Pages

আল্লাহর মহব্বত অর্জন

Saturday, August 23, 2014



      আল্লাহ তা’য়ালা আসমান, যমীন, গাছপালা, নদী-নালা, খাল-বিল, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা, পাহাড়-পর্বত, সব কিছুকে সুন্দরভাবে মানুষের উপকারের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ পাক এর সাথে সম্পর্ক করার জন্য।  মানব জাতি যা কিছু করবে সব কিছু যেন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য হয়। আমরা সারা জীবন যেন আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি মুতাবেক আমাদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারি। আল্লাহ তাআলার আমাদেরকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মখলুকের মহব্বত পরিত্যাগ করে আল্লাহ পাকের প্রতি  মহব্বত স্থাপন করা এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করা। যদি আল্লাহ পাক আমাদের এই মহব্বতকে গ্রহণ করে নেন, তাহলে  আমাদের দুনিয়ায় শান্তি হবে এবং আখেরাতে ভয় ভীতি থাকবে না। যেমন তিনি নিম্ন আয়াতে বলেছেন,
الا ان اولياء الله لا خوف عليهم ولاهم يحزنون
       অর্থাৎঃ  নিশ্চই আল্লাহর ওলীগণের কোন ভয় নেই, কোন চিন্তা নেই। আল্লাহ তাআলার ভালবাসা ও মহব্বত পেতে হলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন আদর্শকে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরী। এই কথার অর্থ হচ্ছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পূর্ণ জীবন কিভাবে কাটিয়েছেন, কোন কাজ করতে আদেশ করেছেন, কোন কাজ করতে নিষেধ করেছেন, কোন কাজ আমাদের করণীয়, কোন কাজ আমাদের বর্জনীয়, এই সকল কাজকে আমাদের প্রিয় নবী যে ভাবে তাঁর সারা জীবন পরিচালনা করেছেন ঠিক তেমনিভাবে আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।
       আমাদের করণীয় হল, কালেমা, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত সবগুলো ঠিক ভাবে গুরুত্বের সাথে আদায় করা। যিকির দরূদ ও নফল নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া। নফল নামাযের দ্বারা আল্লাহ পাকের নৈকট্য বেশী অর্জন করা যায়।
     
       আমাদের বর্জনীয় কার্যবলী হল, শিরিক, কুফর, তাকাব্বুর, হিংসা, বিদ্বেষ, মিথ্যা, জুলুম-অত্যাচার, দুনিয়ার মহব্বত, আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করা। এ সকল কাজ থেকে যদি নিজেদের অন্তরকে পবিত্র রাখা যায়, তাহলে অন্তরে নূর সৃষ্টি হবে, আল্লাহর মহব্বতে অন্তর পরিপূর্ণ থাকবে। শয়তানের ধোকা অন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর ভালবাসা অর্জন হবে।
 
       আল্লাহ পাক যদি আমাদের মহব্বতকে কবুল করে নেন এবং আমাদের প্রতি রাজি হয়ে যান তাহলে আমাদের মৃত্যুকালে তেমন কোন কষ্ট হবে না। কবরের জগতে সুখের নিদ্রায় থাকা সম্ভব হবে। হাশরের দিনে আল্লাহ পাকের আরশের ছায়ায় স্থান হবে। মিজানে হিসাব হবে না। পূলছিরাতে গুনাহের বোঝা বহন করতে হবে না। সর্বশেষে জান্নাতে স্থান হবে। সেখানে আল্লাহ তাআলার দিদার নছিব হবে, চিরস্থায়ী জান্নাত লাভ হবে। আমরা যেন আল্লাহ পাকের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মহব্বত আমাদের অন্তরে পয়দা করতে পারি আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন। আমীন।

কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব ও মুজিযা



      সকল প্রসংশা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি হাজারো নিয়ামতের মধ্যে আমাদেরকে ডুবিয়ে রেখেছেন। অসংখ্য দরূদ ও সালাম বিশ্ব নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম এর উপর, যার কারণে আমরা পবিত্র কুরআন ও শরীয়ত পেয়েছি এবং প্রকৃত মাহবুবের পরিচয় লাভ করেছি। ইসলামী মূলনীতির প্রথম ও প্রধান উৎস এবং বিশ্ব মানবতার মুক্তির একমাত্র সনদ হচ্ছে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন। যাতে রয়েছে শরীয়তের যাবতীয় বিধি-বিধান মূলসূত্র। আধ্যাত্মিক ও বাস্তব জীবনের মূল কথা অতি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম এর মাধ্যমে যার প্রতিফলন ঘটেছে। মানুষের আধ্যাত্মিক, জাগতিক সকল বিভাগের পর্যাপ্ত ও পরিপূর্ণ আলোচনার এক মাত্র অধ্যায় হচ্ছে আল-কুরআন। কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন-
 ولقد جئنهم بكتاب فصلناه علي علم هدي ورحمة لقوم يؤمنون-          অর্থাৎ- আমি তাদের কাছে এমন একটি কিতাব পৌঁছিয়েছি যা আমি স্বীয়  জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত। (সূরা আ’রাফ-৫২)

কুরআন শরীফের শ্রেষ্ঠত্ব

      পবিত্র আল-কুরআন এমন একটি গ্রন্থ যার সাথে বিশ্বের কোন গ্রন্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব নয়। বিশ্বে কোন গ্রন্থের সাবলিলতা, সাহিত্যকতা, মাধুর্যতা ও রচনা বিন্যাস কুরআনের সমকক্ষ হতে পারে না। যার চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করে বলেছেন, হে নবী! বলুন, যদি সমগ্র মানব ও জ্বিন জাতি একত্রিত হয়ে এই কুরআনের মত কোন গ্রন্থ আনতে চায় তাহলে আদৌও তা পারবে না। যদি তারা একে অপরে সাহায্য গ্রহণ করে তবুও পারবে না। (বনী ইসরাঈল- ৮৮)
      
আরবরা ছিল সাহিত্যমোদী। যখন কুরআন অবতীর্ণ হল তখন তার সাহিত্য রস প্লাবিত করল সাহিত্য সাগর। পরাজিত করল সাহিত্য কলার সকল কবি যাদুকরদেরকে। তখন আর তাদের বিষ্ময়ের সীমা রইল না। বিষ্ময়কর মধুময় ইলাহী কথা মালার বাক্যগুলোর আবৃতি হয়ে উঠল সাহিত্য মনের সর্বোচ্চ খোরাক। তারা মুগ্ধ হয়ে গেল এই কিতাবের তেলাওয়াতে। নিঃসন্দেহে ভাষা শৈলীর সাবলিলতা ও চমৎকারিত্বে আজও এর তুলনা নেই। তাই এ কথা চিরন্তন সত্য যে, এ কুরআন সর্বজনীন জীবন ব্যাবস্থা। তাই মহান আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে ‘আপনার উপর কুরআন নাযিল করেছি। তাতে প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে।’ রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের আলোকে হাদীস বর্ণনা করেন। কিছু কিছু মাসআলা ইজমা ও কিয়াসের আওতায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে হাদীস, ইজমা ও কিয়াস থেকে সব মাসআলা নির্গত হয়েছে। সেগুলোও পরোক্ষভাবে কুরআনের বর্ণিত মাসআলা। (তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন)
 
      কুরআনের আয়াতগুলো এক দৃষ্টিতে গদ্যের আবার অন্য দৃষ্টিতে পদ্যের ন্যায়। বিশ্বের কোন সাহিত্য এ ধরণের সংমিশ্্রন দেখা যায় না। আল-কুরআন এর শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান প্রমাণ হচ্ছে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগ থেকে অদ্যাবদি এ গ্রন্থ আবিকৃত অবস্থায় স্বকীয়তার উপর বিদ্যমান রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্তও এতে কোন পরিবর্ত হবে না।
 
     মূলত কথা হলো যে, এক বুজুর্গ বলেন যে, মাথা যখন শয়তানের দখলে চলে যায় তখন অযৌক্তিক সব কথা যুক্তির মাপকাঠি বলে মনে হয়। আর ভাল জিনিস মেনে নিতে পারে না। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনের জিম্মাদার। যুগে যুগে বিজ্ঞানীদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কুরআন অভূতপুর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে। এ মহাগ্রন্থে স্থান পেয়েছে এমন সব বিষ্ময়কর তথ্য, যার প্রতিটির কনিকাই সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ করে যে, এটা কোন মানুষের রচনা নয়। কোন মানুষের দ্বারা অদৃশ্য জগতের এই সব তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সকল বিজ্ঞানী মিলেও এখন পর্যন্ত আকাশের অস্তিত্বকেই স্পষ্ট করতে পারে নি। অথচ কুরআন শুনিয়েছে সপ্ত আকাশে রহস্য কথা। আকাশ ম-লীর বহু উর্ধ্বে অবস্থিত আল্লাহর আরশ কুরসির কথা। তাদের শক্তি হল মেশিনের দ্বারা পরিচালিত। অর্থাৎ- মেশিনের উপর নির্ভর, কিন্ত তাদের সে মেশিনের শক্তি হল চোখের নজর পর্যন্ত। হাওয়ার উপর থেকে আরশের উপরে কিছুই আজ পর্যন্ত তথ্য দিতে পারেনি। তাই কুরআনই হল মানুষের সব কিছুর সমস্যার সমাধান।
 
পৃথিবীর যে কোন গ্রন্থ একাধিকবার পাঠ করলে মনে বিরক্তির ভাব জন্মায় উহা নিজের কাছে পুরাতন মনে হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের কালামে পাকের এমন শান যে, ইহা শতবার পাঠ করলেও মনের তৃষ্ণা মিটেনা। এমনকি হাজার বার তেলাওয়াত করলেও ইহা কখনো পুরাতন হয় না। বরং যত বার পাঠ করা হয় ততই যেন উহার আকর্ষণ এবং মধুরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

পবিত্র কুরআন মাজীদের কিছু অলৌকিক ঘটনা

 
  •  রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা যখন কুরআন তেলাওয়াত করতেন, তখন কাফেররা আকর্ষণে বিমুগ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু কেউ কিছু বলত না। একদা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম মসজিদে কুরআন তেলাওয়াত করেন, তখন পাশে দাড়িয়ে আবু জাহল শুনে মুগ্ধ হয়। এরপর অন্যান্য কাফেররা শুনে ইসলাম গ্রহণ করে।
  •  হযরত ইসমাঈল শহীদ রহ. যখন এক পতিতালয় এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন  তার দারোয়ানকে বলেন যে, ভিতরে গিয়ে মেয়েদেরকে বল যে, একজন লোক তোমাদেরকে গজল শোনাবে। অতঃপর ইসমাঈল শহীদ রহ. তাদেরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান। মেয়েরা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে পড়ে। অতঃপর সবাই মুসলমান হয়ে যায়।
 কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদের জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুণ এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় আমাদের কল্যাণ দান করেন। আমীন।

কুরআন ও হাদীসের আলোকে পীর-মুরীদি



পীর-মুরীদি কী?
     
     হক্কানী পীর-মাশায়েখ আল্লাহওয়ালা বুজুর্গানে দ্বীন আল্লাহ ভোলা মানুষদেরকে আল্লাহ ওয়ালা বানানোর জন্য ঈমান ও আমলকে খাঁটি ও মজবুত করার লক্ষ্যে কুরআন সুন্নাহ থেকে যে সকল পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং কুরআন সুন্নাহর আলোকে যে সকল পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন এগুলোকে সাধারণ মানুষ পীর-মুরীদি বলে। একে বায়াত বা বায়াত করাও বলে। আবার কেউ একে সুলুক ও তরীকত এবং তাছাওউফ ও তাযকিয়াও বলে। পীর ফার্সী ভাষার শব্দ আরবীতে এর জন্য শায়েখ শব্দ ব্যবহার হয়। শায়েখ এর সর্বশেষ বহুবচন মাশায়েখ। সুতরাং পীর এবং মাশায়েখ একই অর্থের। তবে মুরীদ আরবী শব্দ। যিনি বায়াত করান তিনি পীর বা শায়েখ। আর যিনি বায়াত হন তিনি মুরীদ।

পীর শব্দ কুরআন-সুন্নায় নেই
 
     পীর শব্দ কুরআন-সুন্নায় কোথাও নেই এ কারণে অনেকেই একে বর্জনীয় ভাবেন। আসলে বিষয়টা হল, কাজ যদি কুরআন-সুন্নাহর তথা শরীয়তের মাপকাঠিতে হয় তাহলে সেটা নিঃসন্দেহে সহীহ মানা উচিত, নাম যেটাই হোক। যেমন নামায, রোযা, দরূদ ইত্যাদি শব্দ কুরআন-সুন্নায় কোথাও নেই। তাই বলে এগুলোকে কেউ বাতিল বলে না। বললে তার কথাই কুরআন হাদীসের বিপক্ষে হবে। অনুরূপ পীর-মুরীদীর তরীকার সকল কাজ যদি কুরআন সুন্নাহ তথা শরীয়তের মাপকাঠিতেই হয় তাহলে তার বিরোধিতা করা হবে নিজের ইহকাল ও পরকাল বরবাদ করা।

সাহাবী হওয়ার পরও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের থেকে বায়াত গ্রহণ

 
     বর্তমানে হক্কানী পীর মাশায়েখ যে সকল বিষয়ে বায়াত করান তা অবিকল ভাবে কুরআন হাদীসে পাওয়া যায়। অথচ অনেকেই মনে করেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু অমুসলিমদেরকে মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রেই বায়াত করিয়েছেন। অথচ বর্তমানে মুসলমানদেরকে বায়াত করানো হয় যা নিরর্থক। এ ধারণা ঠিক নয়।
     কেননা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের থেকেও বায়াত (আনুগত্যর শপথ) নিয়েছেন। অথচ তাদের ঈমানের সার্টিফিকেট কুরআন-হাদীস থেকে প্রমাণিত। তা ছাড়া যে সকল অবস্থা, ক্ষেত্রে বা বিষয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়াত নিয়েছেন তা যদি বিশেষ অবস্থা বা সময়ের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে থাকে তা হলে তা পরবর্তীতে বহাল থাকবে না। নইলে তা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। যেমন- ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে মক্কা থেকে অন্যত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে তিনি বায়াত করাতেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের উদ্দেশ্যে অনেকে বায়াতের জন্য উপস্থিত হলেও তিনি তাদেরকে বায়াত করান নি। অনুরূপ হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় হযরত উসমান রা. মক্কায় শহীদ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হুদায়বিয়ায় উপস্থিত সবাইকে বায়াত করান। একেই ‘বায়াতে রেদওয়ান’ বলা হয়। পরে এ বায়াত করান নি। তবে তিনি ১. ঈমানের উপর অবিচল থাকার জন্য, ২. নামায কায়েমের জন্য, ৩. যাকাত আদায়ের জন্য, ৪. মৃত্যুর পর বিলাপ না করার, ৫. জিহাদ করার এবং ৬. জিহাদের ময়দানে ধৈর্য্য ধারণের জন্য, ৭. চুরি না করার, ৮. অপবাদ না দেয়ার, ৯. প্রত্যেক কল্যাণকর কাজে প্রস্তুত থাকার, এবং ১০. আল্লাহর আরো যত বিধান আছে সে গুলোর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন ও কখনো অবাধ্য না হওয়ার উপর পুরুষ ও মহিলা সাহাবীদের থেকে বায়াত গ্রহণ করেছেন। এ সময় তারা অমুসলিম ছিলেন না। বরং তাঁরা কিয়ামত পর্যন্ত পরবর্তী সকল উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ঈমান ও আমলের অধিকারী ছিলেন। আর বর্তমান পীর মাশায়েখ ঈমান ও আমল খাঁটি করার লক্ষ্যে মুসলমান মহিলা ও পুরুষ থেকে এ সকল বিষয়েই বায়াত নিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে নিচে কুরআন ও হাদীস থেকে প্রমাণ দেয়া হল।
  اخبرني عروة ان عائشة زوج النبي صلي الله عليه وسلم اخبرته ان رسول الله صلي الله عليه وسلم كان يمتحن من هاجر اليه من المؤمنات بهذه الأ ية بقول الله – يا ايها النبي اذا جاءك المؤمنات يبايعنك علي ان لا يشركن بالله شيئا ولا يسرقن ولايزنين ولا يقتلن اولادهن ولا يأتين ببهتان يفترينه بين ايديهن وارجلهن ولا يعصينك في معروف فبايعهن واستغفرلهن الله ان الله غفور رحيم ، قال عروة قالت عائشة فمن اقر بهذا الشرط من المؤمنات قال لها رسول الله صلي الله عليه وسلم قد بايعتك كلاما ولا والله ما مست يده يدامرأة قط في المبايعة ، ما يبايعهن الا بقوله قد بايعتك علي ذلك- رواه البخاري                                                                   

     উরওয়া রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়শা রা. তাকে বলেছেন, কোন মু’মিন মহিলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে হিজরত করে এলে, তিনি তাকে আল্লাহর এ আয়াতের ভিত্তিতে পরীক্ষা করতেন-অর্থ ঃ হে নবী! মু’মিন নারীগণ যখন আপনার কাছে এই মর্মে বায়াত করতে আসে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানকে হত্যা করবে না, তারা সজ্ঞানে কোন অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকর্মে আপনাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বায়াত গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (৬০ ঃ ১২)
      উরওয়া রহ. বলেন আয়শা রা. বলেছেন, যে মু’মিন মহিলা এসব শর্ত মেনে নিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলতেন, আমি কথার মাধ্যমে তোমাকে বায়াত করে নিলাম। আল্লাহর কসম ! বায়াত গ্রহণ কালে কোন নারীর হাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতকে স্পর্শ করে নি। নারীদেরকে তিনি শুধু এ কথার দ্বারাই বায়াত করতেন।قد بايعتك علي ذلك   অর্থাৎ- আমি তোমাকে এ কথার উপর বায়াত করলাম। সূত্র ঃ ২: ৭৫৭, বুখারী শরীফ, হাদীস নং ৪৫৩১।
    
     এ হাদীসে হযরত আয়েশা রা. মহিলাদের বায়াত গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছেন যা সূরা মুমতাহিনায় উল্লেখ হয়েছে। এখানে যাদের বায়াত করার কথা উল্লেখ হয়েছে তারা আল্লাহর কাছে ঈমানদার মহিলা সাহাবী হিসেবে সাব্যস্ত। তদুপরি তারা যে সকল বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে বায়াত গ্রহণের জন্য এসেছেন আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের থেকে ঐ সকল বিষয়ে বায়াত করাতে আদেশ করেছেন। আর এ বিষয়গুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং বিষয়গুলো কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। সুতরাং বর্তমানে হক্কানী পীর-মাশায়েখ মহিলাদের থেকেও এ সকল বিষয় সহ আরো অন্যন্য নেকের বিষয়ে বায়াত করাতে পারেন। এটা কেউ অস্বীকার করলে তার থেকে কুরআনের এ আয়াত এবং বুখারী শরীফের এ হাদীস অস্বীকার করা হবে। পুরুষ সাহাবীদের ক্ষেত্রেও অবিকল এরূপ বিষয়ের উপর বায়াত করার বর্ণনা বুখারী শরীফে উল্লেখ হয়েছে।
             قال اخبرنا ابو إدريس عائذ الله بن عبد الله ان عبادة بن الصامت رضي الله عنه وكان شهيد بدرا وهو احد النقباء ليلة العقبة ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال وحوله عصابة من اصحابه بايعوني علي ان لاتشركوا بالله شيئا ولا تسرقوا ولاتزنوا ولاتقتلوا اولادكم ولا تأتوا ببهتان تفترونه بين أيديكم وأرجلكم ولا تعصوا في معروف فمن وفي منكم فأجره علي الله ومن أصاب من ذلك شيئا فعوقب في الدنيا فهو كفارة له ومن أصاب من ذلك شيئا ثم ستره الله فهو إلي الله إن شاء عفا عنه وإن شاء عاقبه فبايعناه علي ذلك
 رواه البخاري والنسائي
   ‘আয়িযুল্লাহ ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ও লাইলাতুল আকাবার একজন নকীব ‘উবাদা ইব্ন সামিত রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পার্শ্বে উপস্থিত এক দল সাহাবীকে তিনি ইরশাদ করেন, “তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়াত গ্রহণ কর যে, আল্লাহর সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না। তোমাদের মধ্যে যে তা পূরণ করবে, সে তার বিনিময় আল্লাহর কাছে পাবে। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং দুনিয়াতে তার শাস্তি পেয়ে গেলে, তবে তা হবে তার জন্য কাফ্ফারা। আর কেউ এর কোন একটিতে লিপ্ত হয়ে পড়লে এবং আল্লাহ তা অপ্রকাশিত রাখলে, তবে তা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি যদি চান তাকে মাফ করে দিবেন। আর যদি চান তাকে শাস্তি দিবেন। আমরা এর উপর বায়াত গ্রহণ করলাম।- সূত্র ঃ বুখারী শরীফ ১:৭, হাদীস নং ১৭; নাসাঈ ২:১৬৬, হাদীস ৪২১১ ।
 
      এ হাদীসে একদল সাহাবীর উপস্থিতিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল বিষয়ের উপর বায়াত করিয়েছেন তা সর্ব যুগের জন্যই প্রযোজ্য এবং জরুরী। সুতরাং বর্তমানে হক্কানী পীর- মাশায়েখ এ সকল বিষয় সহ আরো অন্যান্য নেকের বিষয় বায়াত করালে তা জরুরি বিষয়ে নবীর সুন্নাত আদায় করা হবে। তা ভিত্তিহীন বা বিদআত আখ্যায়িত করা বৈধ হবে না। উপরোক্ত আয়াত এবং হাদীসে অমুসলিমদের ঈমান কবুলের সময়ের বায়াতের কথা উল্লেখ হয়েছে। এমন দাবি তো কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়। করলে তা তাহরীফ হবে। বরং তাঁরাই তখন ঈমানে আমলে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত তারাই শ্রেষ্ঠ। তবুও তাদের থেকে বায়াত নেয়া হয়েছে। সুতরাং বর্তমান মুসলমান এবং আলেম-উলামা থেকেও এই বায়াত নেয়া হলে তা  অবিকল কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ি হবে। এ দু’য়ের বহির্ভুত হবে না।
    স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ. বোখারী শরীফে বায়াতের বিষয়ে একটা শিরোনাম এভাবে লিখেছেন, باب البيعة علي اقامة الصلواة (নামায কায়েমের বায়াত গ্রহণ) এর পর হাদীস উল্লেখ করেছেন,

حدثنا محمد بن المثني قال حدثنا يحيي قال حدثنا إسماعيل قال حدثنا قيس عن جرير بن عبدالله قال بايعت رسول الله صلي الله عليه وسلم علي اقامة الصلواة و إيتاء الزكاة والنصح لكل مسلم                             
 
হযরত মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না রহ. ........ জারীর বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট সালাত আদায়, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার বায়াত গ্রহণ করেছি। সূত্র: বুখারী ১:৭৫, হাদীস:৪৯৯। এছাড়া বুখারী, মুসলিম, আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ ও মুওয়াত্তা শরীফে নবীদের পরে কিয়ামত পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ মুসলামন তথা সাহাবীদের থেকে আরো বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়াত নিয়েছেন।

সূরা ফাতিহায় পীর-মুরীদির আলোচনা
    
     আল্লাহ তাআলা মানব-দানবের হেদায়েতের জন্য কুরআন নাযিল করেছেন। সূরা ফাতিহা তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ। সুতরাং সূরা ফাতিহার মধ্যে যে বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে সে গুলোর গুরুত্ব পূর্ণকুরআনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ তাআলা প্রথম পাঁচ আয়াতে তাঁর গুণগান ও বান্দার কাকুতি-মিনতির কথা উল্লেখ করেছেন। তারপর ছয় নং আয়াতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে সকল মানব-দানবের প্রতি আদশ জারি করেছেন যে, তারা যেন মাওলার কাছে সিরাতে মুস্তাকীমের হিদায়াত বা মাওলাকে পাওয়ার সহজ তরীকায় চলার ও বহাল থাকার জন্য শয়নে-স্বপনে, ঘুম-জাগরণে সদা দোআ করতে থাকে। এখন প্রশ্ন হল সিরাতে মুস্তাকীম বা মাওলাকে পাওয়ার সরল তরীকা কোনটা? পরক্ষণেই আল্লাহ তাআলা এ প্রশ্নের উত্তর উল্লেখ করে বলেছেন, صراط الذين انعمت عليهم
(যাদের প্রতি আপনি নিয়ামত দান করেছেন।) তবে নিয়ামত পেয়েও অবাধ্য হয়ে গেছে এমন কেউ যাতে এতে শরীক থাকার ধারণা না করতে পারে তার জন্য সর্ব শেষে বলেছেন, غير المغضوب عليهم ولا الضالين (তারা গজব প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্ট নয়।)  এখানে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হল, আল্লাহ তাআলা নিজের প্রিয় বান্দাদের তরীকাকেই সীরাতে মুস্তাকীম তথা আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ কেউ মাওলা প্রদত্ত সরল তরীকায় চলতে চাইলে তাকে কেবল মাওলা প্রেমিকের তরীকায়ই চলতে হবে। এটা সূরা ফাতিহার শাব্দিক অর্থ থেকে প্রমাণিত হয়। যাদের তরীকা সিরাতে মুস্তাকীমের মাপকাঠি আল্লাহ তাআলা অন্যত্র তাদের উল্লেখ করে বলেছেন।

الذين انعم الله عليهم من النبيين والصديقين والشهداء والصالحين

    (যাদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন তারা হলেন আম্বিয়া, সিদ্দীকীন, শুহাদা এবং সালেহীন। ( সূরা নিসা : ৬৯।) সূরা ফাতিহার সাথে এই আয়াত যুক্ত হলে স্পষ্ট অর্থ হয় যে, আম্বিয়া, সিদ্দীকীন, শুহাদা এবং সালেহীনের তরীকাই হল আল্লাহর কাছে সীরাতে মুস্তকীম ও আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াত। এ আয়াতে সালেহীন অর্থাৎ নেককার বলতে হক্কানী পীর- মাশায়েখ, বুজুর্গানে দ্বীন এবং আল্লাহওয়ালাগণ উদ্দেশ্য। চাই তিনি যে যুগের হন, যে ভাষার হন বা যে দেশের হন না কেন। সুতরাং সূরা ফাতিহার প্রতি ঈমান রাখতে হলে তাকে প্রত্যেক যুগের হক্কানী পীর-মাশায়েখের উদ্ভাবিত ঈমান আমল মজবুত করার তরীকাকেও অনিবার্যভাবে সীরাতে মুস্তাকীমেরে মধ্যে শামিল মানতে হবে।

কতিপয় মানুষের পীর-মুরীদির বিষয়ে ভুল বোঝা-বুঝির উৎস
   
      কতিপয় লোক বলেন, বিদায় হজ্জে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে গেলাম। তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত এদুটি আঁকড়ে ধরে রাখবে ততক্ষণ গোমরাহ হবে না। একটি হল কিতাবুল্লাহ (কুরআন শরীফ)। অন্যটি হল আমার সুন্নাহ (আমার জীবনাদর্শ)। এ হাদীসের স্পষ্ট মর্মার্থ হল, শুধু কুরআনÑহাদীসই মানতে হবে। অন্য কোন ব্যক্তিকে মানলে সে গোমরাহ হয়ে যাবে। তা ছাড়া হাদীসে এসেছে, দুজন বায়াত গ্রহণ করালে শেষোক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে দাও।Ñমুসলিম শরীফ ২: ১২৮)।
      এ কারণে সারা দেশে একজন বায়াতকারী হওয়া উচিৎ। মুসলিম শরীফের এ হাদীসের এমন ব্যাখ্যা ঠিক নয়। কেননা এটা শুধু প্রশাসনিক বায়াত ছিল যা ইসলামী রাষ্ট্রের আমীর নির্ধারণের জন্য প্রযোজ্য। এটা শুধু মদনী জীবনের ক্ষেত্রে গ্রহণীয়। আর বর্তমানে হক্কানী পীর-মাশায়েখ যে বায়াত করেন তা মক্কী ও মদনী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র থাকলেও ঐ সকল বিষয়ে বায়াত প্রযোজ্য। না থাকলেও প্রযোজ্য। কেননা এ সকল বিষয় প্রশাসনিক নয়। আর বিদায় হজ্জের উক্ত হাদীসের বিষয়ে বর্তমানে অনেকের থেকেই ঐরূপ বলতে শোনা যায়। কিন্তু এটা তাদের একটা মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝি বলা যেতে পারে। কেননা হাদীস ভা-ারে শুধু এই একটি হাদীস থাকলেও তাদের ঐ দাবি সঠিক হত না। অথচ ঈমান আমল মজবুত করার জন্য বায়াত করার বিষয়ে আরো অনেক হাদীস রয়েছে যা ইতোপূর্বে  উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শকেও আঁকড়ে ধরতে বলেছেন-
 عليكم بسنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين 
(তোমরা আমার জীবনার্শ ও হিদায়াত প্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনাদর্শকে আঁকড়ে ধর।Ñমিশকাত শরীফ ২৯ হা: ১৫৮।)
      এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক খলীফায়ে রাশেদ এর জীবনাদর্শকেও সুন্নত আখ্যায়িত করেছেন এবং আমাদেরকে তা মেনে চলার জন্য আদেশ করেছেন। খোলাফায়ে রাশেদীন পরবর্তীতে চার জন প্রসিদ্ধ হলেও হাদীসে কোন সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় নি। সুতরাং যারাই এ মাপকাঠিতে আসবেন এ হাদীসের ফলে তাদের জীবনাদর্শ সুন্নত আখ্যায়িত হবে এবং তারাও পরবর্তীদের সবার জন্য অনুকরণীয় হবেন। তাদের শরীয়ত সম্মত জীবনাদর্শ হাদীস বহির্ভূত বলা হাদীস শাস্ত্র সম্বন্ধে অজ্ঞতা হবে। বরং কেউ বললে সে হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী হবে।
   
 এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল, اصحابي كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم  (আমার সাহাবীগণ তারকারাজির ন্যায়। তাদের যাকে অনুসরণ করবে হিদায়াত পাবে।) এ হাদীস দ্বারা খোলাফায়ে রাশেদীনের সাথে সাথে সকল সাহাবীর জীবনাদর্শ অনুকরণীয় হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ হাদীসকে যঈফ আখ্যায়িত করার কোন স্বার্থকতা নেই। কেননা প্রচুর সংখ্যক আয়াত দ্বারা সাহাবীদের জীবনাদর্শ সকলের অনুকরণীয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন
 ومن .............. يتبع غيرسبيل المؤمنين نوله ماتولي ونصله جهنم . وساءت مصيرا

অর্থ : আর যারা .............. মু’মিনদের তরীকার বাইরে চলবে, আমরা তাদেরকে ঐদিকেই চালাব যা তারা অবলম্বন করেছে। আর তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। এটা তাদের নিকৃষ্টতর গন্তব্য স্থান। সূরা নিসা : ১১৫
 
এ আয়াতে মু’মিন বলতে সাহাবায়ে কেরামই বিশেষভাবে উদ্দেশ্য। কেননা কুরআন নাজিল হওয়ার সময় একমাত্র তাঁরাই মুমিন হিসাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কাছে স্বীকৃত। এখানে যেহেতু মুমিন বহুবচন ব্যাবহার হয়েছে এ কারণে সকল সাহাবীর জীবনাদর্শ অনুকরণীয় হওয়া প্রমাণিত হয়। উক্ত হাদীস যঈফ হলেও যেহেতু তা হুবুহু আয়াতের অর্থ বহন করে এ কারণে এ হাদীসকে কেন্দ্র করে সকল সাহাবীকে হকের মানদ- হতে অস্বীকার করা আদৌ ঠিক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
فان امنوا بمثل ما امنتم به فقداهتدوا وان تولوا فانماهم في شقاق 
অর্থ : অতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত তবেই তারা হেদায়াত প্রাপ্ত গণ্য হবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তারাই হঠকারীতায় রয়েছে।  সূরা বাকারা : ১৩৭
 
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা কিয়ামত পর্যন্ত পরবর্তী সকলের আমল বরং ঈমানের ক্ষেত্রেও সাহাবাদেরকে মাপকাঠি বানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং উপরোক্ত হাদীসকে যঈফ আখ্যায়িত করে সাহাবায়ে কেরামকে হকের মাপকাঠি গণ্য না করার যুক্তি নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাহাবায়ে কেরামকে হকের মাপকাঠি গণ্য না করা হঠকারিতা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন : واذا قيل لهم امنوا كما امن الناس 
অর্থ : যখন তাদেরকে বলা হয় অন্যান্য মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সে ভাবে ঈমান আন।Ñসূরা বাকারা : ১৩।
 
      কুরআন নাযিল হওয়ার সময় যারা ঈমান এনেছেন তাঁরাই সাহাবায়ে কেরাম। এ আয়াতেও সকল সাহাবীকে ঈমানের জন্যও মাপকাঠি আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ- কারো ঈমান ও আমল আল্লাহ দরবারে কবুল হওয়ার জন্য তা কমপক্ষে সাহাবায়ে কেরামের ঈমান ও আমলের নমুনায় হওয়া জরুরি। বহু আয়াত থেকেই এরূপ প্রমাণিত হয়। এরপরেও একটি হাদীসকে কেন্দ্র করে সকল সাহাবীকে হক ও সত্যের মাপকাঠি গণ্য না করা ইসলাম প্রীতির পরিচয় বহন করে না। এর পরেও উক্ত হাদীসকে ইস্যু করে সাহাবাদেরকে কটাক্ষ করার সুযোগ নিতে চাইলে এ জাতীয় আয়াতের আলোকে তার ঈমান-আমল দুরুস্ত করা জরুরী।
     এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল-
من سن سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل عليها
(যে কেউ কোন নেক কাজ চালু করবে সে তার সওয়াব পাবে এবং তার পদ্ধতি অনুযায়ী যারা আমল করবে তাদের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সেও পাবে।) এ হাদীসে কিয়মত পর্যন্ত অনেক বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি অনুসরণীয় হওয়ার এবং তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি অনুযায়ী আমলকারী সকল ব্যক্তি সওয়াব প্রাপ্ত হওয়ার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। এই অর্থে বুখারী শরীফে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
من احدث في امرنا هذا ماليس منه فهو رد
(যে এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা দ্বীন সমর্থিত নয় তা বর্জনীয়। (বুখারী)
এ হাদীসে দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন দ্বীন সমর্থিত হলে গ্রহণীয়। নইলে বর্জনীয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং এই দুই হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীন সমর্থিত অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হবে সে পদ্ধতি ও তার ইদ্ভাবক অনুসরণীয় হবেন। তার উপর প্রত্যেক আমলকারী সওয়াব প্রাপ্ত হবে। সে সকল নতুন পদ্ধতি বিদআত আখ্যায়িত করলে এবং উদ্ভাবকদেরকে বিদআতী বললে সে এ দুই হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী হবে। এ বিষয়ে আরো একটি হাদীস হল,
مارأه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن
   (মুসলমানগণ যেটা ভাল হওয়ার রায় দেবেন সেটা আল্লাহর কাছে ভাল হওয়া গণ্য হবে। (মুসলিম শরীফ) এ হাদীছে শুধু সে সকল মুসলমান উদ্দেশ্য যাদের রায় চুড়ান্ত গণ্য করা হয়। যাঁরা আল্লাহভীরু এবং ইসলামের বিষয়ে গভীর জ্ঞানের আধিকারী হয়ে থাকেন। এমন মুসলমানগণ যে বিষয়টা কুরআন সুন্নাহর আলোকে ভাল হওয়ার রায় দেবেন তা পূর্ব থেকেই আল্লাহর কাছে ভাল হওয়ার প্রমাণ বহন করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন-
اتقوا فراسة المؤمن فانه ينظر بنورالله
আল্লাহ ওয়ালার ফেরাসত ও গভীর উপলব্ধিকে মূল্যায়ন করে চল। কেননা তিনি আল্লাহর নূরে দেখে বলেন। এ হাদীসের দৃষ্টিতেও সর্বযুগের সকল স্থানের আল্লাহ ওয়ালা আলেম ও হক্কানী পীর-মাশায়েখের মতাদর্শ গ্রহণীয় হওয়ার প্রমাণ বহন করে। কেউ তা বিদআত আখ্যায়িত করলে সে এ সকল হাদীসের বিরুদ্ধাচারণকারী গণ্য হবে। সুতরাং একটি হাদীসের আক্ষরিক অর্থকে কেন্দ্র করে হাদীস ভা-ারের অন্য সকল হাদীসকে উপেক্ষা করাকি গোমরাহী হবে না ? সুতরাং উপরোক্ত হাদীসগুলোর ধারাবাহিক  আলোচনা থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হল যে, সাহাবা কিরামের যুগ থেকে পরবর্তী সর্ব যুগের হক্কানী আলেম, পীর-মাশায়েখ যুগ চাহিদা ভাষা ও অঞ্চল ভেদে জনমনে ইসলামের বীজ সুদৃঢ় করার জন্য অনেক পন্থা উদ্ভাবন করতে থাকবেন। যার বিস্তারিত বিবরণ ও পদ্ধতি অবিকল ভাবে হাদীসে থাকবে না বরং থাকা জরুরিও নয়। বরং এমন দাবি করাও ঠিক নয়। কেননা ইসলাম বিস্তারে তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলো গ্রহণীয় হওয়ার কথা পূর্ব থেকেই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং ইল্লাল্লাহর যিকির ও পাগড়ী বা রুমাল ছড়িয়ে বায়াত করা ইত্যাদি হাদীসের আলোকে গ্রহণীয়, বিদআত নয়।

পীর ধরার উদ্দেশ্য আল্লাহওয়ালা হওয়া


      আল্লাহ তাআলা বলেন :
ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفرلكم ذنوبكم  অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর মাহবুব ও ওলী হতে চাইলে আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে মাহবুব ও ওলী হিসাবে কবুল করে নেবেন এবং তিনি তোমাদের পাপরাশিকে মুছে দেবেন। -সূরা আল ইমরান ঃ ৩১।
 
     এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণকে ওলী হওয়ার মাপকাঠি নির্ণয় করেছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখে দেখেই তাকে অনুসরণ করেছেন। এ জন্য তাঁরা জীবনের অধিকাংশ সময় তাঁর সাহচর্যেই উৎসর্গ করেছেন। যার ফলে তাঁরা উম্মতের মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ হয়েছেন। সাহাবায়ে কেরামকে যারা অনুসরণ করেছেন তাঁরাই তাবেঈ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তাঁদেরকে যারা অনুসরণ করেছেন তাঁরা তাবে-তাবেঈ হিসাবে গণ্য হয়েছেন। এই অনুসরণের ফলেই তারা উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর প্রিয় পাত্র হয়েছেন এবং তাদের যুগকে সোনালী যুগ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, যদি কেউ আল্লাহর প্রিয় পাত্র তথা আল্লাহর ওলী হতে চায় তাহলে  তাকে সর্বপ্রথম কোন সুন্নাতের অনুসারী খাঁটি আল্লাহওয়ালার অনুসরণ করতে হবে। তাঁর হাতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিতে হবে। যে ভাবে সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন নিজ নিজ বড়দের সামনে ন্যাস্ত করে নিজেদের জীবনকে বরং যুগকে সোনালী করেছেন তাকেও নিজের যুগের কোন আল্লাহওয়ালার কাছে ন্যাস্ত করে দিতে হবে। 

       নিজের জীবনে পূর্ণতা অর্থাৎ গুনাহ মুক্ত জীবন শুধু  বই পুস্তক অধ্যয়নের দ্বারা হয় না। বরং গুনাহ মুক্ত ব্যক্তিদের অধীনে নিজেকে পরিচালনা করার মাধ্যমেই সম্ভব হয়। কেননা তারা হলেন রূহানী চিকিৎসক। গুনার সম্পর্ক রূহের সাথে, দেহের দ্বারা তার বাস্তবায়ন ঘটে। দিলকে গুনাহ মুক্ত করা বই পুস্তক অধ্যয়নের দ্বারা হয় না। বরং চেতনা জাগে। সোনালী যুগে একমাত্র সোহবতের বদৌলতেই তারা গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর গুনাহ মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কেউ আল্লাহর ওলী হতে পারে না। তাছাড়া আল্লাহর ওলীদের সাহচর্য ব্যতীত কেউ এযাবত গুনাহ মুক্ত জীবন লাভ করতে পারে নি এবং আল্লাহর ওলীও হতে পারে নি। যেহেতু প্রত্যেকের জন্য  গুনাহ মুক্ত জীবন যাপন তথা আল্লাহর ওলী হওয়া ফরয এ কারণে যাদের কাছে গেলে এমন জীবন অর্জন হবে তাদের কাছে প্রত্যেকের যাওয়া এবং জীবনের সব কিছু তাদের পরামর্শে গড়ার চেষ্টা করা অতীব জরুরি। কেননা এ যাবত কোন ব্যক্তি আল্লাহওয়ালা হয়ে থাকলে এ পদ্ধতিতেই হয়েছেন। তবে এ উদ্দেশ্যে বায়াত হওয়া সুন্নাত।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হক ও সত্যকে বুঝার এবং পূর্ণঅনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।-আমীন। সাল্লাল্লাহু আলান নাবীয়্যিল উম্মিয়্যি।
    

মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা



       শিক্ষা আনে চেতনা। চেতনা আনে বিপ্লব। সুতরাং যেমন শিক্ষা হবে তেমনই বিপ্লব ঘটবে। ইংরেজ জাতি নিজেদের শিক্ষা বিস্তারের  মাধ্যমেই সারা বিশ্বে ছেয়ে গেছে। তারা নিজেদের ভাষার ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছে যার ফলে বিশ্বের সর্বত্র তাদের কালচার শিক্ষা সভ্যতা অন্যরাও সংরক্ষণ করে চলছে। আমরা যদি জাতীয় পর্যায়ে আমাদের ইসলামী শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে চাই তাহলে এর জন্য জাতির ভাষায় আমাদেরকে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। নইলে আমরা তাদের মধ্যে দ্বীন পরিপূর্ণভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হব না। 
     নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের সময় যেহেতু আরবী ভাষা সাহিত্যের চর্চা তুঙ্গে ছিল এ কারণে তাঁকে আরবী ভাষা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ যোগ্যতা দেয়া হয়েছিল। তাঁর ভাষা শৈলীর সামনে সকল সাহিত্যিক কবি নির্বাক হয়ে যেত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি আরবের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমরা নবীর প্রকৃত উত্তরসূরী হওয়ার দাবিদার। কিন্তু মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জনের প্রতি আমাদের জাতীয়ভাবে বিশেষ কোন উৎসাহ পরিলক্ষিত হয় না। জরিপ করলে হয়ত এটাই প্রমাণিত হবে যে, আমরা নিজেদের মাতৃভাষাকে যেভাবে উপেক্ষা করে চলি এরূপ পৃথিবীতে অন্য কোন জাতি পাওয়া যাবে না ।

বেহায়াপনা দিবস ও ইসলামের আলোক দিশা

Friday, August 22, 2014



প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য হল, ইসলাম ধর্ম পেয়ে গর্ববোধ করা এবং পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে পালন করা। ইসলামী আকীদা বিশ্বাস, নীতি-নৈতিকতা, কৃষ্টি-কালচার ও আদর্শকে শ্রেষ্ঠ মনে করা এবং এগুলোকে সর্বোতভাবে পালন করার জন্য অত্যন্ত নিষ্ঠবান হওয়া। এরই সাথে বিজাতীয় যে কোন আচার অনুষ্ঠান ও কৃষ্টি-কালচারকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করা।

   ইসলাম ধর্ম গোটা মানব জাতির আদর্শ। এটা সর্বদিক দিয়ে পরিপূর্ণ। সে গোটা মানবজাতির উদ্ভুত বিষয় নিয়ে কথা বলে, দিক-নির্দেশনা দেয়। কখনও আদেশ আকারে, কখনও বা নিষেধ আকারে। ইসলামের একটি মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি বা মূলনীতি হচ্ছে, সর্বদা কাফের, মুশরিক, ইহুদী, নাসারাদের সাথে úূর্ণ বৈষম্য রক্ষা করে চলা। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ-প্রযুক্তি আর টেকনিক্যাল কিছু বিষয় ব্যতীত অন্য সব বিষয়ে বিজাতিদের অনুসরণকে ইসলাম সমর্থ করে না। বলা বাহুল্য, বিজাতিদের অনুসরণ ও অনুকরণ যদি এমন বিষয়ে হয় যা ইসলামের আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক ও নৈতিকতার উপর আঘাত হানে বা আরো অন্যান্য হারামের দিকে ধাবিত করে তাহলে তা সম্পূর্ণ হারাম হিসাবে প্রত্যাখ্যাত। আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচুর সংখ্যক আয়াত ও হাদীসে এ ধরণের অনুসরণ ও অনুকরণ থেকে মুসলমানদের নিষেধ করেছেন। কিন্তু আজ সজ্ঞানে-অজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় ও অনিচ্ছায় সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত নগ্নভাবে আমরা তাদের অনুসরণ করছি। এ ভাবে একে একে ইসলামের বক্ষস্থলে কুঠারাঘাত হানছি, যা একজন মুসলমান বা মুসলিম সমাজ কখনো করতে পারে না। 


বিজাতিদের অনুসরণের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে নোংরামীর উৎস ১৪ই ফেব্রুয়ারী ‘ভ্যালেনটাইন ডে’-বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এ দিবসে খ্রীষ্টীয় সেন্ট ভ্যালেনটাইনের ভালবাসার প্রতি সমর্থন জানিয়ে তার স্মরণে একদল তরুণ/তরুণী আপন ভালবাসার পাত্রকে গোলাপফুল, ভ্যালেনটাইন কার্ড, বিভিন্ন উপহার সামগ্রী উপহার দেয়। বেশ কিছু সংগঠন এ ব্যাপারে ব্যাপক কর্মসূচী পালন করে।  এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিদ্যালয়, স্কুল ইত্যদি জায়গায় ভালবাসা নিয়ে প্রীতি সমাবেশ, রম্য বিতর্ক, প্রেমের গান, প্রেমের কবিতা আবৃত্তি, প্রেমের স্মৃতিচারণ, ব্যা- শো, প্রিন্ট মিডিয়ার বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করে ভালবাসার বিশেষ সংখ্যা। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও এ বিষয়ে বিশেষ নাটক সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ব্যাপকভাবে প্রচার করে। জাতীয় দৈনিকগুলোতেও লাগাতার এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন থাকে। পাশ্চাত্য বিশ্ব খুবই সুকৌশলে আমাদের যুবকদের চরিত্রহীন করার জন্য এ দিবসকে আরো বেশি করে তাদের মত পালন করার জন্য বিভিন্ন প্রকার ফন্দি আঁটে। এরই সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের কতিপয় সাহিত্যিক, কলামিষ্ট, বুদ্ধিজীবীসহ কিছু কিছু পত্রিকা এবং স্যাটেলাই চ্যানেল এই দিবসকে যুব সমাজের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। তারা বিজাতীয় সাংস্কৃতির চর্চার আগ্রহ উস্কে দেয় । 


এক সময় মুর্তি পূজারীরা লুপার কালিয়া নামক দেবতার স্মরণে তরুণীদের নামের লটারী ইস্যু করত। উপস্থিত তরুণী যে তরুণের ভাগে পড়ত সে তাকে ১বৎসরের জন্য ভোগ করত। খ্রীষ্টানরা এসে এ কুপ্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান নিল। কারণ তারা ছিল ঐশী কিতাবধারী। তারা এসে তরুণীর নামের পরিবর্তে তরুণের নামের লটারী ধরে এবং দেবতার পরিবর্তে পাদ্রির নাম ঠিক করে। যে তরুণ যে পাদ্রির ভাগে পড়ত সে তরুণকে উক্ত পাদ্রী এক বছর বিশুদ্ধ বা হেদায়েত করার জন্য কাছে রাখত। অবশেষে ৪৭৬ সালে পোপ জিলিয়াস দাবী করলেন দিবসটির নাম পরিবর্তন করার জন্য। অবশেষে রোমান কারারক্ষী মেয়েদের প্রেমে পড়া প্রখ্যাত ধর্মযাজক ভ্যালেনটাইনের নামে ৪৯৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে দিবসটির গোড়া পত্তন হয়। ভ্যালেনটাইন বন্দি থাকা অবস্থায় জেলাবের মেয়েদের প্রেমে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার সাথে গল্প করতেন। তিনি মৃত্যুর আগে চিরকুট রেখে যান। তাতে ঋৎড়স ুড়ঁৎ াধষবহঃরহব  লেখা ছিল। আর এটাই পরে এই দিনের অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠে। তিনি ১৪ই ফেব্রুয়ারী মারা যান। খ্রীষ্টান সমাজে তাকে প্রেমিকদের যাজক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ভ্যালেনটাই মারা যাওয়ার পর ১৪ই ফেব্রুয়ারী তার মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয় এবং এই দিনকে ভ্যালেনটাইন ডে নাম রাখা হয়। মোটকথা এই দিনটি মূলতঃ পৌত্তলিকদের কুসংস্কার ও পরবর্তীতে খ্রীষ্টানদের ভ্রষ্টতা থেকেই বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। ইসলাম অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাষায় মুসলমানদের সকল প্রকার অপসাংস্কৃতি ও কুসংস্কার অনুসরণ করতে নিষেধ করে। 


রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে তার হাশর হবে তাদের সাথে।’ অর্থাৎ- মুসলমানদের সাথে তার হাশর হবে না। বুখারী শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, অচিরেই এমন সময় আসবে তোমরা তোমাদের পূর্বসুরীদের অনুসরণ করবে প্রতি কদমে কদমে, প্রতি ধাপে ধাপে, এমনকি তারা কোন গুঁই সাপের গর্তে ঢুকে থাকলে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে।’ এ দিবসে যে সব অবৈধ কাজ করা হয়, যে ধরণের অশ্লিলতা উলঙ্গপনার সয়লাভ দেখা যায়  এবং যে ধরণের অনৈতিক কার্যকলাপ দেখা যায় তাকে ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। 


আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের ধারের কাছেও যেয়ো না।’ অন্যত্র বলেন, ‘হে রাসূল! আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযতে রাখে। মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযতে রাখে এবং পর পুরুষের সামনে নিজেদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে নিজ জিহ্বা ও লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করবে আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নেব।’ এই দিবসে তরুণ তরুণীকে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের প্রতি উৎসাহিত করে তোলে। একে কেন্দ্র করে সামাজিক ও নৈতিক অনেক পদস্খলন, ক্ষতি ও ব্যধি জন্ম নেয়। অল্প বয়সে অপরিনামদর্শী কাজ করার কারণে পরবর্তিতে অনেক কলহ-বিবাদ সৃষ্টি হয় এবং ভবিষ্যতে জীবন নষ্ট করে ফেলে। নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনার সূত্রপাত হয় । এ সময়ে গড়ে উঠা সম্পর্ক পরবর্তীতে স্থায়ী না হলে সে মেয়েকে অপহরণ, মেয়ের চরিত্র হরণ ও মেয়ের উপর এসিড নিক্ষেপ সহ নানা ধরণের অপরাধ ঘটিত হয় । এমনকি এর পরিণতিতে আত্মহত্যার মত জঘণ্য গোনাহের কাজ করার ঘটনাও আমারা মাঝে মাঝেই শুনতে পাই। ইসলাম বিবাহের পূর্বে এ ধরণের অবৈধ সম্পর্ককে সম্পূর্ণ হারাম করেছে। 
এক সাহাবী রা. এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে যিনার অনুমতি দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বুঝিয়ে বললেন, তুমি কি চাও যে, কেউ তোমার মা, বোন ও খালার সাথে যিনা করুক? সাহাবী বললেন, আমি তা চাই না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তদ্রƒপ তুমি যার সাথে যিনা করবে, সেওতো কারো মা, বোন বা খালা হবে। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসাল্লাম তার বুকে হাত রেখে তার জন্য দোআ করলেন। এতে তার অন্তর পরি¯ষ্কার হয়ে গেল এবং যিনার দৃঢ়তা দূর হয়ে গেল। এই দিবসের চর্চা যুবক-যুবতীদের হায়া-লজ্জা নষ্ট করে দেয়। অথচ রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। অনুরূপ হাদীসে এসেছে তোমার যদি লজ্জা না থাকে তাহলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। সমাজের মধ্যে লজ্জা না থাকলে তা আর মানুষের সমাজ থাকে না। সে সমাজ পশুর সমাজের চাইতেও নিকৃষ্ট হয়ে যায়  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন, ‘আমার সকল উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্ত। 

তবে যারা প্রকাশ্যে গুনাহ করে বেড়ায় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।’ (নাউযুবিল্লাহ) অনেক সময় অনেক ভদ্র ও ভাল ছেলেরাও বন্ধু-বান্ধব এবং সামাজিক প্রভাবের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে এদিবসে দেখা হলে প্রশ্ন করে তুমি কাকে গোলাপ ফুল দিয়েছ ? তখন যদি বলে আমি তো কাউকে গোলাপ ফুল দেই নি। তখন তাকে বলা হয়, তোমার কোন মেয়ে বান্ধবী নেই! সে যদি বলে, না। তখন বলা হয়, এটা কেমন কথা? তোমার ফুল দেবার মত কেউ নাই! এ সকল কথা তার মনে এক ধরণের হিনমন্যতা সৃষ্টি করে। সেও এ ধরণের সম্পর্ক গড়ে তুলতে উৎসাহি হয়। এর পরিণতিতে পিতা-মাতা ও পরিবারের অবাধ্য হয়ে যায় এবং গোটা পরিবারে মুসিবতের কারণ হয়ে দাড়ায়। এ দিবস উদ্যাপনের বৈষয়িক কোন উপকারিতা নেই। বরং এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়। এদিনে একটি গোলাপ ফুল ২০০টাকায়ও বিক্রি হয়। আমেরিকায় এদিনে একটি ফুল ২০/৩০ডলারে বিক্রি হয়। এরূপ চরিত্র বিধ্বংসী নৈতিকতা বিনষ্টকারী যুব সমাজের লাজ-লজ্জা হরণকারী এবং বিভিন্ন প্রকারের অন্যায় অপরাধ ও উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টিকারী এ সাংষ্কৃতিকে আমরা মেনে নিতে পরি না। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেউ কোন অন্যায় কাজ দেখল, তারপর শক্তি থাকা সত্বেও বাঁধা দিল না তাহলে তার অন্তরে সর্ষে দানা পরিমাণও ঈমান থাকবে না। অন্য হাদীসে ইরশাদ করেন, ‘কারো সামনে কেউ কোন অন্যায় কাজ করলে সে যদি চুপ থাকে তাহলে সে হচ্ছে বোবা শয়তান।’ বোবা শয়তান বলার কারণ হল সে চুপ থাকার দ্বারা অন্যায় কাজ সংঘটিত হওয়াকে সাহায্য করেছে। এইজন্য আমাদেরও এ দিবসে কিছু করণীয় রয়েছে। যে সকল বিষয় আমাদের ঈমান ও সভ্যতার উপর আঘাত হানে তার বিপক্ষে আমরা কখনো নিশ্চুপ থাকতে পরি না। এজন্য আমাদের প্রথম কাজ হল আমরা এ দিবসে যাবতীয় কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকব। কোন উপহার দেব না, কোন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করব না। আমাদের বন্ধু-বান্ধবদেরকেও বিরত রাখব। স্কুল-কলেজে এ দিবসকে কেন্দ্র করে কোন অনুষ্ঠান যেন না হতে পারে তার জন্য প্রচেষ্টা চালাব। নিজেদের মাঝে এ দিবসের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করব। শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করব। বন্ধু-বান্ধাবদের সাথে পরামর্শ করব। এ দিবসের নানা ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে নিজেদের সন্তান-সন্ততি ও অধিনস্থদেরকে অবহিত করব। যে সকল সংস্থা প্রতিষ্ঠান এ দিবস পালন করে তাদেরকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করব। 


আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, আমাদের সন্তান সন্তুতি ও অধিনস্থদের জন্য আমাদেরকে আল্লাহর দরাবরে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। আমরা যেমন সন্তানদেরকে ইসলামের দিকে পরিচালিত করে সওয়াবের অধিকারী হতে পারি, তেমনি সন্তান-সন্ততিকে কুপথে যাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করলে অথবা তাদের বিষয়ে গাফলতি প্রদর্শন করলে গোনাহের ভাগী হতে হবে। আল্লাহ আমাদের এসকল কু’প্রথা থেকে বিরত থাকার তাওফীক এনায়েত করুণ। আমীন। 



সালামের মহত্ব

Wednesday, October 16, 2013



         সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি আমাদেরকে নিজ কুদরত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আমরা যেন তার নির্দেশ মোতাবেক জিন্দেগী যাপন  করে সুরক্ষিত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারি। আমাদের সকলেরই একই আশা, আমরা যেন মৃত্যুর পরই সেই কাক্সিক্ষত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারি। আর সেই কাক্সিক্ষত বেহেস্ত লাভ করতে হলে আমাদের পূর্ণ ঈমানদার হতে হবে। কেননা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেছেন যে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা বেহেস্তে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। আর আমি তোমদের মাঝে এমন একটি বিষয় বলে দিচ্ছি সে অনুযায়ী কাজ করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। আর তা হচ্ছে, “তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রচলন কর। পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম দাও।” 

    তাই আমাদের পূর্ণ ঈমানদার হতে হলে নামায, রোযাা, হজ্ব ও যাকাতের সাথে সাথে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, কালো-সুন্দর, নির্বিচারে সকল মানুষকে ভালবাসা উচিত। হিংসা-বিদ্বেষ ত্যাগ করে সকলের সাথে সুমধুর সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার যে সকল উপায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলে দিয়েছেন, সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে  বেশি কার্যকর এবং পরীক্ষিত হল সালামের ব্যাপক প্রচলন করা। তাই আমাদের করণীয় হল, কারো সাথে দেখা হলেই আস্সালামু আলাইকুম বলে তাকে সম্ভাষণ জানানো এবং তার কল্যাণ কামনা করা।
    
    সালাম এমন একটি মহৎ শক্তি যা দিয়ে বিনা রক্তপাতেই শত্রুকে আপন করা যায়। শত্রুতা ভুলিয়ে বন্ধুত্বের মায়াজালে আটকে ফেলা যায়। পরীক্ষা মূলক সালামের আমলটি করে দেখি। যদি আমাদের সহপাঠি, প্রতিবেশী বা খেলার সাথীদের মধ্যে কেউ কারো সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে, শত্রুতা মূলক আচরণ করে, তাহলে সেও যদি তার সাথে শত্রুতা পোষণ কর তাহলে উভয়ের মাঝে শত্রুতা কখনো শেষ হবে না। বরং বেড়েই চলবে দিন দিন। তাছাড়া কোন মানুষকে শত্রু মনে করে অবিরাম তার সাথে শত্রুতা পোষণ করা মানবিক নয়, বরং এটা পাশবিক আচরণ। বনের হিংস্র পশুদের মধ্যে এ স্বভাব থাকে। আমাদের কারো মাঝে এ দোষ থাকা আদৌ উচিৎ নয়। তাই আমরা নিজেদেরকে সংযত করি, ধৈর্য্য ধারণ করি, শত্রুর সাথে দেখা হলেই তাকে সুন্দর ভাবে হাসি মুখে আসসালামু আলাইকুম বলি। হয়তো সে প্রথম কিছু দিন সালামের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে চলবে, তবুও আমরা হতাশ হব না। বরং তাকে সালাম দিতে থাকব। কেননা প্রতিটি সালামের বিনিময়ে আল্লাহর দরবারে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি হতে থাকবে। আর শত্রুর মনেও কিছুটা পরিবর্তন আসতে থাকবে। এক সময় দেখা যাবে শত্রুই আগে সালাম দিয়ে ফেলবে। এভাবে সালাম আদান প্রদান করার মাধ্যমে শত্রুতার পরিবর্তে নিবিড় ভালবাসা গড়ে উঠবে। আর এভাবে আমরা পরস্পরকে ভালবেসে পূর্ণ ঈমানদার হয়ে প্রিয় রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অমূল্য বাণী অনুযায়ী আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্থান বেহেস্ত লাভ করতে পারব। ইনশাআল্লাহ।

জ্যোতিষ বিদ্যা সম্পর্কে ইসলামের হুকুম

Tuesday, September 17, 2013



                   মানুষের ভবিষ্যত জানার জন্য জ্যোতিষ বিদ্যা শুধু হারামই নয় বরং শিরক ও কুফুরের শামিল। জ্যোতিষীর নিকট যাওয়া এবং তার ভবিষ্যত বাণী শোনা, জ্যোতিষ বিদ্যার জন্য বই ক্রয় করা বা জ্যোতিষীর কাছে অবস্থা বলে হাত দেখিয়ে অথবা অন্য কোন মাধ্যমে ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাওয়া সবই ঈমান বিধ্বংসী মারাত্মক কুফুরী প্রথা। এমনিভাবে গণক জ্যোতিষীর বক্তব্যের প্রতি বিশ্বাসী না হয়ে শুধু তার নিকেটে যাওয়া এবং কিছু জানতে চাওয়া সম্পর্কে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে গণকের কাছে যায় এবং কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে তার চল্লিশ দিন ও রাতের নামায কবুল হয় না। (মুসলমি শরীফ) 
                অন্য হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি গণকের নিকট গিয়ে কোন বিষয় জানতে চায় চল্লিশ (দিন) রাত পর্যন্ত সে তওবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। আর যদি সে গণকের কথা বিশ্বাস করে তবে সে কুফুরী করল। কোন কোন বর্ণনায় আছে চল্লিশ-দিন রাত পর্যন্ত তার নামায ও অন্যান্য ইবাদত কবুল হয় না। (তবরানী যাওয়াজির ২:১৭৭)

                    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,
                          العيافة والطيرة والطرق من الجبت 
অর্থাৎঃ জ্যোতিষীদের কর্ম কা- শুভাশুভের লক্ষণ নির্ণয় বা রাশিফল সবই কুফুরী প্রথার অন্তর্ভূক্ত (আবু দাউদ শরীফ ২:৫৪৫, নাসায়ী, ইবনে হিব্বান ২:১৭৭) 


           হস্তরেখাবিদের নিকট ভালমন্দ জানার উদ্দেশ্যে যাওয়া সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা জাল্লা শানুহু কুরআন শরীফে বলেন, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চই কান চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা বনী ইসরাইল :৩৬) 

             অশুভ ফাল (গণনার) ভিত্তিতে সফর থেকে বিরতি না থাকার বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لن ينال الدرجات العلا من تكهن او استقسم او رجع من سفر تطيرا  অর্থাৎ- ঐ ব্যক্তি কখনো উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে না যে গণক সাজে অথবা তীর নিক্ষেপের  মাধ্যমে গোস্ত বণ্টন করে অথবা পাখি বাম দিক উড়ে গেলে (অশুভ লক্ষণ মনে করে) সফর থেকে বিরত থাকে। আর ডান দিকে উড়ে গেলে (শুভ লক্ষণ মনে করে) সফরে যায়। (বিশুদ্ধ সূত্রে তাবরানী বর্ণনা করেন, বায়হাকী, যাওয়াজির ১ম খন্ড ২৪৮ পৃঃ )

             সতর্কবাণীঃ  উক্ত গুনাহ তখনই কবীরা গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে যখন জাহেলী যুগের ন্যায় এ ফলাফলের প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল হবে যে, পাখি অমুক দিকে উড়ে গেলে সফর ফলপ্রসূ হবে অন্যথায় নয়। উক্ত কাজের ফলাফলের প্রতি নিশ্চত বিশ্বাস স্থাপন করা শিরকের পর্যায়ের কবিরা গুনাহ। (যাওয়াজির ১:২৪৮) 

      যদি কেউ গণক-ঠাকুর অথবা জ্যোতিষের নিকটে যায় তার থেকে আল্লাহ এবং অন্যরাও হয়তো অদৃশ্য ও ভবিষ্যত সম্পর্ক জানে বলে বিশ্বাস করা প্রকাশ পায়। এটাও এক ধরণের র্শিক। কারণ আল্লাহ তাআলা পরিষ্কারভাবে বলেছেন, গাইবের কুঞ্জি একমাত্র আল্লাহর কাছে। তিনি ছাড়া তা কেউ জানে না। (সূরা আনআম :৫৯) 

        তাই কেউ জ্যোতিষীর রাশিচক্র বা প্রদত্ত ভবিষ্যতবাণী বিশ্বাস করলে, সে সরাসরি কুফুরী করে ঈমান হারাবে। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে গেল এবং সে যা বলল তা বিশ্বাস করল, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে সে তা অবিশ্বাস করল। (আবু দাউদ ২:৫৪৫ ও আহমদ) 

             উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝায় গণক ও জ্যোতিষীর একই হুকুম অর্থাৎ উভয়ের কাছে যাওয়া এবং তাদের  কথা বিশ্বাস করা কুফুরী কাজ। যার দ্বারা ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। রাশি বলতে ইসলামের কিছুই নেই। ফালের কোন স্থান ইসলামে নেই। সুতরাং সব ধরণের গণক ও জ্যোতিষী হতে দূরে থাকা উচিত। কোন অবস্থাতেই তাদের কাছে যাওয়া ঠিক না। অনুরূপ তাদের রিং, আংটি, হার ইত্যাদি ব্যবহার করা, তা ধরা, তাদের বই-পুস্তক, খবরের কাগেজে রাশিচক্রের কলাম পড়া বা বিশ্বাস করা না জায়েয ও গোনাহ।  এ ছাড়া গ্রহের তা’ছীর বিশ্বাস করা, হিন্দুদের দেব-দেবতা বা মুর্তির কোন ক্ষমতা আছে বিশ্বাস করা ঈমান ধ্বংসী। এ থেকে সবার দূরে থাকা জরুরী। 

 

NameSilo Coupon Code "discount1$foryou"

like

like
like