁটি আল্লাহওয়ালার অনুসরণ করতে হবে। তাঁর হাতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিতে হবে। যে ভাবে সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন নিজ নিজ বড়দের সামনে ন্যাস্ত করে নিজেদের জীবনকে বরং যুগকে সোনালী করেছেন তাকেও নিজের যুগের কোন আল্লাহওয়ালার কাছে ন্যাস্ত করে দিতে হবে। 

       নিজের জীবনে পূর্ণতা অর্থাৎ গুনাহ মুক্ত জীবন শুধু  বই পুস্তক অধ্যয়নের দ্বারা হয় না। বরং গুনাহ মুক্ত ব্যক্তিদের অধীনে নিজেকে পরিচালনা করার মাধ্যমেই সম্ভব হয়। কেননা তারা হলেন রূহানী চিকিৎসক। গুনার সম্পর্ক রূহের সাথে, দেহের দ্বারা তার বাস্তবায়ন ঘটে। দিলকে গুনাহ মুক্ত করা বই পুস্তক অধ্যয়নের দ্বারা হয় না। বরং চেতনা জাগে। সোনালী যুগে একমাত্র সোহবতের বদৌলতেই তারা গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর গুনাহ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ আল্লাহর ওলী হতে পারে না। তাছাড়া আল্লাহর ওলীদের সাহচর্য ব্যতীত কেউ এযাবত গুনাহ মুক্ত জীবন লাভ করতে পারে নি এবং আল্লাহর ওলীও হতে পারে নি। যেহেতু প্রত্যেকের জন্য  গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন তথা আল্লাহর ওলী হওয়া ফরয এ কারণে যাদের কাছে গেলে এমন জীবন অর্জন হবে তাদের কাছে প্রত্যেকের যাওয়া এবং জীবনের সব কিছু তাদের পরামর্শে গড়ার চেষ্টা করা অতীব জরুরি। কেননা এ যাবত কোন ব্যক্তি আল্লাহওয়ালা হয়ে থাকলে এ পদ্ধতিতেই হয়েছেন। তবে এ উদ্দেশ্যে বায়াত হওয়া সুন্নাত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হক ও সত্যকে বুঝার এবং পূর্ণঅনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।-আমীন। সাল্লাল্লাহু আলান নাবীয়্যিল উম্মিয়্যি।
    

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like